বিদেশ ডেস্ক:
স্পেনে করোনাভাইরাস মহামারির গতি কমতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছেন দেশটির এক মন্ত্রী। সোমবার (৩০ মার্চ) দেশটিতে নতুন করে ছয় হাজার চারশো জন আক্রান্ত হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একদিনে এটাই সর্বনিম্ন আক্রান্তের সংখ্যা। এমন প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করেছে।

ইউরোপের দেশ স্পেনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ হাজার ছাড়িয়েছে। সোমবার নতুন করে ৮১২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে সাত হাজার ৩৪০ জনে। ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে অপরিহার্য নয় এমন কর্মীদের আরও দুই সপ্তাহ বাড়িতে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে দেশটি। এদিকে করোনা মহামারি মোকবিলায় নেতৃত্ব দেওয়া দেশটির এক চিকিৎসক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঞ্চা গঞ্জালেস বলেছেন, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করেছে। কর্মকর্তারা আশা করছেন মহামারির চূড়ান্ত পর্যায় চলে আসছে। তারপরই নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমতে শুরু করবে। দেশটির কাতালোনিয়া অঞ্চল ও রাজধানী মাদ্রিদ সবচেয়ে বেশি উপদ্রুত হয়েছে।

করোনাভাইরাসের মহামারিতে গত ১৪ মার্চ থেকে দেশটিতে প্রায় পুরোপুরি লকডাউন চলছে। বাসিন্দারা কেবলমাত্র কাজ, অপরিহার্য খাবার ও ওষুধ ক্রয় বা স্বজনদের দেখভালের জন্য বাইরে বের হওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মারিয়া জোসে সিয়েরা বলেছেন, এই বিধিনিষেধ আরোপের পর থেকে দৈনিক আক্রান্তের প্রবণতায় বদল আসে। তিনি জানান, গত ২৫ মার্চ থেকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১২ শতাংশ বাড়ছে। তবে এর আগে এর পরিমাণ ছিলো প্রায় ২০ শতাংশ। এবার বিধিনিষেধ আরও কঠোর করে সময়সীমা আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অপরিহার্য নয় এমন সব কর্মকাণ্ড নাগরিকদের বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঞ্চা গঞ্জালেস বিবিসিকে বলেছেন, করোনা মহামারিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের সংকট স্পেনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সোমবার থেকে আরোপ করা বিধিনিষেধ ভাইরাসটির বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। মহামারি ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য স্পেনকে দায়ী করা অন্যায় হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রেও অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে করোনার মহামারি মোকাবিলায় স্পেনকে নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক ডা. ফার্নান্দো সিমন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মারিয়া জোসে সিয়েরা জানিয়েছেন, মহামারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন ওই চিকিৎসক।
করোনা মহামারিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার মাদ্রিদে এক নিরবতা পালন করা হয়
করোনা মহামারিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার মাদ্রিদে এক নিরবতা পালন করা হয়

মহামারিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার দুপুরে রাজধানী মাদ্রিদে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়েছে। এই মহামারিতে ইতালির পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে স্পেনে।

ইউরোপের অন্য দেশগুলোর পরিস্থিতি কেমন?

স্পেন ও ইতালির মতো প্রাণঘাতী মহামারি এখন পর্যন্ত এড়াতে সক্ষম হয়েছে জার্মানি। তবে সোমবার দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে চার হাজার ৭৫১ জন বেড়েছে। এনিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৫৪১ জন।

স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বিস্তৃত হওয়ায় ইউরোপের অনেক দেশের চেয়ে বেশি সংখ্যক গুরুতর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারবে জার্মানি। সেকারণে সোমবার ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহর থেকে আরও বেশ কিছু রোগীকে হেলিকপ্টারে করে জার্মান হাসপাতালে আনা হয়েছে।

রাশিয়ায় মহামারি ঠেকাতে রাজধানী মস্কোর এক কোটি ২০ লাখ বাসিন্দাকে লকডাউনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। অস্ট্রিয়াতে দোকানের অভ্যন্তরে ক্রেতাদের মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর হাঙ্গেরিতে মহামারি ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের ক্ষমতা বাড়াতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, আইনটিতে বাক স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে।