বিশেষ প্রতিবেদক:
টেকনাফর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড নাইপংপাড়ায় রেঞ্জারসহ বনবিভাগের লোকজনকে ২লাখ টাকা ঘুষ না দেয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের এক কর্মচারির নির্মাণাধীন ঘর গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় ওই কর্মচারির স্ত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। একই সাথে ইটসহ বাড়ির নির্মাণ সামগ্রীও লুট নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসিল্যান্ডকে পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মাণে ভুল তথ্য দিয়ে উপজেলা রেঞ্জার আশিক আহমদের নেতৃত্বে বনবিভাগের লোকজন এই ঘটনা ঘটা বলে অভিযোগ।

অভিযোগ মতে, কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মচারি আবদুর রহিম (নওমুসলিম) দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে টেকনাফ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড নাইটংপাড়ায় পরিবার নিয়ে বসতবাড়ি গড়ে বসবসা করে আসছিলেন। এর মধ্যে গাছ উপড়ে পড়ে তার বাড়ির ভেঙে গেলে গত একমাস আগে তিনি ইট নিয়ে পুনরায় বাড়িটি নির্মাণ করছিলেন। কিন্তু পুনরায় বাড়িটি নির্মাণ করতে গেলে বনবিভাগের উপজেলা রেঞ্জার আশিক আহমদের নামে বনবিভাগের লোকজন পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় আবদুর রহিম। তারপরও দফা দফায় বিভিন্নভাবে ঘুষ দাবি করতে থাকে বনবিভাগের লোকজন। এর মধ্যে বাড়ির কাজ অধিকাংশ সম্পন্ন হয়। তারপর ২লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। এই ঘুষ না দিলে নির্মাণাধীন বাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় উপজেলা রেঞ্জার আশিক আহমদ।

ভুক্তভোগী আবদুর রহিম অভিযোগ করেন, ১নং ওয়ার্ড নাইটংপাড়ায় খাস খতিয়ানে জায়গা হলেও বহু ঘরবাড়ি গড়ে উঠে সেখানে। অন্য সবার মতো আবদুর রহিমও সেখানে অল্প পরিমাণ জায়গা ঘর করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। ইতোমধ্যে ওই এলাকায় অধিকাংশ বাড়ি পাকাভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সামর্থ না থাকায় আবদুর রহিম এতোদিনর কুঁড়েঘরেই বাস করে আসছিলেন। কিন্তু ঘরটি গাছ উপড়ে পড়ে ভেঙে পড়ায় ছেলের দেয়া ও স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রি করে এবং নিজের গচ্ছিত কিছু টাকা দিয়ে ফাউন্ডেশন ছাড়াই ইট দিয়েই ঘরটি পুনরায় নির্মাণ করছিলেন আবদুর রহিম।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাড়ি নির্মাণ করতে রেঞ্জার ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তার দাবিকৃত ঘুষ না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এসিল্যান্ডকে পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মাণের ভুল তথ্য দিয়ে অভিযানে আনেন। ওই সময় বাড়িতে ছিলাম না। ক্ষুব্ধতার বশে রেঞ্জার আহমদ ও বনবিভাগের লোকজন আকস্মিক এসে আমার নির্মাণাধীন বাড়িটি চোখের পলকে গুড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে আমি এসে এসিল্যান্ডকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তিনি সদয় হন। এসময় বাড়ি আর না ভাঙতে মানা করলেও তা মানতে চায়নি রেঞ্জার। তবে চলে যাওয়া সময় ইটসহ নির্মাণ সামগ্রী জব্দ করে নিয়ে যায়। এসিল্যান্ডকে সদয় না হলে পুরো বাড়িটি গুড়িয়ে দিতো বলে জানা আবদুর রহিম।

আবদুর রহিম বলেন, আমার বাড়ির আশেপাশেও পাহাড় নেই। চারদিকে বসবাড়ি। এমনকি ১০টির বেশি পাকা বাড়িও রয়েছে। খাসখতিয়ানের জায়গায় হওয়ায় আমার কাছে ঘুষ দাবি করেন রেঞ্জারসহ বনবিভাগের লোকজন। ঘুষ না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এসিল্যান্ডকে ভুল তথ্য দিয়ে অভিযান চালায়। বনবিভাগের এই অন্যায় অভিযানে আমি চিরতরে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার সর্বস্ব শেষ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, অভিযানে সময় আকুতি জানাতে গেলে আমার স্ত্রী খুরশিদা বেগমকে গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রেঞ্জার। এতে তিনি আহত হয়েছেন। বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচু করা হয়েছে।

এদিকে বনবিভাগের এই অন্যায় অভিযানের প্রতিকার চাইলে উল্টো মামলা করার হুমকি দিচ্ছে রেঞ্জার। তবে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন, সরকারি দলের জেলা নেতৃবৃন্দ অবগত হলে তা নিয়ে তোলপাড় চলছে। সবাই রেঞ্জারের এই অমানবিক ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। এই ঘটনায় রেঞ্জারসহ জড়িত বনবিভাগের অন্যান্য লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঘুষ দাবির বিষয় অস্বীকার করে টেকনাফ উপজেলা রেঞ্জার আশিক আহদ বলেন, ‘আবদুর রহিম সরকারি পাহাড় কেটে পাকা বাড়ি নির্মাণ করতেছে। তা না করতে তাকে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও তিনি তা না মেনে বাড়ি নির্মাণ করে। তাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আইন মেনে এই বাড়িটি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সেখানে আরো পাকা বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রেঞ্জার বলেন, সেগুলো আগে করেছে। আমরা নতুন করে কাউকে আর সেখানে বাড়ি নির্মাণ করতে দিচ্ছি না।