হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, পুলিশ তাদের মধ্যে অন্যতম। এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখাই একমাত্র উপায়। এজন্য পুলশের তৎপরতা ব্যাপক। তবু যেন পেরে উঠছে না পুলিশ।

পুলিশের গাড়ি দেখে সড়ক থেকে দৌঁড়ে পালানো, আবার গাড়ি চলে গেলে সড়কে উঠেই দাঁত বের করে খিলখিলিয়ে হাসা এখন নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তারপরও চেষ্টা থেমে নেই পুলিশের। সর্বোচ্চটুকু উজার করে সড়কে সড়কে টহল, নজরদারী বৃদ্ধি, লোক সমাগম প্রতিহত করা আর সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নেও কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।

গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির আইসি, পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান ভিন্ন কিছু বার্তার মাধ্যমে বাস্তবতা তুলে ধরে গ্রামের অলিগলিতে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান এমন কিছু বার্তা দিচ্ছেন, যার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝতে সহজ হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মানুষ।

সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং ঘরে থাকার উদ্দেশ্যে তিনি গ্রামীন জনপদে বলছেন-করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীতে অত্যন্ত মহামারি আকার ধারণ করেছে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে খেয়াল করেছি, আমরা যখনই প্রচারণা এবং পুলিশি তৎপরতা শুরু করি আপনাদের ঘরে ফেরানোর জন্য, তখনই আপনারা পুলিশের গাড়ি দেখে রাস্তা ছেড়ে পালাচ্ছেন, বাজারের অলি-গলিতে পালাচ্ছেন, দোকান বন্ধ করে দোকানের ভেতরে পালাচ্ছেন।

কিন্তু, পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়া মাত্রই সুন্দর করে হাসি দিয়ে বিজয়ের বেশে আবার রাস্তার উপর চলে আসছেন। আপনাদের এ দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে অনেক ভালো কিছু করে ফেলেছেন। কিন্তু জেনে রাখবেন, পুলিশকে ফাঁকি নয়, মূলত আপনি নিজেকে ফাঁকি দিচ্ছেন। আর এর মাধ্যমেই আপনি করোনা নামক এই মহামারি যমদূতের খুব কাছে চলে যাচ্ছেন।

সাধারণ মানুষকে অনুরোধ জানিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আপনার পরিবার, দেশ এবং জাতিকে রক্ষার জন্য ঘরে অবস্থান করুন। এ করোনা যুদ্ধে সরকার যেন বিজয়ী হতে পারে এবং সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা করা যায়, এজন্যই আপনারা ঘরে থাকুন। আপনারা ঘরে থাকলেই এ যুদ্ধে আপনাদের সরাসরি অংশগ্রহণ করা হবে।

জানতে চাইলে গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির আইসি, পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান বলেন- গর্জনিয়া এবং কচ্ছপিয়ার মানুষকে ঘরে রাখতে আমরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারপরও কিছু মানুষের অসচেতনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড আমাদের চিন্তিত করে তুলেছে।

তিনি আরও বলেন, রামুতে এখন পর্যন্ত কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তাই আমাদের এখনও সুযোগ আছে এ উপজেলার সবাইকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার। এজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য : করোনা সংকটের শুরু থেকেই গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে মাইক হাতে জনসাধারণকে সচেতন করা থেকে আরম্ভ করে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা করা, চিকিৎসা না পেয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে হাজির হওয়া মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ঘরে থাকা মানুষের কাছে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পৌঁছে দেওয়া, কোয়ারেন্টিন থেকে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা, বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন, লকডাউন এলাকায় মানুষের যাওয়া-আসা নিয়ন্ত্রণে দিনে ও রাতে অবিরত কাছ করছে রামু থানার নিয়ন্ত্রণাধীন গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান।

করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে মানুষ যখন একে অন্যের বিপদেও কাছে যাচ্ছেন না। তখন গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ায়
পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে মানুষের পাশে থেকে পুলিশ সদস্যরা এ বাহিনীকে এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

প্রসঙ্গত : বিভিন্ন সময়ে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম হলেও সেসব ছাপিয়ে দেশের করোনাভাইরাস সংকটে গণমাধ্যমে শুধু নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে।