মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রস্তুত করা ৫০ বেডের করোনা আইসোলেসন ইউনিটে সুকৌশলে কোন করোনা রোগী ভর্তি করাচ্ছে না অভিযোগ উঠেছে। টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল নিজেই এ অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও একই অভিযোগ উঠিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলায় রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেের একটি নতুন ভবনকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এবং চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরো একটি পৃথক ৫০ শয্যার আইসোলেসন ইউনিট করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য করোনা সংকটের শুরুতেই গত মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রস্তুত করে রাখা হয়। টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল অভিযোগ করেছেন, ১৯ এপ্রিল টেকনাফের বাহারছরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মারিশবনিয়া গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর পুত্র মোঃ হোসাইন (৫৫) এর শরীরে করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়ে। উক্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা আইসোলেসন ইউনিটে ভর্তি করানোর জন্য ডা. টিটু চন্দ্র শীল শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বলে গুরতর অভিযোগ এনেছেন।

এ বিষয়ে টেকনাফের করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী নিয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল গত ১৯ এপ্রিল এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি রামু ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ আইসোলেশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। শত চেষ্টা করেও টেকনাফের বাহারছরার মারিশবনিয়ার সেই করোনা রোগীকে রামু ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ এর জন্য প্রস্তুত আইসোলেশন হাসপাতালে ভর্তি করানো সম্ভব হয় নাই। বিবৃতিতে ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, অধ্যবধি একজন রোগীও ঐ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। ফলে নিরূপায় হয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়েছি। সল্প সংখ্যক ডাক্তার দিয়ে পরিচালিত উক্ত হাসপাতালে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ডাক্তারবৃন্দ রোগীর যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিয়ে সংশয়ে আছেন। সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে তিনি বলেন, “আমি একা যে যুদ্ধে যাত্রা শুরু করেছি, সেই মরণ যুদ্ধে যাতে রোগীসহ আমরা সকলেই জয়ী হতে পারি।”
এই বিবৃতি সম্পর্কে ডা. টিটু চন্দ্র শীল সিবিএন-কে বলেন, টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একই ভবনে ৫ শয্যার একটি আইসোলেসন ইউনিট প্রস্তুত আছে। সেখানে অন্যান্য সাধারণ অসুস্থ রোগীদের সাথে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা করা খুবই আতংকের বিষয়। এছাড়া টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক কিছুর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যা করোনা ভাইরাস জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়।

ডা. টিটু চন্দ্র শীল এর অভিযোগের বিষয়ে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও ৫০ বেডের করোনা আইসোলেসন ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার সিবিএন-কে বলেন, “আমাদের করোনা আইসোলেসন ইউনিট চিকিৎসক, নার্স সহ সব কিছু নিয়ে প্রস্তুত আছি। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন নির্দেশ দিলেই আমরা যে কোন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে আমাদের আইসোলেসন ইউনিটে ভর্তি করাতে বাধ্য।

একই বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সিবিএন-কে বলেন, রামু আইসোলেন ইউনিট মুমূর্ষু করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য। টেকনাফের করোনা রোগী মোঃ হোসাইন খুব বেশী অসুস্থ না হওয়ায় তাকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫ শয্যার আইসোলেশনে ইউনিটে রেখে চিকিৎসা সেবা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নাইক্ষ্যংছড়ির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক কিছুর সীমাবদ্ধতা থাকায় রোগীকে অধিকতর চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার স্বার্থে ঘুমধুমের করোনা রোগী আবু ছিদ্দিককে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেের আইসোলেসন ইউনিটে ভর্তি করানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজারে মোট ৫ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেের নতুন ভবনে প্রস্তুতকৃত ৫০ শয্যার আইসোলেসন ইউনিটে এখনো পর্যন্ত কোন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়নি।