শাহেদ মিজান, সিবিএন:

করোনা ভাইরাসের এই কঠিন সময়েও করোনা ঝুঁকিযুক্ত মহেশখালীর পান ব্যবসায়ীদের কোনো ধরণের  নিয়ন্ত্রণ করছে না প্রশাসন। এতে উপজেলার কয়েকশ পান ব্যবসায়ী এই দুর্যোগকালীন সময়েও পান বিক্রি করতে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, ফেনি, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, কেরানীহাট, পটিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়া-আসা করছে। এই পান ব্যবসায়ীদের যাওয়া-আসা নিয়ে পুরো মহেশখালীতে করোনা আক্রমণের চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে  সচেতন মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা, নতুনবাজার, ছোটমহেশখালী, হোয়ানক, শাপলাপুর এবং কালারমারছড়ায় পানচাষ হয়। এসব এলাকায় সাপ্তাহিক দু’বার করে অন্তত ১৫টি পানের বাজার বসে। এসব বাজার থেকে হাজারোধিক ব্যবসায়ী পান ক্রয় করেন। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ী পান ক্রয় করে  পাঠিয়ে দেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। সেখানে অবস্থানরত আড়তদাররা পান বিক্রি করে দেন। কিন্তু প্রায় দুই’শ মতো ব্যবসায়ী অতি মোনাফার জন্য নিজেরাই ক্রয়কৃত পান নিয়ে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, ফেনি, নোয়াখালী, চ্ট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, কেরানীহাট, পটিয়াসহ অন্যান্য স্থানে যান।

জানা গেছে, শতাব্দির সবচেয়ে ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো দেশ লকডাউন চলছে। কিন্তু লকডাউনের এই কঠিন সময়েও সরকারি বিধি-নিষেধ মানছে না মহেশখালীর ওইসব অতি মোনাফালোভী পান ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে বাইরের এলাকায় আসা-যাওয়া না করতে তাদেরকে নিষেধ করা  হলেও তারা তারা আমলে নিচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই তারা সপ্তাহে দুইবার আসা-যাওয়া করছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, লকডাউনের কারণে স্থানীয় বাজারে পানের দাম তলানিতে নেমে গেছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, ফেনি, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, কেরানীহাট, পটিয়াসহ অন্যান্য আড়তে সে হারে কমেনি। সে সুযোগটি লুফে নিতে ওইসব ব্যবসায়ীরা নিজের ঝুঁকি এবং পুরো উপজেলার করোনা ঝুঁকিকে তোয়াক্কা না করে সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে অনায়সে আসা-যাওয়া করছে।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, বর্তমানে ঢাকার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। চট্টগ্রামেও ১০জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছে এবং চট্টগ্রাম ও সাতকানিয়ায় পর্যন্ত তিনজন মারা গেছে। অন্যদিকে গণজমায়েত এবং অবস্থানগত কারণে কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, ফেনি, নোয়াখালী, চ্ট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের কেরানীহাট, পটিয়া এখন করোনা আক্রমণের বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অথচ সে সব এলাকায়  নিয়মিত আসা-যাওয়া করছে মহেশখালীর প্রায় দুইশ জন পান ব্যবসায়ী। তারা সেখান থেকে এসে হোম কোয়ারাইন্টাইনতো দূরের কথা, বাড়িতে না গিয়েই আবার সরাসরি বিভিন্ন পান বাজারে গিয়ে গণজমায়েতের মধ্যে পান ক্রয় করছে। পান ক্রয় করতে গিয়ে তারা বিক্রেতাদের স্পর্শ করছে। পান বিক্রয় করা স্বার্থে তাদের সংস্পর্শে না আসার উপায় নেই বিক্রেতাদেরও। ফলে মহেশখালী ভয়ংকর করোনা ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

এদিকে লকডাউনে অতি প্রয়োজনীয় ছাড়া মহেশখালীর সব প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কাঁচামাল হওয়ায় পানবাজার বন্ধ করেনি প্রশাসন। তবে নির্দিষ্ট কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এগুলো হলো, বড় স্থানে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বাজার বসানো,  জমায়েত না হওয়ার জন্য সপ্তাহে পাঁচদিন বাজার বসানো এবং বিচ্ছিন্নভাবে পাড়া-মহল্লার মোড় ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে পান ক্রয় করা।

খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনের জারি করা এসব ব্যবস্থার একটিও কার্যকর করা হয়নি। বাজারের ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে একবারে উদাসীন। এমনকি তারা বাইরে যাওয়া-আসা করা অভিযুক্ত পান ব্যবসায়ীদের উপর কোনো চাপ প্রয়োগ করছে না। উল্টো তাদেরকে নির্বিঘ্নে পান ক্রয় করতে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, মহেশখালীকে ভয়ংকর করোনা ভাইরাসের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে এখনই বাইরে আসা-যাওয়া অতি মোনাফা লোভী পান ব্যবসায়ীদেরকে থামাতে হবে। সরকারি বিধি অমান্য করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনী কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে তাদেরকে প্রাতিষ্ঠারিক কোয়ারাইন্টাইনে পাঠাতে হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামিরুল ইসলাম বলেন, যারা পান নিয়ে এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে আসা-যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। এই বিষয়য়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলার সব পানবাজার বসাতে নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে। সে মোতাবেক বাজার পরিচালনা করলে করোনা ভাইরাসের ঝুুঁকি হ্রাস পাবে।