সিবিএন ডেস্ক:
করোনা ভাইরাসের কারণে খাদ্যের দাম বাড়ায় আফগানিস্তানে ৭০ লাখেরও বেশি শিশু খাদ্যাভাবের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শুক্রবার (০১ মে) বিবিসি এ তথ্য জানায়।

‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এর একজন মুখপাত্র জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পদক্ষেপ না নিলে আফগানিস্তান ক্ষুধা, রোগ ও মৃত্যুর কবলে পড়বে। অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি জানায়, দেশটির জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ খাদ্যাভাবে পড়তে যাচ্ছে, যাদের মধ্যে ৭৩ লাখ শিশু রয়েছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় আফগানিস্তানের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানায়, বিশ্বে ‘ক্ষুধা মহামারি’ হতে যাচ্ছে।

২০০১ সালে তালেবানদের বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযান শুরুর পর দুই দশক ধরে যুদ্ধের মধ্যে ছিল আফগানিস্তান। এতে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর মার্চ মাসের শেষদিকে রাজধানী কাবুল লকডাউন করে আফগান সরকার। পরে অন্য প্রদেশগুলোও লকডাউন করা হয়। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া ও অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

সেভ দ্য চিলড্রেনের ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যখন শিশুদের বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার, এমন সময়ই খাদ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। মহামারি শুরুর আগেই আফগানিস্তানের ৫০ লাখেরও বেশি শিশুর বিভিন্ন ধরনের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। সম্প্রতি পরিচালিত জাতিসংঘের এক জরিপে দেখা যায়, দেশটির পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ২০ লাখ শিশু প্রবল খাদ্যাভাবে রয়েছে।

যোগানের তুলনায় চাহিদা বাড়ায় গত মাসে দেশটির প্রধান শহরগুলোর বাজারে গমের আটা এবং রান্নার তেলের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। চাল, চিনি ও ডালের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১২ শতাংশ।

লকডাউনের কারণে কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় খাদ্যের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনই কমছে দিনমজুরদের মজুরি। দেশটির কর্মীদের অধিকাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। তাদের জন্য কোনো আর্থিক সুরক্ষার ব্যবস্থাও নেই।

আফগানিস্তানে প্রতি হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছে ০ দশমিক ৩ জন। আশঙ্কা রয়েছে, অসুস্থ ও অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাবে না।

দেশটিতে সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক টিমোথি বিশপ বলেন, ‘আফগানিস্তানে ভাইরাসের ঝুঁকির চেয়ে বড় মহামারি হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষুধা। কেননা লকডাউনের কারণে খাদ্যের যোগান ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ক্ষুধা, রোগ ও মৃত্যুর ঝড় বয়ে যাবে সেখানে। এমনকি ক্ষুধার কারণে শিশুদের মৃত্যুও হতে পারে। তাই ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা দরকার। একইসঙ্গে এ সহায়তার সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে আফগান শিশুরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। তারা সব সময় দ্বন্দ্ব-সংঘাতই দেখে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারিকে তাদের ভবিষ্যৎ আরও নষ্ট করতে দিতে পারি না আমরা।’

এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১৭১ এবং মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। দেশটিতে পরীক্ষা ব্যবস্থা সীমিত হওয়ায় রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে গেলে দেশটির ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সেটি সামালানোর সক্ষমতা নেই।