নুরেন শামস চৌধুরী

এই বছরের রমজান টা সবার জন্যই অন্যরকম হবে। যাদের প্লেটে ভাত আছে তাদের জন্য এবছর কিছু রীতির কমতি হবে আর যাদের প্লেটে ভাত নাই তাদের যথারীতি ভাতেরই কমতি হবে। এই বছরের রমজানটা সবার জন্যই সংগ্রামের মতো হবে। তাই এই বছরে কেবল শুভেচ্ছা না। সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানাই সবাইকে।

কোভিড ১৯ এর মাঝে রমজানটাও অন্যরকম। প্রত্যেক রমজানেই নিজের সংযম রক্ষার জন্য আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হয়। রমজানের মাসে মুখ খারাপ করা যায় না। সহজ ভাষায় বলতে গেলে গালি দেওয়া যায় না।

চাঁটাগাইয়া হিসেবে গালি দিতে না পারাটা আমাদের অনেকের জন্যই অন্যতম কঠিন সংযমে পরিণত হয়। যদি চাঁটগাইয়াদের স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি গালি দেওয়াটা কে যুক্তিযুক্ত করতে চাই, তাহলে বলতে হবে, আঁর গাইল আই দিয়ুম, যুক্তিযুক্ত গরিবার কি দরহার।

আর এই কোভিড ১৯ এর সময়ে কিছু সংবাদ সেই সংযমটাকে আরেকটু বেশি চ্যালেঞ্জিং করবে বলে মনে হয়।

কক্সবাজারে একজনের গতকাল করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। কোভিড ১৯ টেস্টে পজেটিভ পাওয়ার আগে তার সারাদিনের কার্যক্রম কক্সবাজারের নিউজ পোর্টাল ইমরুল কায়েসের মাধ্যমে কক্সবাজারের সবার ফেইসবুক ওয়ালে ঘুরছে।

তার কার্যক্রমগুলো এরকমঃ

সকাল ৯টায় বাসার পাশের দোকানে চা -নাস্তা করেছে।

সকাল ১০টায় তাকে ঘরে থাকতে বলায় ১ জনকে পিটিয়েছে।

সকাল ১১টায় ইয়াবা বিক্রেতার বাসায় গিয়ে ৪ জন ইয়াবা সেবন করেছে।

দুপুরে ১.৩০ টায় ৩ বন্ধু গাজা সেবন করে আর দুপুর ২টায় তার কোভিড ১৯ পরীক্ষায় পজেটিভ আসে।

এই ধরনের সংবাদ দেখার পর নিজেকে সংযত রাখতে পারলে আপনার সংযম শক্তির বাহবা দিতে হয়। আর যদি আপনি চাঁটাগাইয়া হোন। তাহলে ইফতার করা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

খুব দ্রুতই “আমার হলে হবে, আমি ভয় পাই না, তোমার কি?” শ্রেণির মানুষের উদাহরণ খোঁজে পেলাম। যার ফলাফল এখন সবার ভোগ করতে হবে।

কেবল গালাগালি না, অনেক ক্ষেত্রেই এই বছরের রমজানটা অন্যরকম হবে। চ্যালেঞ্জিং হবে। তারাবির নামাজ মসজিদে আদায়ে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। ১২ জনের বেশি এক মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে না। এই অংশগ্রহণকারিরাও মসজিদের ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন বা খাদেম। অর্থাৎ এবার কেউ তারাবির নামাজের নাম দিয়ে আড্ডা জমাতে পারবে না।

রাস্তায় ইফতারের কোনো স্টল বসবে না। মাছিওয়ালা জিলাপিও খাওয়া যাবে না। করোনার প্রভাবে সৃষ্ট পুলিশের কঠোরতার মাঝে হয়তো এইবার মজুতদার দের ব্যবসাও মন্দা দেখবে।

মার্কেটে পাশের বাসার ভাবিদের পাশের বাসার ছেলেটার অপ্রয়োজনীয় ট্যালেন্ট নিয়ে প্রয়োজনীয় সমালোচনা হবে না। পাখি ড্রেস হইতো এইবার অনলাইনে অর্ডার করতে হবে। ইভটিজারদের রমজানও এইবার ভালো কাটবে না।

বাইকারদের থেকে এবার পুলিশের “ঈদের খরচ” নেওয়া হবে না। হাজার টাকার সেহেরি পার্টিটা মিস করার মতই।

“রোজা রাখো নি কেন” এর মতো বিব্রত প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এবার নারীদের রোজা না রেখেও উপোস থাকতে হবে না।

হ্যাঁ, এইবার আপনার আমার রমজান অন্যরকম যাবে। অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। একইরকম রমজান যাবে কেবল গরীবদের। তাদের গতবছরের রমজান আর এই বছরের রমজানে কোনো পার্থক্য নাই। তাদের পাতে গতবছরও ভাত ছিল না। এইবছরও থাকবে না। সুতরাং করোনা তাদের রমজানে “নতুন” কোনো চ্যালেঞ্জ যুক্ত করবে না।

করোনাময় চ্যালেঞ্জিং একটি রমজানের জন্য সবাইকে জানাই রমজানের সংগ্রামী শুভেচ্ছা। বাংলাদেশে ঘুষখোর রাজনীতিবিদ জেল থেকে বের হলেও সংগ্রামী শুভেচ্ছা দেওয়া হয়। অবশ্যই এটা ওই ধরনের সংগ্রামী শুভেচ্ছা না।

বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঈদের সংগ্রামী শুভেচ্ছা যেন দিতে না হয় এই আশা করি।

– নুরেন শামস চৌধুরী, আইন শিক্ষার্থী।