আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মাত্র একজন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে ১৯ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তত ২০টি গ্রামের ৪০ হাজার মানুষকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

সম্প্রতি পাঞ্জাবে ৭০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যান। পরে নমুনা পরীক্ষায় জানা যায় তিনি করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন। পাঞ্জাবের শীর্ষ কর্মকর্তা অরবিন্দ চাবরা বিবিসিকে বলেন, জার্মানি এবং ইতালি ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরার পর ধর্মপ্রচারক ওই ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের সেই নির্দেশ তিনি উপেক্ষা করেন। ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬৩ এবং মারা গেছেন ২০ জন। আক্রান্তদের ৩০ জনই পাঞ্জাবের বাসিন্দা।

তবে দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা এই সংক্রমণের সংখ্যা সরকারিভাবে যা জানানো হচ্ছে; তার কয়েকগুণ বেশি। বিশ্বে করোনাভাইরাসের সর্বনিম্ন পরীক্ষা করার রেকর্ড এই মুহূর্তে ভারতের; যদিও পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে দেশটি।

১৩০ কোটি মানুষের এই দেশটিতে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ইতালিফেরত ওই ধর্মপ্রচারকের নাম বলদেব সিং। মৃত্যুর আগে আগে তিনি শিখ সম্প্রদায়ের মহাউৎসব হোলা মহল্লায় অংশ নেন। এই উৎসবে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে; অংশ নেন পাঞ্জাবের হাজার হাজার মানুষ।

ছয়দিনের এই উৎসবের প্রত্যেকদিন গড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর এই ধর্মপ্রচারকের ১৯ স্বজনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়।

পাঞ্জাবের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, এই ধর্মপ্রচারকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে এসেছিলেন এমন ৫০০ জনকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি যে এলাকায় বসবাস করতেন তার আশপাশের ১৫টি গ্রাম আমরা সিলগালা করে দিয়েছি। এছাড়া পাশের জেলার আরও পাঁচটি গ্রামও সিলগালা করা হয়েছে।

তবে ভারতে এটিই প্রথম গণ-কোয়ারেন্টাইনের ঘটনা নয়। এর আগে দেশটির উত্তরাঞ্চলের রাজস্থান প্রদেশের ভিলওয়ারা এলাকায় এমন গণ-কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। সেখানে একজন রোগীর মাধ্যমে কয়েকজন চিকিৎসক করোনায় সংক্রমিত হন। পরে তাদের মাধ্যমে আরও শত শত মানুষের মাঝে এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ঘটনার পর ভিলওয়ারার কয়েকটি গ্রামের সাত হাজার মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভারতে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই লকডাউনের সময় শুধুমাত্র জরুরি ওষুধ এবং খাদ্য-সামগ্রী কেনার জন্য বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন দেশটির নাগরিকরা।