ইমাম খাইর, সিবিএন ##
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশব্যাপী চালু হওয়া ১০ টাকা কেজি দরে বিশেষ ওএমএস কর্মসূচির আওতায় ১৭,৩৪৭ জন অসহায় দুঃস্থ কার্ডধারীর নিকট ৩০ কেজি করে মোট ৫২০.৪১ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করা হয়েছে।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) কক্সবাজার জেলার সকল উপজেলায় চাল বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত ১৮৩ জন ডিলারদের নিকট থেকে পূর্ব নির্ধারিত কার্ডধারীরা চাল সংগ্রহ করেছে। ‌

তবে, ওএমএস চাল বিক্রির প্রথম দিনই সারা দেশে ব্যাপক জনসমাগম, চাল কিনতে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় এবং তাতে করোনাভাইরাস বিস্তারের শঙ্কা থেকে এই কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করেছে সরকার।

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজার জেলার সকল উপজেলায় চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় অসহায় দুঃস্থ কার্ডধারীদের নিকট প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে চাউল বিক্রি কার্যক্রম জেলা প্রশাসকের পক্ষে সকল ইউএনও পরিদর্শন করেন।

এছাড়া জেলা প্রশাসন-এর অনলাইন পাঠ্যক্রম ‘আকাশ আমাদের সীমানা’-তে নবম শ্রেণির ইংরেজি ২য় পত্র এবং অষ্টম শ্রেণির বাংলা ক্লাসের লিংক প্রদান করা হয়েছে।

চাউল বিক্রয়ে কোন ধরনের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম- ০৩৪১৬২২২২, ০১৮৭২৬১৫১১১ জানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক জানান, বিগত ১৮ মার্চ থেকে অদ্যবধি কক্সবাজার জেলায় মোবাইল কোর্টে বাজার মনিটরিংয়ে ১৭৪ টি মামলায় ১৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা এবং করোনা সঙ্গনিরোধে ২৭৬ টি মামলায় মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের মডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে -সোমবার পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় মোট ৬৫৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনের এবং ৬০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন হতে আজ অবধি ছাড়প্রাপ্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৪৭৬ জন।

এ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ জন। যিনি ঢাকাস্থ কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ৫ এপ্রিল সুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন।

১ মার্চ থেকে কক্সবাজার জেলায় বিদেশ প্রত্যাগত ২০০২ জনের মধ্যে থেকে ১১২১ জন প্রবাসীর ঠিকানা ও অবস্থান জেলা প্রশাসন কর্তৃক চিহ্নিত করা হয়েছে। এ যাবৎ কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার জেলায় কেউ মৃত্যুবরণ করে নি।

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় জেলার প্রস্তুতিঃ
কক্সবাজার জেলার ৮ টি সরকারি ও ২৯ টি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র বা হাসপাতালে মোট বেড রয়েছে ১৩৯৭ টি। তন্মধ্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ২৮২ টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসকল চিকিৎসাকেন্দ্র মোট ২৪১ জন ডাক্তার ও ২৭৫ জন নার্স দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল সমূহে মোট ১৭৪৬ পিস ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী বা পিপিই বিতরণ করা হয়েছে এবং ২৬১৫ পিস পিপিই মজুদ রয়েছে।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসায় স্থানান্তরের নিমিত্ত ১১ টি পৃথক অ্যম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্রসমূহে আইসোলেশন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকলেও রামু উপজেলায় নবনির্মিত হাসপাতালের একটি নতুন ভবনে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন ইউনিট এবং চকরিয়া উপজেলায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আরো ১ টি আইসোলেশন ইউনিট জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলার সরকারি সহায়তা পরিস্থিতিঃ
কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া অতিদরিদ্র দিনমজুর শ্রেণির মানুষদের জরুরি প্রয়োজনে খাদ্য সহায়তা প্রদানের নিমিত্ত কক্সবাজার জেলায় ৫৭৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৮ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা এবং শিশু খাদ্য বাবদ নগদ ৬ লক্ষ টাকা মজুদ রয়েছে। এছাড়াও, ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রয়ের জন্য মজুদ রয়েছে ২১১০.৫০ মেট্রিক টন চাল। ইতোমধ্যে ৩৪,০০০ পরিবারের নিকট ৪৯০ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা ও ৬,৬০০ পরিবারকে ১৪ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকার নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারনা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে যৌথ অভিযান/টহল পরিচালনাসহ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকল কার্যক্রম জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালনা করা হচ্ছে।