মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

পবিত্র মাহে রমজান সমাগত। রমজান মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৪ এপ্রিল শুক্রবার দিবাগত রাত্রে এশারের নামাজের পর থেকে প্রথম রোজার তারাবীর নামাজ আদায় করার সম্ভবনা বেশী।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ইতিমধ্যে আগামী ২৫ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষনা করেছে। ৫জন ৫ওয়াক্ত নামাজে এবং ১০জন জুমার নামাজে মুসল্লী নিয়ে নামাজ আদায় করতে ইসলামী ফাউন্ডেশন দেশের বিশিষ্ট আলেমদের মতামত নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। গত সপ্তাহ ধরে মাঠ প্রশাসন এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৃনমুলে বেশ তৎপর রয়েছেন। এগুলো ফরজ নামাজ মসজিদে জামাতে আদায়ের বিষয়ে বলা হয়েছে। আর তারাবীর নামাজ হলো-‘সুন্নতে মোয়াক্কদায়ে কেফাইয়া’। আবার জরুরি প্রয়োজনে দিনে অনুমতি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া গেলেও সন্ধ্যার পর বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে গত ১০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের শতকরা ৮৫% ভাগেরও বেশী নাগরিক ইসলাম ধর্মালম্বী। পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে, ইসলাম ধর্মালম্বীদের জন্য পূণ্য অর্জনের সেরা মাস। ইসলামের বিধান মতে, রমজান মাসে নফল এবাদত করলে ফরজ এবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়। আর ফরজ এবাদত করলে ৭০ গুন বেশী সওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাসে পূণ্য অর্জনের বিষয়ে আরো বিভিন্নভাবে মুসলমানদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এজন্য পবিত্র জুমা’র নামাজের মতো আমাদের দেশে মসজিদে তারাবীর নামাজের জামাতে একটু মুসল্লী বেশী হয়।

রমজান মাসে বিশেষ কিছু এবাদতের মধ্যে এশারের ফরজ নামাজের পর তারাবীর নামাজ আদায় করা একটি অপরিহার্য ও বেশ সওয়াবের এবাদত। এই তারাবীর নামাজ মসজিদে জামাতের সাথে আদায়ের জন্য জন্য ২টি পন্থা রয়েছে। তার একটি হলো-হাফেজে কোরআন দিয়ে মসজিদে জামাতে খতমে তারাবী আদায় করা। অপরটি হলো মসজিদে জামাতে সুরা তারাবী আদায় করা।বাংলাদেশের প্রায় ৯০% ভাগ মসজিদে হাফেজে করোআন দিয়ে জামাতে খতমে তারাবী আদায় করা হয়। বিশুদ্ধ, সহিহভাবে খতমে কোরআনের তারাবী পড়ানোর জন্য আমাদের দেশে প্রায় ২০/২৫ দিন আগে থেকেই পবিত্র কোরআনের অপেক্ষাকৃত ভাল হাফেজদের যাচাই বাচাই করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেন।কোরআনের হাফেজদের বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদে নিয়ে আসা, থাকা, খাওয়া, কোরআন রিভাইজ দেওয়ার ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হয়। পবিত্র রমজান মাসের চন্দ্র উদয়ের দিন এশারের ফরজ নামাজের পর থেকে মসজিদে জামাতে তারাবীর নামাজ আদায় করা হয়। এ অবস্থায় আগামী ২৪ এপ্রিল যদি রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়, তাহলে সে রাত্রেই তারাবী শুরু হবে। অর্থাৎ ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় রোজার তারাবীর নামাজ আদায় করতে হবে। আবার সাধারণ ছুটি আগামী ২ মে শনিবার পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করছেন বলে আভাস দিয়েছেন।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কক্সবাজারে লকডাউন (Lockdown অবরুদ্ধ) জারী করা আছে। সন্ধ্যার পর জরুরি প্রয়োজনেও বের হওয়া যাচ্ছেনা। ৫ জনের বেশী মুসল্লী নিয়ে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসমাগাম ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় মসজিদে জামাতে খতমে কোরআন এর তারাবী বা সুরা তারাবী আদায় করা যাবে কিনা, তার সুনির্দিষ্ট শরীয়াসম্মত নির্দেশনা শিঘ্রী দরকার। মসজিদে জামাতে তারাবী পড়া নাগেলে শরীয়াহ অনুযায়ী রোজাদারদের বিকল্প কিভাবে তারাবীর নামাজ আদায় করতে হবে, তারও একটা শরিয়াসম্মত সুন্দর নির্দেশনা দ্রুত জারী করা প্রয়োজন। নাহয়, রোজার কাছাকাছি এসে এ বিষয়ে করনীয় সম্পর্কে নির্দেশনা আসলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও মুসল্লীরা বিড়ম্বনার শিকার হবে। রোজা, তারাবী, সেহেরি, ইফতার, ইতেকাফ ইত্যাদি নিয়ে একটা হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন মহোদয়ও দেশের স্বার্থে নিজে উদ্যোগ নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন অথবা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে জেনে নিতে পারেন। আশা করছি, সরকার করোনা ভয়াবহ ভাইরাসজনিত সংকট বিবেচনায় রেখে মসজিদে জামাতে তারাবীর নামাজ আদায়ের বিষয়ে দেশবাসীকে দ্রুততম সময়ে গঠনমূলক সিদ্ধান্ত জানাবেন।

(লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা।)