মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

ঢাকাস্থ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের কেবিনে চিকিৎসাধীন কক্সবাজারের একমাত্র করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগীর শরীর এখন আর করোনা ভাইরাস জীবাণু নেই। দ্বিতীয়বার তার করোনা ভাইরাস টেস্ট করে টেস্ট রিপোর্টে কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু পাওয়া যায়নি বলে ৩১ মার্চ বিকেল ৪ টায় কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আইইডিসিআর এর বরাত দিয়ে রোগীর স্বজনদের জানিয়েছেন।

কক্সবাজারের খুটাখালীর দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা ৭৮ বছর বয়স্কা উক্ত করোনা রোগীর সাথে থাকা তাঁর কন্যা সাফিয়া বেগম সিবিএন-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাফিয়া বেগম আরো বলেন, তার মায়ের স্যাম্পলের সাথে তার নিজের স্যাম্পলও সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ ল্যাবে টেস্ট করে কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু পাওয়া যায়নি। সাফিয়া বেগম ও তার মায়ের করোনা টেস্ট রিপোর্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নেগেটিভ। এছাড়া সাফিয়া বেগমের ভাই হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা এডভোকেট হেফাজতুর রহমান ও তার স্ত্রী নার্গিস জান্নাতের করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় তাদের শরীরেও কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু পাওয়া যায়নি।

সাফিয়া বেগম আরো জানান, তার মায়ের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হওয়ায় চিকিৎসকেরা তার মাকে আগামী ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল থেকে রিলিজ করার আভাস দিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের ৬ নম্বর ব্লকের ৩০৭/৩০৬ নম্বর কেবিনে তার মায়ের সমন্বিত চিকিৎসা চলছে।
গত ৩ দিনের চিকিৎসায় তার মায়ের ডায়রিয়া, এজমা সহ অন্যান্য রোগের প্রভাব অনেক কমে এসেছে। স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে আশানুরূপ।

শনিবার ২৮ মার্চ সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তার মায়ের স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতি হলে তার মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাস্থ উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রেফার করেন জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকায় সরকারিভাবে যে ১১ টি হাসপাতালকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসা সেবায় শীর্ষে রয়েছে।

এদিকে, কক্সবাজারে করোনা রোগীর প্রথমবারের করোনা ভাইরাস টেস্ট রিপোর্ট ভুল এসেছে বলে রোগীর স্বজনেরা আগে থেকে ধারণা করে আসছিলো। দ্বিতীয়বার করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় উক্ত মহিলার শরীরে করোনা ভাইরাস জীবাণু নাপাওয়ায় রোগীর স্বজনদের সেই ধারণা আরো দৃঢ় হলো। এছাড়া গত ১৪ দিন ধরে মায়ের সাথে থাকা সাফিয়া বেগম ও করোনা ভাইরাসমুক্ত রোগীর অন্যান্য স্বজনদের শরীরেও কোন করোনা ভাইরাস জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ ফেব্রুয়ারী সৌদী আরবে উমরাহ হজ্জ করতে যান উক্ত করোনা রোগী। গত ১৩ মার্চ মহিলাটি তার সন্তান ব্যাংকার হারুনর রশিদ সহ দেশে ফেরেন। পরে মহিলাটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিদেশ থেকে আসার বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রেখে তাকে ১৮ মার্চ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২২ মার্চ মহিলাটির চিকিৎসকেরা তার শরীরের স্যাম্পল সংগ্রহ করে টেস্টের জন্য ঢাকার আইইডিসিআর ল্যাবে পাঠিয়ে দেন। গত ২৪ মার্চ টেস্ট রিপোর্ট আসলে সেখানে তার শরীরে করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়ে। পরে গত ৪ দিন যাবৎ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মহিলাটিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে রেখে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করতে না পেরে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকায় রেফার করেন।