ডেস্ক নিউজ:
চট্টগ্রাম নগরের ফকিরহাটে ব্যবসা করতেন সাতকানিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম (৬৯)। করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার ১৭ দিন আগে জ্বর অনুভব করায় পশ্চিম ডেমশা এলাকার আলী নগরের ইছামতি গ্রামে ফিরে যান তিনি। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে ৮ এপ্রিল স্থানীয় হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সে রাতেই চমেকে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন ওই ব্যক্তির দাফন-কাফন করেন। কিন্তু ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় পরে জানা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সাতকানিয়ায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন ওই ব্যক্তির ছেলে ও তার চার বন্ধু। যাদের সবার বয়স ২৫ থেকে ৩১ বছরের মধ্যে। এর আগে রোববার (১২ এপ্রিল) সাতকানিয়া পৌর সদর এলাকার দুই যুবক করোনায় আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন একজন শিক্ষার্থী ও আরেকজন ব্যবসায়ী। আক্রান্তদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। বর্তমানে ওই উপজেলায় করোনা আক্রান্ত সাত জন । আর সাত জনই যুবক।

সিরাজুল ইসলামের ছেলে আমিন (২৭) বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, ‘সব কেমন উল্টাপাল্টা মনে হচ্ছে। যারা বাবার খুব কাছে ছিলে তাদের কারো করোনা পজেটিভ হয়নি। অথচ আমার আর কয়েকজন প্রতিবেশি বন্ধুর রিপোর্টে করোনা পজেটিভ।’

তিনি জানান, তার বাকি চার বন্ধুর সবাই প্রায় সমবয়সী। তাদরে মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সীর বয়স ২৫ বছর। আর সবচেয়ে বেশি যার বয়স তিনি ৩১ বছর বয়সী একজন ব্যবসায়ী। বাকিদের মধ্যে রয়েছেন সিএনজি অটোরিকশা চালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

আমিন বলেন, ‘বাবা অসুস্থ হয়ে বাড়ি আসার পর আমরা সবাই তার সেবা শুশ্রুষায় পাশে ছিলাম। বন্ধুরাও জানাজা-কাফন পরানো ও দাফনে অংশ নেয়। কিন্তু আমার মা-ভাই কারো শরীরে করোনা পাওয়া যায়নি। তুবও পুরো পরিবার বড় অনিশ্চিয়তায় আছি। ঘরে যা আছে তা খেয়ে বেঁচে আছি, মাঝে মাঝে মেম্বারের মাধ্যমে বাজার আনিয়ে খাওয়া-দাওয়া সারছি।’

আমিনের বন্ধু জাফরও (ছদ্মনাম) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমিন আমার অনেক পুরোনো বন্ধু। আমাদের চারজনেরই পাশাপাশি বাড়ি। চাচা অসুস্থ হওয়ার পর আমি তার পায়ে তেল মালিশ করে দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু বিষয়টা এত ভয়াবহ বুঝতেই পানিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট করোনা পজেটিভ হলেও কারো মধ্যেই কোনো অসুস্থতা দেখা যাচ্ছে না। তবে শুনেছি আমাদের আইসোলেশনে নেয়া হবে।’

এদিকে সাতকানিয়া পৌর সদরে দুই যবক করোনা আক্রান্ত হওয়ার পেছনে নারায়ণগঞ্জফেরত পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সংস্পর্শকে দায়ী করছেন চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার কাজে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালনকারী স্বাচিপ নেতা ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান।

সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ছিল সাতকানিয়ায়। পরে গত ১২ এপ্রিল সাতকানিয়া পৌর এলাকার এক শিক্ষার্থী ও এক যুবক করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। সোমবার (১৩ এপ্রিল) করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসায় আমার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া আরও সাত স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সে রিপোর্ট এখনো আসেনি। উপজেলাকে লকডাউন করার নির্দেশ রাতেই পেয়েছি। এটি বিশাল এলাকা, তাই সময় সাপেক্ষ বিষয়। আশা করছি বুধবারের (১৫ এপ্রিল) ভেতর এ কাজ আমরা শেষ করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘১২ এপ্রিল সাতকানিয়া পৌর সদরের ১ নম্বর ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুই যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের একজন শিক্ষার্থী, অপরজন ব্যবসায়ী। তাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছিল। গত ৮ এপ্রিল রাতে করোনা রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা এলাকার আলী নগরের ইছামতি গ্রামের ৩৯০ পরিবারের ৩ হাজার ৭১২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। তারা হাপাতালেই কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।’