বিদেশ ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় ১৮ এপ্রিল শনিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২২ লাখ ২৪ হাজার ৪২৬। এরমধ্যে এক লাখ ৫৩ হাজার ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ ৯২ হাজার ১৬৯। মৃত্যু হয়েছে ৩৬ হাজার ৭২১ জনের। মৃতের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ২২ হাজার ৭৪৫। আর আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৪৩৪ জন।

মৃতের হিসাবে তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬১৩। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৩।

উৎপত্তিস্থল চীনে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৬৩৬। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।’

এদিকে করোনা মহামারির ফলে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে আফ্রিকাসহ বেশ কিছু স্বল্পোন্নত দেশ। বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ফলে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৭-০৮ সালের দিকে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে যে ধরনের সহিংস পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। বিশ্ব চাইলে আসন্ন এ সংকট ঠেকাতে পারে, তবে তা করার সময় ফুরিয়ে আসছে। খুব দ্রুতই সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ফসলের ওপর পঙ্গপালের আক্রমণের কারণে এমনিতেই তীব্র সমস্যার মধ্যে আছে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। ৭০ বছরের মধ্যে এতোটা খারাপ পরিস্থিতিতে আর পড়তে হয়নি তাদের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই এসব দেশের অন্তত ২ কোটি মানুষ প্রচণ্ড রকমের খাদ্য অনিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির মধ্যে ছিল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) এর জরুরি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরিচালক ডমিনিক বারজিওন বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তাজনিত দিক থেকে কিছু জায়গা দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অভাবের মাত্রাটা এমনিতেই অনেক বেশি। এ সময়ে আরেকটি আঘাত তারা সহ্য করতে পারবে না। এ নিয়ে আমরা খুব উদ্বেগে আছি।’

২০০৭-৮৭ সালের দিকে বিশ্বব্যাপী যখন আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল বিভিন্ন দেশ। আর এতে করে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে সহিংসতা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। এবার তা না করতে বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডমিনিক। তিনি বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক সংহতি ও মানবিকতারই প্রশ্ন নয় শুধু, এটি বিশ্বের নিরাপত্তারও প্রশ্ন। বিশ্বের কিছু অংশের পরিস্থিতি যেন খাদ্য নিয়ে সহিংসতার মতো অবস্থা তৈরি না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।’