সংবাদদাতা:
মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়ায় পূর্ব শত্রুতার জের মিথ্যা অভিযোগ তুলে পরী বড়ুয়া (২৮) নামে এক গৃহবধূকে মারধর করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এই ঘটনায় পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে উল্টো ওই গৃহবধূর স্বামী বাবুটিকে মারধরও করিয়েছে। গত ২৮ মার্চ এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার বাবুটি বড়ুয়া এই অভিযোগ করেছেন। নির্যাতনের শিকার বাবুটি বড়ুয়া (৩৫) ওই এলাকার জিতেন্দ্র বড়ুয়ার ছেলে এবং কালারমারছড়া ইউনিয়ন বাস্তহারা লীগের সভাপতি।

নির্যাতনের শিকার বাবুটি বড়ুয়া জানান, গত ২৮ মার্চ সকালে চামা বড়ুয়া মেয়ে টিকলি বড়ুয়া বিদ্যুৎ মোটর চালিত টিউবওয়েলে গোসল করতে গেলে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে মোটর বন্ধ হয়ে গেলে টিকলি বড়ুয়া দাবি করেন বাবুটি বড়ুয়ার স্ত্রী পরী বড়ুয়া মোটরের বিদ্যুৎ সুইস বন্ধ করে দিয়েছেন। এই অভিযোগ করে তাকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকে টিকলি বড়ুয়া। গালিগালাজের এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হলে টিকলি বড়ুয়ার মা চামা বড়ুয়া ও বাবা অন্তসেন বড়ুয়া, স্বামী হিল্লোল বড়ুয়া, বোন সীমা বড়ুয়া (২১) মিলে লাঠি, দা, নিয়ে পরী বড়ুয়াকে মারতে যায়। তাদের এলোপাতাড়ি আঘাত সইতে না পেরে আত্মরক্ষার্ত্বে পরী বড়ুয়া দৌড়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। হামলাকারীরা তার ঘরের বারান্দার দরজার কুপিয়ে এবং লোহার রড় দিয়ে আঘাত করে দরজা ভেঙে ফেলে। এরপর পরী বড়ুয়া রুমের ভিতরে আশ্রয় নেয়। রুমের দরজা ভাঙতে না পেরে পরী বড়ুয়াকে না পেয়ে তারা বারান্দায় থাকা জিনিস পত্র ভেঙে ফেলে তাঁর স্কুল পড়ুয়া সন্তানের বই পুড়িয়ে দেয় এবং ঘরের টিন দা দিয়ে কেটে ফেলে।

বাবুটি বড়ুয়া জানায়, ঘটনার সময়ে বাবুটি বড়ুয়া বাড়ীতে ছিলেন না। ঘটনা পরে তিনি বাড়ীতে এসে হামলার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে অবগত করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে কালারমারছড়ার পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই কিশোর বড়ুয়া ও তাঁর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে এসে উল্টো বাবুটি বড়ুয়াকে আটক করে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে কারো কোনো বক্তব্য না নিয়ে, ঘটনা তদন্ত না করেই বাবুটি বড়ুয়াকে অমানবিক পেটায় এএসআই কিশোর বড়ুয়া। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পিটুনি তিনি মারাত্মক জখম হলে তাকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

নির্যাতনের শিকার বাবুটি বড়ুয়া অভিযোগ, তার প্রতিবেশী চামা বড়ুয়া পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অভিযোগে কালারমাছড়ার পুলিশ ক্যাম্পে ধরে নিয়ে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে ক্যাম্পে কর্মরত এএসআই কিশোর বড়ুয়া। এই পেটানোতে মহেশখালী থানায় কর্মরত এক পুলিশ কর্মকর্তার ইন্ধন রয়েছে। যার সাথে চামা বড়ুয়ার পরিবারের সম্পর্ক রয়েছে।
বাবুটি বড়ুয়ার পিতা জিতেন্দ্র বড়ুয়া জানান, বসতভিটার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বাবুটি বড়ুয়া ও চামা বড়ুয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিবাদ চলে আসছে। কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদেও স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে বেশ কয়েকবার সালিশ বিচার হয়েছে। প্রত্যেকটা সালিশ বিচারের রায় বাবুটি বড়ুয়ার পক্ষে মীমাংসা হওয়ায় চামা বড়ুয়া ও তাঁর স্বামী অন্তসেন বড়ুয়া মিথ্যা ভিত্তিহীন ভাবে ঘর চুরির অভিযোগ এনেও মামলা করেছিলেন। তদন্ত সাপেক্ষে সেই মামলার রায়ও তারা পান। সে পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিত ভাবে তাঁরপুত্র বধূ পরী বড়ুয়াকে চামা বড়ুয়া ও তার পরিবারের লোক জন হামলা করতে আসেন বলে জানান তিনি।

চামা বড়ুয়ার পরিবার পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়ে থানার পুলিশ কর্মকর্তার ইন্ধনে এএসআই কিশোর বড়ুয়াকে ব্যবহার করে বাবুটি বড়ুয়াকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের। এই নির্মম নির্যাতনের বিচার চান বাবুটি বড়ুয়ার পরিবার।
এদিকে টিকলি বড়ুয়াও আহত হয়েছেন দাবি করেছেন তার পরিবার। তাকেও আঘাত করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। তিনি বদরখালী জেনারেল হাসপাতালের নার্সের দায়িত্বে রয়েছেন।

শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া বাবুটি বড়ুয়া বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিত ভাবে আমার স্ত্রীকে মারধর এবং আমাকে শারীরিক নির্যাতনের পরে এখন তারা বিভিন্ন ভাবে আমাকে মামলা ও হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিজের নিরাপত্তা ও তাঁর উপর এমন শারীরিক নির্যাতনের তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার কামনা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কালারমারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মরত এএসআই কিশোর বড়য়া যুবক বাবুটি বড়ুয়াকে পেটানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, জমি বিরোধ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। ঘটনাটি মীমাংসের জন্য উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।