শাহেদ মিজান, সিবিএন:

কক্সবাজারের দিন দিন মহামারি করোনা ভাইরাসের রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহেশখালী, কক্সবাজার এবং টেকনাফ ছাপিয়ে এবার ২৭ এপ্রিল একদিনেই জেলার আরো তিন উপজেলায় নতুন করে করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে উখিয়ায় দুইজন, রামুতে একজন এবং চকরিয়ায় একজন করোনা সনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে জেলার আট উপজেলার মধ্যে ছয় উপজেলায় ঢুকে পড়েছে করোনা। আর মাত্র অবশিষ্ট রয়েছে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া।

অন্যদিকে এতোদিন বহিঃগমনকারীদের মধ্যে এই ভাইরাস সনাক্ত হলেও এবার স্থানীয়রাও সংক্রমিত হচ্ছে। ২৬ এপ্রিল বহিঃগমনকারী ছাড়া স্থানাীয়ভাবে প্রথম করোনা সনাক্ত হয়েছেন টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নাঈমা সিফাত। প্রতি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়া এবং স্থানীয়রা আক্রান্ত- এই দুটি দিকই এখন কক্সবাজার জেলার করোনা পরিস্থিতিকে আশঙ্কার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

তথ্য মতে, গত ২ এপ্রিল থেকে ২৬ দিনে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে মোট ৯৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০ জন করোনা ভাইরাস রোগী সনাক্ত করা হয়। বাকী ৯২৩ জনের রিপোর্ট ‘নেগটিভ’ এসেছে। তার মধ্যে মহেশখালীতে নয়জন, টেকনাফে চারজন, সদর শহরে দুইজন এবং চকরিয়াতে দুইজন, রামুতে একজন এবং উখিয়াতে দুইজন। প্রথম রোগী সৌদি ফেরত চকরিয়ার খুটাখালীর মুসলিমা খাতুন (৭০)।

অন্যদিকে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা করোনামুক্ত থাকলেও ঝুঁকিমুক্ত নয়। কেননা দুই উপজেলাই সীমান্তবর্তী। তাও চট্টগ্রামের সাথে। স্থল  ও নৌপথে পেকুয়া এবং নৌপথে কুতুবদিয়া গমণের অনেক ‘চোরাই পথ’ রয়েছে। কথিত আছে, ওইসব পথ দিয়ে অনেক বহিরাগত কুতুবদিয়া ও পেকুয়া প্রবেশ করেছে। এরকম অনেককে ধরে ধরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারাইন্টাইনে পাঠিয়েছে প্রশাসন। কুতুবদিয়ায় এই সংখ্যা বেশি।

কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিদারুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, নৌপথ হওয়ায় বোটে করে করোনা আক্রান্ত সাতকানিয়াসহ বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ সংখ্যক মানুষ কুতুবদিয়া ঢুকে পড়ে। তবে কাউকে ছাড়া হয়নি। অধিকাংশকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারাইন্টাইনে এবং বাকিদের হোম কোয়ারাইন্টাইনে রাখা হয়েছে।

দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় লোকজনও আক্রান্ত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ ভাবছে। তারা সরকারের পাশাপাশি জনসাধারণকে আরো সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি যেমন আশঙ্কাজনক; তারচেয়ে বেশি আশঙ্কাজনক প্রতি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়া। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। এই মাত্রা রোধ করতে করণীয় শুধু প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের নয়; জনসাধারণের করণীয় বেশি। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, বাইরে কেউ প্রবেশ করবেন না এবং জনসাধারণ ঘরে থাকবেন। কিন্তু তা যথাযথভাবে মানা হয়নি। সে কারণেই রোগের মাত্রা বাড়ছে। বিধি-নিষেধকে যদি তোয়াক্কা না করি তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে।’

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজারকে করোনা মুক্ত রাখতে প্রশাসন শুরু থেকেই সর্বোচ্চ চেষ্টায়রত রয়েছে। কিন্তু জনসাধারণের সহযোগিতাটা একটি বড় বিষয়। আমরা চাইলে জনসাধারণ সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি। তারা সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের বিধিগুলো যথাযথ মানেনি। নিষেধ না ঢাকা-নারায়ণঞ্জ থেকে চুরি করে করোনা ভাইরাস বহন করে বাড়ি এসেছেন। তারাই আমাদের জেলাটিকে আশঙ্কার মুখে ঠেলে দিলেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আর কোনো রকম অবহেলা বা খামখেয়ালী সহ্য করা হবে না। জনসাধারণকে শতভাগ বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে। তা করতে পারলে করোনা ভয়াবহতা জয় করতে পারবো।’