মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

উখিয়াতে ২শ’ বেডের করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল আগামী ৮ মে চালু হচ্ছে। গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া আইসোলেশন হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে প্রায় ৭০% ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) এর অর্থায়নে এই বৃহৎ আকারের আধুনিক করোনা আইসোলেশন হাসপাতালটি নির্মিত হচ্ছে। হাসপাতাল নির্মাণ কাজের সক্রিয়ভাবে জড়িত একটি সুত্র সিবিএন-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

উখিয়া কলেজের একটু দক্ষিণ পার্শ্বে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের সামান্য ভিতরে এই আইসোলেশন হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় দিবারাত্রি পুরোদমে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছেন।

নির্মাণাধীন আইসোলেশন হাসপাতালে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরনার্থীরাও চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালটির সকল চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ, স্বাস্থ্য কর্মী, এ্যাম্বুলেন্স সহ মাসিক সকল ব্যয়ভার ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষ বহন করবেন। এ হাসপাতালে আপাতত শুধুমাত্র করোনা ভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

সুত্র মতে, আগামী মে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে আগামী ৮ মে হাসপাতালটি চালু করার টার্গেট রাখা হয়েছে। তবে আরো দ্রুততম সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে সুত্রটি জানিয়েছেন। হাসপাতালটিতে যেসব সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আনতে হবে, সেগুলো ‘জাতিসংঘ ও করোনা অগ্রাধিকার’ বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এসব মেডিকেল সামগ্রী আগামী ২৮/২৯ এপ্রিলের মধ্যে উখিয়ায় নির্মাণাধীন আইসোলেসন হাসপাতালে পৌঁছে যাবে বলে সুত্রটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় ইউএনএইচসিআর এ করোনা আইসোলেশন হাসপাতালটি নির্মাণ করছে বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, এই আইসোলেশন হাসপাতালটি পুরোপুরি নির্মিত হলে এটি হবে কক্সবাজারের প্রথম পরিপূর্ণ একটি করোনা আইসোলেন (COVID-19) হাসপাতাল।

এদিকে, উখিয়াতে জরুরি প্রয়োজনে ইউএনএইসসিআর এর অর্থায়নে নির্মাণাধীন এই ২শ’ বেডের করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা থাকবে কিনা, এ বিষয়ে হাসপাতালটির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত একজন দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, এটি একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা সরঞ্জাম। প্রাথমিকভাবে কিছু বেডে ভেন্টিলেটর চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে। পরে পর্যায়ক্রমে আর কিছু বেডে ভেন্টিলেটর স্থাপন করার চিন্তা রেখে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজের ড্রয়িং, ডিজাইন, প্ল্যান করা হয়েছে। যেসব করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হবে, সেসব রোগীকে ভেন্টিলেটর থাকা বেডে রেখেই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। আর যেসব রোগীদের ভেন্টিলেটরের সহায়তা প্রয়োজন হবেনা, সেসব রোগীদের নরমাল বেডে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা সিবিএন-কে আরো বলেন, এখানে সঙ্গত কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি সহ বিদেশী উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়মিত আনাগোনা বেশি থাকবে, তাই নির্মাণাধীন এই ২শ’ শয্যার আইসোলেন হাসপাতালটি বিশ্বমানের পরিপূর্ণ একটি আইসোলেশন হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তোলার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। আর স্থানীয় জনসাধারণ ও রোহিঙ্গা শরনার্থী উভয় জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে হাসপাতালটির স্থান রোহিঙ্গা শরনার্থী এরিয়া থেকে আরো উত্তরে এগিয়ে এনে মধ্যবর্তী স্থানে নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইউএনএইসসিআর এর অর্থায়নে নির্মাণাধীন এই ২শ’ বেডের করোনা আইসোলেশন হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ এনজিও ব্রাক পরিচালনা করছে। ব্রাক এর এধরণের হাসপাতাল নির্মাণে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় এবং এবিষয়ে তাদের টেকনিক্যাল পারসন থাকায় তাদেরকে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের তত্বাবধানে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে বলে সুত্রটি জানিয়েছেন।

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় রোগীর শ্বাসনালীতে এক ধরনের জমাট বেঁধে যাওয়ায় তখন রোগীর ভেন্টিলেটর সাপোর্ট খুব বেশী দরকার হয়। মেডিকেল ভেন্টিলেটর হচ্ছে-কোন গুরতর অসুস্থ রোগী নিজে নিজে অক্সিজেন নিতে না পারলে, সে রোগীকে কৃত্রিম উপায়ে ফুসফুসে যে প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন পৌঁছানো হয়, তার প্রক্রিয়ার মেশিনটির নাম মেডিকেল ভাষায় ‘ভেন্টিলেটর’। মুমূর্ষু রোগীর জন্য এ ভেন্টিলেটর প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আইসিইউ, এইসডিইউ, সিসিইউ সহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ছাড়া হাসপাতালের অন্য কোন ইউনিটে এ মেডিকেল ভেন্টিলেটর এর ব্যবস্থা থাকেনা। এটা একটা খুবই ব্যয়বহুল চিকিৎসা সরঞ্জাম।