ধর্ম ডেস্ক :
রমজান। মুমিন মুসলমানের ক্ষমার মাস। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে বছর ঘুরে ক্ষমার হাতছানি নিয়ে এসেছে রমজান। হে আল্লাহ! মহামারি করোনার এ সময়ে রহমতের রমজান পেয়ে আমরা ধন্য। রমজানের রহমতের উসিলায় এ মহামারি থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্তি দিন। কুরআনের নূরে আলোকিত করে দিন আমাদের দেহ মন ও ঈমান।

অপরাধ অবাধ্যতা আর অজ্ঞতার কারণেই মানুষ এ মহামারিতে আক্রান্ত। তা থেকে মুক্তি পেতে দরকার আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। সিয়াম সাধনায় আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। এ সিয়াম সাধনায় বান্দা লাভ করে ক্ষমা ও রহমত। জুলুম-অত্যাচার, অশান্তি-অনাচার, অপরাধ-অবাধ্যতার গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভের মাধ্যমেই মানুষ রোগ-ব্যধি ও মহামারি করোনা থেকে মুক্তি পাবে।

মানুষের এসব অপরাধ থেকে মুক্তির জন্য, আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য, সিয়াম সাধনার প্রকৃত তাৎপর্য হাসিলের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। নিজেদের পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী করতে এ তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ের বিকল্প নেই। সে কারণেই আল্লাহ তাআলা রোজাদারকে ঈমাদনার বলে ডাক দিয়েছেন। আর বলেছেন তাকওয়া অর্জনের কথা। আল্লাহ বলেন-

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য সিয়াম সাধনাকে আবশ্যক করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের আগের ঈমানদারদের জন্য সিয়াম সাধনাকে আবশ্যক করে দেয়া হয়েছিল। যাতে তোমরা পরিশুদ্ধ অন্তর লাভে তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

রমজান মাসের ২৯/৩০ দিনই মুমিন মুসলমানের জন্য রোজা পালন আবশ্যক। ঈমানদারদের মধ্যে যারা রোজা রাখার মাধ্যমে অন্তরের পরিশুদ্ধতা অর্জন করতে পারবে, গোনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবে, আল্লাহ তাআলা তাদের সুসংবাদসহ এভাবে ডাকবেন- হে প্রশান্ত আত্মা! তোমার রব-এর দিকে ফিরে এসো সন্তুষ্ট হয়ে এবং (তোমার রব-এর) সন্তুষ্টির পাত্র হয়ে। অতপর আমার (নেক) বান্দাহদের মধ্যে শামিল হও। আর আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সুরা ফাজর : আয়াত ২৭-৩০)

সুতরাং রমজান হলো মুমিন মুসলমানকে পরিশুদ্ধ করে জান্নাত নিয়ে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক ঈমানদারকেই রমজানে তাকওয়ার মাধ্যমে প্রশান্ত আত্মায় রূপান্তরিত করে তার সন্তুষ্টির মাধ্যমেই দান করবেন চিরস্থায়ী জান্নাত।

হে আল্লাহ! এ রমজানে মুমিন বান্দাকে তাকওয়া অর্জনের সুযোগ দাও। তাকওয়ার মাধ্যমে তোমার সন্তুষ্টি লাভের সুযাগ দাও। তোমার পক্ষ থেকে প্রশান্ত আত্মার অধিকারীর ডাক শোনার তাওফিক দান। চিরস্থায়ী জান্নাত লাভের তাওফি দাও।

রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি নিজের অন্তরে তাকওয়ার বীজ বুনতে পারলে দুনিয়াতে যেমন রোগ-ব্যধি, মহামারি থেকে মুক্ত থাকবে, আবার তার পরকালও হবে নিরাপদ ও সফল।

আল্লাহ তাআলা প্রতি বছরই বান্দাকে এ বলে ডাক দিয়ে যান, হে মুমিন তোমার জন্য তাকওয়া অর্জনে রোজা ফরজ করা হয়েছে। বান্দা যদি তাকওয়ার মাধ্যমে তার অন্তর পরিশুদ্ধ করে এবং গোনাহ থেকে মুক্ত হতে পারে। তবেই সে সফল। কুরআনের সে ঘোষণাও শুধু তার জন্য। যা সে আল্লাহর কাছে তার শেখানো ভাষায় প্রার্থনা করে-

رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى الْءَاخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখেরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১)

মুমিনের এ প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন। মুমিন বান্দা দুনিয়ার যাবতীয় অশান্তি, অনাচার, অত্যাচার, রোগ-ব্যধি ও মহামারি থেকে থাকে নিরাপদ এবং পরকালের কল্যাণ তথা প্রশান্তি, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুনিশ্চিত ঘোষণাও লাভ করে। মুক্তি পায় জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন ও আজাব থেকে।

সুতরাং রমজান হোক তাকওয়া অর্জনের মাস। বছর জুড়ে তাকওয়ার চর্চা বাস্তবায়নের মাস। দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ লাভের মাস। পরকালের কল্যাণ ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাস।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ মাসে তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-মহামারি থেকে মুক্তি ও কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। পরকালে হে প্রশান্ত আত্মার অধিকারি! সম্বোধনে ডাক পাওয়ার তাওফিক দান করুন।

জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। কুরআনের শেখানো ভাষায় এ দোয়া-
رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِى الْءَاخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।