মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত কক্সবাজারের একমাত্র রোগী করোনা জীবাণু মুক্ত হওয়ায় এবং এ রোগীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আরো ৬ জনের দেহের স্যাম্পল পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাস জীবাণু না পাওয়ায় কক্সবাজারে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

সৌদী আরব থেকে উমরাহ হজ্জ করে এসে কক্সবাজারের খুটাখালীর দক্ষিণ পাড়ার ৭৮ বছর বয়স্কা জনৈকা মহিলাকে গত ১৮ মার্চ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করানো হয়। গত ২২ মার্চ মহিলাটির চিকিৎসকেরা তার শরীরের স্যাম্পল সংগ্রহ করে করোনা ভাইরাস টেস্টের জন্য ঢাকার আইইডিসিআর ল্যাবে পাঠিয়ে দেন। গত ২৪ মার্চ টেস্ট রিপোর্ট আসলে সেখানে তার শরীরে করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়ে। এখান থেকে শুরু হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কক্সবাজার জেলাবাসীর চরম অস্থিরতা। এনিয়ে গণমাধ্যম সরব হয়ে যায়। করোনা আক্রান্ত মহিলার বৃহত্তর পরিবার ও স্বজনদের মাঝে নেমে আসে অন্ধকারের ঘনঘটা। স্বজনদের অনেকেই ঢা ঢাকা দিতে থাকে।

পরে মহিলাটির অবস্থান করা কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ টেকপাড়া ও সিকদার মহলের পাশ্ববর্তী পল্লবী লেইন এবং সেখানে ২ টি বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়। এছাড়া উক্ত মহিলা অবস্থান করেছিলো বলে চট্টগ্রাম শহরের ২ টি বাড়ি ও মহিলার খুটাখালীর বাড়িটিও লকডাউন করে দেওয়া হয়।

এ অবস্থায় হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়-কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ৬ জন নার্স, ৩ জন ক্লিনারকে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে উক্ত মহিলার সন্তান, স্বজন ও তাদের সংস্পর্শে আসা প্রায় একশ’ লোককে হোম কোয়ারান্টাইনে চলে যেতে হয়। এসব তৎপরতা নিয়ে কক্সবাজারে জনমনে চরম আতংক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ভাবতে থাকে, কখন জানি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছি।

পরে কক্সবাজারে করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত জনৈকা মহিলা রোগীর চিকিৎসায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে জড়িত থাকা কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরীরের স্যাম্পল টেস্ট করে তাদের শরীরে কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়েনি। চিকিৎসক ৩ জন হলেন-ডা. মো. ইউনুস, ডা. আবু মোঃ শামসুদ্দিন ও ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান। এ ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্যাম্পল টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট ২৭ মার্চ ঢাকার আইইডিসিআর থেকে পাওয়া যায়। আবার ডা. মো. ইউনুসের সহধর্মিণী সাদিয়া আফরিন হচ্ছেন, নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও। ইউএনও সাদিয়া আফরিনও ২৪ মার্চ পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাকে লকডাউন করে দিয়ে নিজেই হোম কোয়ারান্টাইনে চলে যান।নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বান্দরবান জেলা প্রশাসনের একজন সহকারী কমিশনারকে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও এর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মহিলার সন্তান ও হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা এডভোকেট হেফাজতুর রহমান ও তার সহধর্মিণী নার্গিস জান্নাতের একটু সর্দি কাশি হওয়ায় গত ২৮ মার্চ তারা ২ জনের শরীরের স্যাম্পল কালেকশান করে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআর ল্যাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গত ৩০ মার্চ তাদের টেস্ট রিপোর্ট আসলে তাদের শরীরেও কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু পাওয়া যায়নি।

শনিবার ২৮ মার্চ সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কক্সবাজার সদর হাসপাতালে উক্ত মহিলার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকাস্থ উত্তরায় অবস্থিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেফার করেন জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে উক্ত মহিলার দ্বিতীয় দফায় করোনা ভাইরাস টেস্ট করা হয়। ৩১ মার্চ প্রাপ্ত দ্বিতীয় টেস্ট রিপোর্টে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মহিলা রোগীর দেহে করোনা জীবাণু পাওয়া যায়নি। ফলে কক্সবাজার জেলায় আর কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগী থাকল না।

সবচেয়ে আশার বিষয় হলো-করোনা জীবাণুমুক্ত উক্ত মহিলার কন্যা সাফিয়া বেগম গত ১৮ মার্চ থেকে একটানা ৩১ মার্চ অর্থাৎ এখনো পর্যন্ত তার মায়ের সেবায় নিরবচ্ছিন্নভাবে নিয়োজিত আছেন। ১৮ মার্চের আগেও সাফিয়া বেগম তার মায়ের সাথে সময় কাটিয়েছেন। সে সাফিয়া বেগমের আইইডিসিআর ল্যাবে করোনা ভাইরাস টেস্ট করে ৩০ মার্চ প্রদত্ত তার রিপোর্টে কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু তার দেহে পাওয়া যায়নি। এছাড়া করোনা ভাইরাস জীবাণু মুক্ত হওয়া উক্ত মহিলার সফরসঙ্গী হিসাবে সৌদী আরব যাওয়া তার কনিষ্ঠ সন্তান ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হারুনর রশিদও পুরোপুরি সুস্থ আছেন বলে তার পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে।

এদিকে, উক্ত মহিলার দ্বিতীয়বার করোনা ভাইরাস টেস্ট রিপোর্ট, ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের টেস্ট রিপোর্ট, মহিলার সন্তান এডভোকেট হেফাজতুর রহমান ও তার সহধর্মিণীর টেস্ট রিপোর্ট ও টানা ১৪ দিন মায়ের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে থাকা সাফিয়া বেগমের টেস্ট রিপোর্টে করোনা ভাইরাস নেগেটিভ হওয়ার খবরে কক্সবাজারে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ২৪ মার্চ ছিলো মহিলার করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়ার খবর “ট্ক অব দ্যা কক্সবাজার”। একইভাবে
উক্ত মহিলা করোনা রোগী ও তার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আরো ৬ জনের দেহে করোনা ভাইরাস জীবাণু না পাওয়ার খবরও ৩১ মার্চ বিকেল থেকে “টক অব দ্যা কক্সবাজার।”

এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে ৩১ মার্চ শেষ বিকেলে একটি পোস্ট দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

এদিকে, সাফিয়া বেগম সিবিএন-কে জানান, তার মায়ের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হওয়ায় চিকিৎসকেরা তার মাকে আগামী ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল থেকে রিলিজ করার আভাস দিয়েছেন।