শ্যামল রুদ্র, খাগড়াছড়িঃ
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার ফেনী নদীর মধ্যবর্তী শূন্যরেখায় (নোম্যানস-ল্যান্ড) গত ২২ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তার নাম শাহানাজ পারভিন (৩৫)। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার দইখাওয়ারচর গ্রামের হাতেম আলী শেখ ও ওমেলা খাতুনের মেয়ে। ভারসাম্যহীন অবস্থায় প্রায় দুই বছর আগে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন তিনি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস (আইসিআরসি) ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) যৌথ প্রচেষ্ঠায় তাকে স্বজনদের নিকট হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিররই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে জানা গেছে।

বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ২ এপ্রিল সকালে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে বাংলাদেশে পুশ-ইনের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পুশ-ইনের চেষ্টা রুখে দেয় বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরপর থেকে ওই নারী বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত ফেনী নদীর মাঝখানে তথা নোম্যানস-ল্যান্ডের খোলা আকাশের নিচে থাকেন। এই নারী নিজ মুখে তার বাড়ি একবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম থানার দোলবাড়ি এলাকায়, আরেকবার হরিণা এলাকায় বলে জানায়। আবার পরবর্তীতে তিনি তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রইখারচরে বলে দাবি করে। তার বক্তব্যের ভিত্তিতে বিজিবি-বিএসএফ ঠিকানাগুলো শনাক্ত করার জন্য কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে আইসিআরসি ও বিডিআরসিএসের নজরে আসে। বিজিবি-আইসিআরসি ও বিডিআরসিএস যৌথভাবে কাজ করে নারীর নাম পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা শাহানাজ পারভিনের (মানসিক ভারসাম্যহীন নারী) বড় ভাই ওমর আলী, ছোট ভাই সাহেব আলী ও সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিক আলী মণ্ডল, উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলে তাকে শনাক্ত করেন। পরিবার জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে তিনি নিখোঁজ আছেন। নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে নোম্যানস-ল্যান্ড থেকে সরিয়ে বাংলাদেশ অংশে আনা হয় এবং তা ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীকে জানানো হয়।

শাহানাজ পারভিনের বড় ভাই ওমর আলী জানান, দীর্ঘদিন থেকে নিখোঁজ ছিলেন তার বোন। হঠাৎ করে বিজিবি-আইসিআরসি ও রেড ক্রিসেন্টের লোকজন সঙ্গে যোগায়োগ করে ছবি-ভিডিও দেখালে আমরা নিশ্চিত হই। বর্তমান সময়ে করোনার কারণে খাগড়াছড়ি রামগড় গিয়ে বোনকে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। তবে শুনেছি রেড ক্রিসেন্টের লোকজন দ্রুত তম সময়ের মধ্যেই বোনকে বাড়িতে দিয়ে যাবে। তাদের প্রত্যেককে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

৪৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন, রামগড় জোন এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম বলেন, ‘পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা তাকে নোম্যানস-ল্যান্ড থেকে সরিয়ে এনে ভালোভাবে রেখেছি। তবে গত দুই বছর ওই নারী দেশে ছিলেন নাকি ভারতে ছিলেন তা তিনি বলতে পারেননি। তবে বিএসএফ ও ভারতীয় লোকজন তাকে বাংলাদেশি বলেই পুশইনের চেষ্টা করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, এই নারীর প্রথমে করোনা টেষ্ট করা হবে, রেজাল্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশনে রাখা হবে। যদি নেগেটিভ আসে দ্রুততম সময়ে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় কমিটির সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, ‘এটা অত্যান্ত আনন্দের বিষয় যে, গত দুই বছর ধরে নিখোঁজ থাকা একজন নারীকে আমরা আইসিআরসির রেস্টোরিং ফ্যামিলি লিংকস (আরএফএল) এর মাধ্যমে তার পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করার জন্য চেষ্ঠা করছি। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা খাগড়াছড়ি থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অ্যাম্বুলেন্সে করে নারীটিকে তার বাবার বাড়িতে পাঠাব।