নুরেন শামস চৌধুরী

আমাদের দেশের অনেক মানুষের প্রিয় কাজ নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে অন্ধ করে রাখা। অন্য জাতি নিজেদের উৎসাহিত করতে পারে, আর আমরা আমরাও নিজেদের ভালো সান্ত্বনা দিতে জানি।

নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারাটা খারাপ কিছু না। যখন কোনো কিছুতে ব্যর্থতা অবশ্যম্ভাবী, তখন সান্ত্বনাই শ্রেয়। কিন্তু ব্যর্থতার আগেই সান্ত্বনা দূর্বল মানসিকতা। ব্যর্থতা আসার আগে ব্যর্থতা বরণ, অবশ্যই দূর্বল মানসিকতা।

যদি সহজ করে বলতে চাই-

আপনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে যদি ১০ জন জঙ্গি আপনাকে ঘিরে রাখে, আর আপনার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, তখন নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করার বিপক্ষে আমি না। বরং সেই জঙ্গিদের বিরিয়ানির দাওয়াত দেওয়ার বিপক্ষে।

কথাটা উদ্ভটি হলেও, তাই করছে,করছি।

যারা নিজেদের পূর্ব সান্ত্বনা দিচ্ছে, তাদের প্রতিও আমার কোনো সমস্যা নাই। সমস্যা আছে তাদের প্রতি, যারা তাদের এই পূর্ব সান্ত্বনা কে “আমার হলে হবে, আমি ভয় পাই না, তোমার কি?” দিয়ে বাহাদুরিতে পরিণত করতে চায়।

যান, যারা জেনে এই ধরনের মিথ্যে বাহাদুরি করে তাদের সাথেও আমার সমস্যা নাই। যারা না জেনে এই ধরনের বাহাদুরি করে তাদের সাথে সমস্যা।

এই ধরনের বাহাদুরির মৌখিক কোনো জওয়াব বেয়াদবির “সম্মানজনক” খেতাব এনে দিতে পারে,তাই লিখছি-

আপনার মরার শখ, আপনি মরেন। কিন্তু আমার জঙ্গিদের বিরিয়ানি খাওয়ানোর কোনো শখ নাই এবং আমার আপনজনের মৃত্যু দেখারও শখ নাই। যান, আপনার মৃত্যু শখেও আমার কোনো সমস্যা নাই, যদি আপনি মুখে মাস্ক আর হাতে গ্লাবস পরে আমার থেকে দেড় মিটার দূরে দাঁড়িয়ে তারপর আপনার মিথ্যে বাহাদুরি দেখান।

আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে আমার সিরিয়াস সমস্যা আছে আপনার সাথে।

যদিও এই ধরনের উদ্ভট বাহাদুরি করোনার জন্য নতুন করে আমদানি হয় নাই। সেই জন্মলগ্ন থেকেই বাঙ্গালির একই ধরনের বাহাদুরি। বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ পতনও কিন্তু মীর জাফরের বৃটিশ জঙ্গিদের বিরিয়ানি খাওয়ানোর মাধ্যমেই।

এমনকি মহামারীতে বাহাদুরিও আমাদের নতুন অভ্যাস না। আপনার মনে আছে কিনা জানি না, তবে গত বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছিল সাড়ে তিন লক্ষ। গত বছরও বাহাদুরির পরিমাণ প্রচুর ছিল। কিন্তু পার্থক্য হলো, গত বছর আমরা মশার বিষে পাড় পেয়ে গেলাম, এইবার মানুষের বিষ (এলকোহল) দিয়ে বাঁচা যায় কিনা সন্দেহ। মশারি গতবছর ডেঙ্গু থেকে বাঁচিয়েছিল, এইবার আপনার মশারিতেই (নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র) থাকতে পারে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস।

বাহাদুররা আবার প্রশ্ন করতে পারে, সাড়ে তিন লক্ষ ডেঙ্গু রোগী সামাল দিতে পারলে সাড়ে তিন লক্ষ কোভিড রোগীও সামাল দিতে পারবে না কেন?

পারবে না, কারণ গতবছর পিপিই লাগে নি, রোগীর সেবা দিতে গিয়ে ডাক্তার নিজে রোগী হয় নি। যার ফলে গত বছর ডাক্তাররা নিজের কর্মদক্ষতার চেয়ে বেশি সেবা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। এই “সুযোগ” টা এইবার নেই।

সোজা কথা, মশার মাধ্যমে ছড়ালে মশা মারতে পারবেন, কিন্তু মানুষের মাধ্যমে ছড়ালে মানুষ মারতে পারবেন না।

সো, উই সিম্প্লি ক্যান নট এফোর্ড করোনা ভাইরাস।

সুতরাং,

আগে এরকম অসংখ্য ফ্যাক্ট জানতে হবে, তারপর বলুন “আমার হলে হবে, আমি ভয় পাই না, তোমার কি?”

ধন্যবাদ।

 

# নুরেন শামস চৌধুরী, আইন শিক্ষার্থী