ফারুক আহমদ, উখিয়া:
উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়িতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন চরম অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে ছুরিকাঘাত করেে হত্যার চেষ্টা সহ দফা দফা সংঘর্ষ ভাঙচুর ও তান্ডব লীলার ঘটনায় জনমনে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দু’পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা।

বিশেষ করে মামলার আসামীর মা নুর নাহার বেগম স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে চলছে পরস্পর বিরোধী অভিযোগ। কেউ কেউ এই মৃত্যুকে পুঁজি করে প্রতিপক্ষকে মামলাা দিয়ে ঘায়েল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয়রা জানান। মামলার ভয়ে বহু নিরপরাধ লোক বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে অন্যতর অবস্থান করছেন। এ সুযোগে সন্ত্রাসী বাহিনীরা পুরো এলাকা রাজত্ব কায়েম মহড়া দিচ্ছে।

থানা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময়ের পর অনেক নাটকীয়তায় গতকাল শনিবার বিকেলে মারা যাওয়া মহিলাকে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানা যায়, পশ্চিম সোনাইছড়িতে সপ্তাহখানেক আগে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে নুরুল আবছার নান্নু ও তার ভাইদের সাথে দেলোয়ার হোসেনসসহ কয়েকজনের কথা কাটি হয়।

এ ঘটনায় নান্নু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী বাহিনীর ছুরিকাঘাতে দেলোয়ার হোসেন গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ওই সময় মোবারক সহ আহত হয়েছিল আরো বেশ কয়েকজন।

এ ব্যয়পারে ৩১ মার্চ উখিয়া থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ভিকটিমের ছোট ভাই মোবারক হোসেন। যার মামলা নম্বর -৪৫। এ মামলায় ৩ জনকে আসামী করা হয়। আসামীরা হচ্ছে পশ্চিম সোনাইছড়ি এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন, দুই ছেলে নুরুল আবছার নান্নু ও আহমদ শরীফ।

এলাকাবাসীরা জানান গত ৩ এপ্রিল শুক্রবার বিকালে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আসামী আহমদ শরীফকে গ্রেফতার করে ইনানী পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় জের ধরে জাফর আলম , সানা উল্লাহর নেতৃত্বে একদল লাঠিয়াল বাহিনী প্রতিপক্ষের বাড়িতে হানা দিয়ে ভাঙচুরসহ তাণ্ডবলীলা চালায়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ঘটনায় সোনাইছড়ি গ্রামের আবদুস কুদ্দুস (৪৫), ফরিদুল আলম (৪৭) মো. হোসেন (২৫), মোঃ রনি (২১), মোহাম্মদ রাসেল (২২), সানা উল্লাহর ভাই ও জাফর আলম (৪৫)সহ অনেকে আহত হন বলে জানা গেছে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় বাসিন্দা আলী আহমদের ছেলে মমতাজ মিয়া, মৌলভী ইসলামের ছেলে সিরাজ উল্লাহ ও বদিউল আলমের ছেলে হাকিম আলীকে গ্রেফতার করে।

অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি আহমদ শরীফ কে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর স্ট্রোক করেন নান্নুর মা নুর নাহার বেগম।

তাৎক্ষণিক কোটবাজার অরজিন হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। নুর নাহার বেগম সোনাইছড়ি গ্রামের আলী হোসেনের স্ত্রী। পরিবারের অভিযোগ তিনি স্ট্রোক করে নাই। প্রতিপক্ষরা তাকে নির্যাতন চালিয়েছে। গ্রামবাসীরা জানান, পুত্র আহমেদ শরীফকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে তা সহ্য করতে না পারে মা স্ট্রোক করেন।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডাঃ মেরাজ হোসেন চয়ন বলেন, নুর নাহার বেগমের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নি। হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হতে পারে।

মামলার বাদী মোবারক হোসেন অভিযোগ করে বলেন হত্যাচেষ্টা মামলার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্ট্রোকে মারা যাওয়া নারী কি পুঁজি করে মিথ্যা মামলা সাজানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। অনেকের মতে পুলিশ কর্তৃক পুত্র আটকের ঘটনা সহ্য করতে না পেরে মা নুর নাহার বেগম স্ট্রোক করেন।

এ বিষয়ে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ সাহা বলেন, আলী হোসেনের ছেলে আহমদ শরীফ নিয়মিত মামলার আসামী। তাকে গ্রেফতার করে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন মৃত্যুর কারণ উদঘাটন জন্য মহিলার ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।