মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলা পুলিশ গত ৫ দিনে কক্সবাজার জেলায় প্রায় একহাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশ্বস্ত সুত্র সিবিএন-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সুত্র জানায়, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসজনিত সাধারণ ছুটিতে নিন্মআয়ের মানুষ, ভবঘুরে, নিঃস্ব, অসহায় পরিবার, অর্ধ্বাহারে-অনাহারে থাকা পরিবার, আত্মসমর্পণকৃত কারাগারে থাকা জলদস্যু ও অস্ত্রের শীর্ষ কারিগরের পরিবারকে এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গত ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।

খাদ্য সহায়তার মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে মোবাইল কল পেয়ে, বিভিন্ন সুত্রে জানতে পেরে করোনা ভাইরাসজনিত সংকটে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্যরা ১৪২ টি পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল, আলু, সোয়াবিন, পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর পেকেট পৌঁছে দেন।

পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) কক্সবাজার জেলার উদ্যোগে করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে খাদ্য সংকটে পড়া কক্সবাজার জেলার ৭৫০ জনকে পথশিশু, ভবঘুরে, দুঃস্থ, অসহায়, নিন্ম আয়ের মানুষ, নিরন্ন লোকজন ও গরীব মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সহ তৈরীকরা রাতের খাবার বিতরণ করা হয়। গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাত থেকে পুনাক এর এই মানবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতি রাতে ৩০০ নিরন্ন লোকজনকে তৈরীকরা রাতের এ খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম যতদিন মানুষকে বাড়ি ঘরে অবস্থানের সরকারি নির্দেশনা থাকবে ততদিন চলবে।

মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গত বছরের ২৩ নভেম্বর আত্মসমর্পণকৃত ৯৬ জন জলদস্যু ও শীর্ষ অস্ত্রের কারিগরের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার ২ এপ্রিল মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক টাইমবাজারে এ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

এ নিয়ে গত ৫ দিনে মোট ৯৯৩ টি পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী ও বিশুদ্ধ পানি সহ রান্নাকরা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া একইসময়ে জেলা পুলিশের উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণে মাস্ক ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এসব খাদ্য সহায়তা সরকারিভাবে প্রদত্ত কোন ত্রাণ সামগ্রী নয়। কক্সবাজার জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাঁদের ব্যক্তিগত অনুদান দিয়ে করোনা ভাইরাসজনিত বৈশ্বিক মহামারীতে খাদ্য সংকটে পড়া অসহায় মানুষের জন্য এ “করোনা সহয়তা তহবিল” গঠন করে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর।

এছাড়া, ভয়াবহ করোনা ভাইরাস সংকটে সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা চিকিৎসক, নার্স সহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মীদের রাতদিন ২৪ ঘন্টা জেলার সর্বত্র পরিবহন সুবিধা দেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কক্সবাজার জেলা পুলিশের ২০ সদস্য বিশিষ্ট কুইক রেসপন্স টিম-ও (সিআরটি) গঠন করা হয়েছে। এই মহাদুর্যোগে দ্রুত, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নাগরিক সেবা দিতে অপেক্ষাকৃত মেধাবী, চৌকস ও প্রশিক্ষিত পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এ টিম গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত জনসাধারণকে জরুরী সহায়তা প্রদান ও উদ্ধার কার্য পরিচালনার লক্ষ্যে এই টিমকে সার্বক্ষনিক স্টেনবাই রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবায় অভিজ্ঞতা আছে এমন সদস্য সহ অন্যান্যদের সমন্বয়ে ২০ সদস্য বিশিষ্ট এই টিম করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পিপিই, অন্যান্য সরঞ্জাম ও এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। কোন পুলিশ সদস্য বা জনসাধারণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ সহ তাকে আইসোলেশন বা হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করবে। এছাড়াও আইসোলেশন বা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের খাদ্য, ঔষধ ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছে দিবে। কেউ হোম কোয়ারান্টাইন না মানলে তাকে হোম কোয়ারান্টাইন নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করবে এ টিম। করোনা সংকটের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেলে টিমের ২০ সদস্য ছাড়াও আরো অতিরিক্ত ১০ জন পুলিশ সদস্যকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে টিমে যোগ দিতে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এই বহুমুখী মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) এর কাছ থেকে সিবিএন-এর পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য কারো দিকে থাকিয়ে না থেকে সর্ব্বোচ মানবিক দৃষ্টি দিয়ে এ করোনা ভাইরাস জনিত সংকটে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে নিরন্তর দায়িত্ব পালন করছেন। মাতা-পিতা, স্ত্রী-সন্তান, স্বজনদের কথা তারা অনেকটা ভূলে গেছেন, তাদের পরিবারকে কোন সময় দিচ্ছেন না। এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) আরো বলেন, যারা দিনের আয় দিয়ে সংসার চালাতেন, তারা এই করোনা ভাইরাস সংকটের আকস্মিকতায় ভয়াবহ বিপদের মুখে রয়েছেন। যারা খাদ্য সংকটে আছেন, তারা ভিক্ষুক নয়, হাতপাতার লোক নয়, তারা আকস্মিক পরিস্থিতির শিকার। তাই মানবিক গুনাবলী দিয়ে সকলকে এ সংকটে এগিয়ে আসার জন্য পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) আহবান জানান।

একই বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, জেলা পুলিশের সকল কর্মকর্তারা তাঁদের পরিবারের দৈনন্দিন ব্যয় সংকোচন করে নিজস্ব উদ্যোগে এ তহবিল গঠন করে এ মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই মহা সংকটে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে পেরে কক্সবাজার জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য গর্বিত।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজওয়ান আহমেদ বলেন, যতদিন দেশে সাধারণ ছুটি থাকবে ততদিন এ মানবিক কার্যক্রম সাধ্যমতো চালিয়ে যাওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা থাকবে। প্রয়োজনে আসন্ন ঈদুল ফিতর সহ আসন্ন প্রায় সকল ধর্মীয় উৎসবে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের পরিবারের ব্যয় সংকোচন করে এর অর্থ করোনা ভাইরাসজনিত সংকটে মানবিক উদ্যোগে ব্যয় করা হবে।

প্রসঙ্গত, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) এর সহধর্মিণী জেনিফার মাসুদ পদাধিকার বলে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন এর সহধর্মিণী ডা. সাদিয়া জামান হোসাইন জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রেজওয়ান আহমেদ এর সহধর্মিণী ফাতেমা হক জয়া আহমেদ জ্যেষ্ঠ সদস্য।