প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুঃ
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে। সেই থেকে বাড়তে বাড়তে এখন সংখ্যা ৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু আমাদের দেশে শুরু থেকে এই মহামারি সুযোগ নিতে পারেনি তাই বাংলাদেশ সতর্ক হওয়ার সুযোগ পেয়েছে যা চীন আক্রান্ত হওয়ার পরপর অনেক দেশ পায়নি। গত ২২ দিনে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমান ৪৮ জনে স্থির আছে। আমি এই সংখ্যা নিতান্তই কম বলছিনা। একজন মানুষও আক্রান্ত হোক এটাও কারো কাম্য নয়। কিন্তু একথাও তো স্বীকার করতে হবে যে, যেখানে প্রতিমুহূর্তে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা রকেট গতিতে বাড়ছে সেখানে আমাদের দেশের মত কম সচেতন মানুষের দেশে এটা নিশ্চয় স্বস্থির বিষয়।

সরকার শুরু থেকে সিভিল প্রশাসন দিয়ে মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে। বিদেশ ফেরত এবং আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর চেষ্টা করেছে। এ কাজে সিভিল প্রশাসনকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সাহায্য করেছে। কিন্তু সামলানো যাচ্ছিলনা। শেষ পর্যন্ত ২৬ মার্চ থেকে রাষ্ট্র এবং জনগণের স্বার্থে সরকার ঘোষণা দিয়ে সামরিক বাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে বাধ্য হয়েছে। সেনাবাহিনী ঘরের বাইরে কাউকে পেলে কোনো কোনে স্থানে হাতে ফুল ধরিয়ে দিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছে, এখনো অ্যাকশন শুরু করেনি। অবশ্য সুযোগও নেই। এই ধরণের প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী সম্পৃক্ত করার সুফল হলো মানুষ তাদেরকে মাঠে দেখলে কিংবা দায়িত্ব পালন করতে দেখলে বিভিন্ন কারণে আরোপিত বিধি-নিষেধ মানতে বাধ্য হয়। কারণ এখন মানামানির বিষয়টা করোনা প্রতিরোধে একটা বড় ভূমিকা পালন করছে এবং করবে।

প্রশাসন দিন দিন কড়াকড়ি অবস্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। প্রয়োজনে আরো কঠোর হতে হবে। সরকার শ্রমজীবি শ্রেণীর মানুষগুলোকে খাবার যোগান দিয়ে সামলাতে পারলে কটা দিন আর কেউ ঘরের বাইরে যাবার দরকার খুব বেশি নেই। কেন মানতে চাচ্ছেননা তারা। কোনো কারণে কেউ যদি আক্রান্ত হয় তাহলে পরিবার, সমাজ, গ্রাম, এলাকা কেউ কাউকে কি আর গ্রহণ করতে চাইবেন? পাশে থাকবেন? এরিমধ্যে আমাদের এলাকায় কয়েকজন মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তারা কেউ করোনা আক্রান্ত ছিলেননা। কিন্তু সেখানে দেখলাম ৮-১০ জন ছাড়া আর কেউ নেই। অনেকটা মৃতদেহ কাধে নেওয়ার সংকট সৃষ্টি হওয়ার মত হয়েছে। পরিবারের কেউ কান্নাকাটি করলে করছেন নিরাপদ দুরত্বে থেকে।

জোর দিয়ে বলা যায় যে, সরকার শুরুথেকে সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল বলেই করোনা এখনো এখানে মহামারি আকার ধারণ করতে পারেনি। আর না হলে অসচেতনতার দিক দিয়ে তো আমরা কম নই। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে আমরা মানতে চাচ্ছিনা। যদি খারাপ কিছু হয়ে যায় তখন সব বিধি-নিষেধ মানতে বাধ্য থাকবো। তখন বলবো যে আগে জীবন বড়। আমরা এক বেলা খেয়ে থাকবো। তাহলে এখন একটু ধৈর্য্য ধারণ করতে পারছিনা কেন!

কিছু কিছু অবাধ্য শিশুরা যখন খেতে চায়না মা তখন খাবার নিয়ে তার শিশুর পেছনে পেছনে ঘুরতে থাকে। এটা সেটা কত কথা বলে তার শিশুকে খাওয়ায়। অথচ পেট ভরল শিশুর মায়ের নয়। আর কিছু কিছু শিশুকে ভয় লাগিয়ে খাওয়াতে দেখা য়ায়। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় শিশু যাতে মুখ খোলে গালে একটা হালকা চড় লাগিয়ে দেয়। তারপর খাবার খেতে শিশু বাধ্য হয়। অবশ্য এটা করা উচিত নয়। কিন্তু শিশুর ভাল এর জন্য ওই মায়ের আর কিছুই করার ছিলনা। তাই বলে কি ওই মা তার শিশুকে ভালোবাসেনা! ভালোবাসেতো!

লেখকঃ সভাপতি, কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ। সম্পাদক, আমাদের রামু ডটকম।