মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস এর ভয়াবহতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্থিরতাও তত বাড়ছে। গত ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে লকডাউন (Lockdown) ঘোষিত এলাকায় সকল ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। আবার ১১ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিকেলে আর একটি সার্কুলারে ৯ এপ্রিলের সার্কুলার আংশিক পরিবর্তন করে শুধুমাত্র দেশের ৬ টি সরকারি ব্যাংকের শাখা লকডাউন (Lockdown) এলাকায় সীমিত আকারে খোলা রাখার জন্য নির্দেশনা জারী করে। খোলা রাখতে নির্দেশনা দেওয়া ব্যাংক সমুহ হলো-সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। কক্সবাজারে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কোন শাখা নাই।

গত ৮ এপ্রিল কক্সবাজারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কামাল হোসেন করোনা ভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে পুরো কক্সবাজার জেলা ভৌগোলিক এলাকা জনস্বার্থে লকডাউন (Lockdown) ঘোষনা করেন। এঅবস্থায় গত ১২ এপ্রিল হতে উল্লেখিত ৫টি ব্যাংকের শাখা সমুহ কক্সবাজারে সীমিত আকারে খোলা ছিল। কিন্তু প্রায় প্রাইভেট ব্যাংকের শাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ মতো কক্সবাজারে বন্ধ ছিলো।

মূলত গত ২৫ মার্চ হতে সাধারণ ছুটিতে সারাদেশের মতো কক্সবাজারও প্রায় স্থবির। হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস জনিত সংকটে আকস্মিক পরিস্থিতির শিকার কম বেশী সকলে আর্থিক টানাপোড়েনে পড়েছেন। দীর্ঘ ২১ দিন এই Stay Home অর্থাৎ বাধ্যতামূলক বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে মানুষকে। আরো কতোদিন এ অসহনীয় অবরুদ্ধ অবস্থায় মানুষকে থাকতে হয় সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।

এ দুঃসময়ে যাদের ব্যাংকে কিছু জমানো টাকা ছিলো, ডিপিএস ছিলো, ফিক্সড ডিপোজিট ছিলো, সঞ্চয়পত্র ছিলো ইত্যাদি তুলে অথবা ভেঙ্গে সংসার চালানোর চিন্তা করেছিলো। মেয়াদী ও স্থায়ী জমার অধীনে ব্যাংক থেকে অনেকে আবার ঋন নেওয়ার চিন্তা করেছিলো। আবার যারা একটু স্বচ্ছল, তাঁরা অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছল স্বজন, প্রতিবেশী, পরিচিতজনদের ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে সহায়তা করার চিন্তা করেছিলো। দূর দূরান্তে দেশে বিদেশে যারা আত্মীয় স্বজন রয়েছে তারাও এই সংকটকালে তাদের স্বজনদের কাছে ব্যাংকের মাধ্যমে কিছু অর্থ সহায়তা দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সবকিছুই আটকে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক লকডাউন (Lockdown) এলাকায় প্রাইভেট ব্যাংক গুলো বন্ধ করে দেওয়ার সার্কুলার জারিতে।

প্রশ্নবিদ্ধ সেবার মান, ধীরগতির কার্যক্রম, অপেশাদারিত্ব আচরণ, বিভিন্ন অনিয়ম, অনৈতিক কারবারের অভিযোগ, কারিগরি প্রযুক্তিগত স্বল্পতা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকের শাখা গুলোর প্রতি গ্রাহকদের অনীহা দীর্ঘদিনের। এজন্য সারাদেশের মতো কক্সবাজারেও সরকারি ব্যাংকের চেয়ে প্রাইভেট ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের ঝোঁক বেশি। কক্সবাজার শহরের শুধুমাত্র লিংকরোড হতে পশ্চিমে বিভিন্ন প্রাইভেট ব্যাংকের ৩৮ টি শাখা রয়েছে। সেখানে সরকারি ব্যাংক গুলোর রয়েছে মাত্র ৬ টি শাখা। এতেই বুুঝা যায়, কক্সবাজারের মানুষের প্রাইভেট ব্যাংকের প্রতি আগ্রহ কত বেশি। কিন্তু সেই প্রাইভেট ব্যাংকের শাখা গুলো কক্সবাজার লকডাউন (Lockdown) এলাকা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ মতো গত ১২ এপ্রিল রোববার থেকে বন্ধ থাকায় করোনা ভাইরাস জনিত সংকটে মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্দশা আরো অনেক গুন বেড়ে গেছে। আবার প্রাইভেট ব্যাংকের শাখা গুলো বন্ধ থাকায় তাদের এটিএম বুথ গুলোতেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা জমা করতে পারছেন না। মুদি ও জরুরি সেবা পণ্যের দোকানদারেরা ডিলার, পাইকার, আড়ত ও কারখানা থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় ও জরুরি পণ্য সামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের জন্য ব্যাংকিং লেনদেন করতে পারছেন না। ফলে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় ও জরুরি পণ্য সামগ্রীর চরম সংকট দেখা দেওয়ার আশংকা রয়েছে। ‘বিকাশ’ জাতীয় যেসব মোবাইল ফোন লেনদেন প্রক্রিয়া আছে তারাও নিজ নিজ ব্যাংকে টাকা জমা ও উত্তোলন করতে পারছেন না বলে বিকাশ এজেন্টগণও সংকটে পড়ছেন। সবমিলিয়ে কক্সবাজারে গত ২ দিন প্রাইভেট ব্যাংক গুলো বন্ধ থাকায় গ্রাহকেরা যে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, তা অনেকটা অবনর্নীয়।

এ অবস্থা আরো কিছুদিন চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। সরকারি বিভিন্ন লেনদেন, চালান কার্যক্রম, রাষ্ট্রীয় তহবিল পরিচালনা ইত্যাদি অধিকাংশ লেনদেন সরকারি ব্যাংকের শাখা গুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়। এজন্য সরকারি দপ্তর গুলো প্রাইভেট ব্যাংকের শাখা গুলো বন্ধ থাকায় গ্রাহকগণ কত যে সংকটে আছেন, তা হয়ত পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারছেন না।

তবে এ সংকট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করার আগেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে সীমিত আকারে হলেও প্রাইভেট ব্যাংক গুলো খোলার উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কক্সবাজারবাসীর চরম সংকটের কথা তুলে ধরতে হবে। আশাকরছি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এখানকার মানুষের চরম দুর্দশার বিষয়টি উপলব্ধি করে দ্রুততম সময়ে কক্সবাজারের প্রাইভেট ব্যাংকের শাখা গুলো কর্মদিবসে খোলা রাখতে গুরুত্বের সাথে উদ্যোগ নেবেন।

(লখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা।)