শাহীন মাহমুদ রাসেল :

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পুরো দেশ এখন কার্যত লকডাউন। এমন অচলাবস্থায় মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষজন; পরিবারসহ অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে তাদের দিন। এ মানবেতর পরিস্থিতি থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু চাল বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিধিবহির্ভূতভাবে ডিলার নিয়োগ ও নিয়োগে প্রভাবশালীদের স্বজনপ্রীতি, স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে ডিলার কর্তৃক চাল আত্মসাৎ, বেশি দামে বাজারে চাল বিক্রি করে দেওয়া, কালোবাজারে বেশি দামে চাল বিক্রির জন্য গোপনে নিজস্ব গুদামে চাল সরিয়ে নেওয়ার বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে রামুর বিভিন্ন স্থান থেকে।

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে “খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি”-এর আওতায় স্বল্পমূল্যে চাল সরবারহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিবারকে প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল দেয়া হয়। কিন্তু সঠিক পরিমাণে চাল দিচ্ছে না রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দৌছড়ি নারকেল বাগান দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলার ও ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক নজরুল ইসলাম। একই অভিযোগ এসেছে গর্জনিয়ার ৫নং ওয়ার্ডের জাউচ পাড়ার ডিলার ও ইউনিয়ন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাকেরের বিরুদ্ধেও।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত ডিলাররা প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে ৩০০ টাকার বিনিময়ে প্রতিটি দুস্থ পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ঘটছে উল্টো চিত্র। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, এ সব পরিবার থেকে ৩০ কেজি চালের মূল্য ৩২০ টাকা নেয়া হলেও দেয়া হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ কেজি চাল। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খেটে-খাওয়া মানুষেরা। এ নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ থাকলেও খাদ্য সহায়তা বন্ধ হবার আশংকায় কথা বলছেন না অনেকে।

জানা গেছে, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দৌছড়ি নারিকেল বাগান এলাকায় হতদরিদ্র নিবন্ধিত পরিবারগুলোকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করার কথা থাকলেও যুবলীগের আহবায়ক ডিলার নজরুল ইসলাম জনপ্রতি ২-৩ কেজি করে চাল কম দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়াও চাল বিক্রির নিয়ম তোয়াক্কা না করে অনেকের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২০ টাকা বেশি নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতদরিদ্রদের মধ্যে ১০টাকা দামে চাল বিতরণ করছেন। সরকারের এই সেবার তালিকাভুক্ত হওয়া সত্বেও গর্জনিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জাউচপাড়ার ডিলার মুসলেমের পুত্র যুবলীগ নেতা সাকের আহাম্মেদ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চাল বিক্রি করছেন। প্রথম ২-৩ মাস চাল পেয়ে আসলেও গত কয়েকমাস ধরে খোশনে আরা বেগম নামের একজন মহিলাসহ এলাকার কিছু হতদরিদ্র পরিবার সরকারি এই চাল পাচ্ছেন না। তাদেরকে চাল না দিয়ে ডিলার সাকের অবৈধভাবে চালের বস্তা পরিবর্তন করে অন্যত্র বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়, শামশুল আরেফিন নামের একজনের ডিলারশীপ সাব কন্ট্রাকে কিনে এই নেতা চাউল বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীরা।

ভুক্তভোগী কালু, এহেসান, বদিউল আলম ও জাফরসহ কয়েকজন বলেন, এর আগে ৩০ কেজির বস্তায় চাল দিলে আমরা ৩০ কেজি চালই পেতাম কিন্তু কিছু দিন ধরে বস্তায় না দিয়ে বস্তা খুলে দিচ্ছে। ফলে চাল কম দেয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে। শুধু তাই নয় জানা গেছে, এর আগেও যখন বস্তায় চাল দেয়া হতো, তখনও অনিয়ম করতো ওই দুই ডিলার।

অভিযোগের বিষয়ে ডিলার নজরুল ইসলাম বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমি জনপ্রতি ৩০ কেজি চাউল দিয়েছি। চাল কম হওয়ায় ৫ বস্তা বাইরে থেকে ক্রয় করে দিতে হবে। তাছাড়া আমি রাজনীতি করি তাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ২০ টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিবেদককে চা খেতে যাওয়া দাওয়াত করেন তিনি।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে অনানুষ্ঠানিকভাবে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে সাকের আহাম্মদ বলেন, আমি স্থানীয় নির্বাচন করেছি বলে আমার বিরুদ্ধে একজন মেম্বার মিথ্যাচার করতেছে। চেয়ারম্যানের সামনে চাউল বিতরন করেছি, তাই চাল না দেওয়া ও কম দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা।

এ বিষয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, আমি এখনি স্যানেটারি ইন্সপেক্টরকে পাঠাচ্ছি। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিব।