লামা প্রতিনিধি:
প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা পেতে গত ২৫ মার্চ থেকে বান্দরবানের লামা উপজেলাকে ‘লকডাউন’ ঘোষনা করে দেয় প্রশাসন। ঠিক সেই মুহুর্তে প্রশাসনের লকডাউন উপেক্ষা করে জায়গা জবর দখলের উদ্দেশ্যে উপজেলার সরই ইউনিয়নের মেরিডিয়ান এগ্রো লিমিটেডের বাগানে হানা দিয়ে ১৩ বছর বয়সী ২৫০টি একাশিয়া গাছ কেটে নিয়ে যায় স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিকারীরা। শুধু তাই নয়, গাছ কাটায় বাধা দিলে কোম্পানীর কর্মচারীদেরকে হত্যা করে লাশ গুরম করাসহ নানা ধরণের হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় দুস্কৃতিকারী। এ বিষয়ে অভিযোগ করেও দুষ্কৃতিকারীদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন, কোম্পানীর ব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, অভিযোগের পর পুলিশ অসংখ্যবার সতর্ক করলেও দুস্কৃতিকারীরা জনসমাগম সৃষ্টি করে প্রতিনিয়ত গাছ কাটতে থাকে। প্রতিকার চেয়ে এ ঘটনায় জড়িত ইয়াংইন মুরুং (৩৫), প্রেনয় মুরুং (৩০), মেনরাও মুরুং (৩০), রিংরিং মুরুং (৫২), সিংবত মুরুং (৪০), মেনরিং মুরুং (৩০), রেংরাও মুরুং (৩৫), ও লংকং মুরুং (২৫)সহ আরো অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার সকালে গাছ কাটার সময় রিংরিং মুরুং (৫২) ও লংকং মুরুং (২৫) কে আটক করে পুলিশ। জামিনে ছাড়া পেয়ে গত শনিবার ভোর থেকে পুণ:রায় কোম্পানীর বাগানের গাছ কাটা শুরু করে দুস্কৃতিকারীরা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজাস্থ রাবার প্লট নং ৯৬, সীট নং- ১৬ ও দাগ নং- ১০৫৬/২২ এর আন্দর ২৫ একর পাহাড়ি জায়গা সরকার কর্তৃক লিজ পায় মেরিডিয়ান এগ্রো লিমিটেড। এ প্লটের জায়গায় বহু অ কায়িক শ্রম ও অর্থ ব্যয়ে কোম্পানী রাবারসহ ফলজ, বনজ গাছ সৃজন করে দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। ২-৩ মাস ধরে পাশের নতুন পাড়ার কিছু মুরুং লোকজন ওই জায়গা জবর দখলের অপচেষ্টা শুরু করে। গত ২০ মার্চ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দা, কুড়াল, লাঠিসহ দেশীয় তৈরী অস্ত্র নিয়ে ২৫০টি একাশিয়া গাছ কেটে ফেলে এবং ১৫০টি গাছ কঁাধে বহন করে নিয়ে যায় দুস্কৃতিকারীরা। যার অনুমানিক মূল্য ৭ লক্ষ টাকা। অবশিষ্ট ১শ গাছ কেটে আরো ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করার পাশাপাশি বেশি বাড়াবাড়ি করলে মারধর ও হত্যা করে লাশ গুম করবে বলে হুমকিও দেয় দুস্কৃতিকারীরা। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারীতেও একই দুস্কৃতিকারীরা কোম্পানীর বাগান থেকে ৫০-৬০টি গাছ কেটে নিয়ে যায়। পরে সামাজিক বৈঠকে কোম্পানীর বাগান থেকে আর গা কাটবেনা মর্মে অঙ্গিকার নামাও দেন নতুন পাড়ার ইয়াংইন মুরুং ও চংদই মুরুং।
সরজমিনে গেলে বেশ কয়েকজন স্থানীয় লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেরিডিয়ান এগ্রো লিমিটেড পর্যায়ক্রমে বাগানটি সৃজন করেন। নতুন পাড়ার মুরুং লোকজন বাগানের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে এবং এসব জায়গা তাদের বলে দাবী করছে। মূলত দুই বছর আগে নতুন পাড়াটি সৃষ্টি হয়। এই পাড়ার লোকজন কেউ এখানের স্থায়ী নয়। তারা কেউ বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী, উপজেলার আকিরাম পাড়া, গতিরাম পাড়া ও ঢেঁকিছড়া পাড়া হতে এসে নতুন বসতি শুরু করেন। মুরুংদের জায়গার কোন কাগজপত্র নেই, তারা শুধু শুধু ঝামেলা করছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত লংকং মুরুং ও ইয়াংইন মুরুং সাংবাদিকদের জানায়, আমাদের জায়গার কাগজপত্র নেই, তবে দখল ও হেডম্যান রিপোর্ট আছে। জুম করার জন্য আমরা পাহাড় পরিষ্কার করছিলাম। সে সময় কিছু গাছ কাটা পড়েছে। মিথ্যা মামলা করে আমাদের হয়রাণী করছে কোম্পানী।
সরই ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উল্ আলম বলেন, মিমাংশা না হওয়া পর্যন্ত বিরোধীয় জায়গার গাছ না কাটার জন্য মুরুংদের বলা হয়েছিল। তারা নিষেধ অমান্য করে গাছ কাটা অব্যাহত রাখায় কোম্পানীর লোকজন থানায় মামলা করেন।
এদিকে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বলেন, দুস্কৃতিকারী কর্তৃক একের পর এক হানা দিয়ে বাগানের গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ায় রাবার বাগান মালিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। এতে সরকারের উদ্যোগ ও রাবার শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। এ ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সার্বিক সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর অসংখ্যবার মুরুং লোকজনকে সতর্ক করা হয়। তারা নিষেধ অমান্য করে গাছ কাটতে থাকলে কোম্পানীর লোকজন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা মামলা নিতে বাধ্য হই।
লামায় দুই শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেলো দুস্কৃতিকারীরা, আটক ২
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
