শাহেদ মিজান, সিবিএন:
করোনা প্রকোপের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১১৭জন আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু ১২জন। কিন্তু দেশে লকডাউন চললেও মানুষের জমায়েত রোধ করা যাচ্ছে না। কক্সবাজারের প্রেক্ষাপটে শহরের প্রধান সড়ক ছাড়া অলিগলি এবং উপজেলা পর্যায়ে অলিগলিছাড়াও প্রকাশ্যে বাজারেও গণজমায়েত অব্যাহত রয়েছে। মানুষে এই জমায়েত মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনার আশঙ্কা দেখে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য নিতে হবে বিকল্প ব্যবস্থাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে গণজমায়েত এড়ানোই সর্বোত্তম পন্থা। তার জন্য শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সব মানুষকে ঘরে অবস্থান, প্রয়োজন হলে নিয়মমাফিক চলাফেরা অর্থাৎ অন্যজন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রজায় রাখতে হবে। কোনো কারণেই আড্ডাবাজি করা যাবে না। এক কথায় ঘর থেকে বের হওয়াই যাবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিশেষ করে শহরের কিছু অসচেতন মানুষ এবং গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ করোনার মারাত্মক প্রভাবকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এসব অসচেতন মানুষগুলো সুযোগ পেলেই বাজার, জংশন অলিগলি এবং পাড়ার মোড়ে মোড়ে গণজমায়েত অব্যাহত রেখেছে। অকারণেই তারা সেখানে আড্ডাবাজি করছে।
অন্যদিকে যারা নিত্যপণ্য কেনাবেচা করতে বাজারে যাচ্ছে তারাও করোনা সতকর্তার নির্দেশনা মানছে না। তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখে জমায়েত হয়েই কেনাবেচা করছে। খোদ কক্সবাজার শহরের বাজাগুলোতেও এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গ্রামাঞ্চলে তা ব্যাপকহারে বজায় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাস অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও এর মাত্রা বাড়ছে। কিন্তু জনগণ যদি সচেতন না হয়, সরকারি ও স্বাস্থ্যগত নির্দেশনা না মানে তাহলে বাংলাদেশও ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার মারাত্মক আশাঙ্কা রয়েছে। তাই জনগণকে সচেতন করার পরও তা কার্যকর না হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে আরো কিছু কার্যকরী বিকল্প ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি ও কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোশেদ চৌধুরী খোকা দিয়েছেন কিছু বিকল্প ব্যবস্থার ধারণা। তিনি বলেছেন, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেনা, নৌসহ সব সরকারি বাহিনী গণজমায়েত এড়াতে এবং মানুষকে ঘরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারপরও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কারণ অলিগলিতে টহল দেয়া সম্ভব না। মানুষ যদি সরকারি নির্দেশনা মেনে নিজ থেকে সচেতন না হয় তাহলে এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তাই গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষকে ঘরে রাখতে স্থানীয় পর্যায় থেকেও ব্যবস্থা নিতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে চেয়ারম্যানে নেতৃত্বে কিছু বিকল্প কিন্তু কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
যেমন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ইউপি মেম্বারের তত্ত্বাবধানে চৌকিদার, কমিউনিটি পুলিশ এবং সেচ্ছাসেবক কর্মী নিয়ে টহল দল গঠন করতে হবে। এই টহলদল প্রতি মুহূর্ত টহলে থাকবে। প্রয়োজন হলে চাপ প্রয়োগ করে গণজমায়েত, অপ্রয়োজনীয় বাইরে চলাফেরা এবং আড্ডাবাজি বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও সরকারের পক্ষ হয়ে এই কাজে সহযোগিতা করতে হবে। কোনোভাবে যদি পরিস্থিতি এই টহল দলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে সেনা, নৌসহ দায়িত্ব অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিবে।
গণজমায়েতের আরেকটি আশঙ্কার দিকের কথা জানিয়েছেন হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কেএম জাহিদুজামান। তিনি জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিও কক্সবাজারসহ সবখানে নিত্যপণ্যের বাজারগুলো স্বাভাবিকভাবে খোলা রয়েছে। এটা আশঙ্কাকে দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ বাজারে মাছ-তরকারিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য কিনতেও মানুষের ব্যাপক গণজমায়েত হচ্ছে। সেখানে কেউ সচেতন হয়ে দূরত্ব বজায় রাখাসহ করোনার রোধী কোনো নিয়ম মানছে না। তাই অচিরেই বাজারগুলো বন্ধ করতে হবে।
বাজারের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কেএম জাহিদুজামান বিকল্প ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন। কক্সবাজার শহরের প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, শহরের সব বাজার বন্ধ করে ভ্যানগাড়ির ফেরিবাজার চালু করতে হবে। পৌরসভার উদ্যোগে নিয়মিত ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে প্রয়োজন মতো ভ্যান দিয়ে মাছ-তরকারিসহ নিত্যপণ্য বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব পণ্য নিয়ে ভ্যানগুলো সব অলিগলি ফেরি করে বেচাকেনা করবে। ভ্যানগুলো চলমান থাকবে। যাদের প্রয়োজন তাদের ডাকে নির্দিষ্ট ওই বাসা বা ভবনের সামনে দাঁড়াবে ভ্যান। সেখান থেকে অন্য বাসা বা ভবনের সামনে সরে যাবে। এটাকে ‘ডোর টু ডোর’ কনসেপ্ট আখ্যায়িত করা যায়। এই ব্যবস্থা চালু করা গেলে বেচাকেনা সংক্রান্ত গণজমায়েত ৮০ শতাংশই রোধ করা যাবে।
এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেন, এই ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা গেলে গণজমায়েত পুরোপুরি রোধ করা যাবে।
এই প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, আমাদের প্রশাসনের নিয়োজিত লোকজন বসে নেই। তারা সারাক্ষণ টহল জোরদার রেখেছেন। কিন্তু তাদের পক্ষতো পাড়ার অলিগলি এবং বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না। তাই নিজ থেকে সচেতন হয়েই সবাইকে বাড়িতে থাকতে হবে। তারপরও ইউনিয়ন পরিষদ ভিত্তিক টহল জোরদার এবং বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আমি বিবেচনা করবো।’