বলরাম দাশ অনুপম :
করোনার প্রভাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারনে ভরা মৌসুমেও একেবারেই পর্যটক শুন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। পাশাপাশি ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের বন্ধসহ টানা সাপ্তাহিক বন্ধের সময়ে পর্যটন শহরের প্রায় চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজসহ কটেজ গুলিতে যে বুকিং ছিল তাও পুরোদমে বাতিল হয়ে যাওয়ায় চরম হতাশ পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসায়ীরা। বলতে গেলে হাহাকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে পর্যটন শহরে। এই পরিস্থিতির কারনে একদিকে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা। অন্যদিকে বিশাল অংকের রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, পর্যটন এলাকা হিমছড়ি, দরিয়া নগর, সৈকতের সী-গাল পয়েন্ট, মোটেল শৈবাল মোড়, বালিকা মাদ্রাসাসহ আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সৈকত একেবারেই পর্যটক শূন্য। কোথাও একজন পর্যটক কিংবা স্থানীয় লোক দেখা যায়নি। সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ের সাথে হা হা করছে পুরো সৈকতের দীর্ঘ বালিয়াড়ি আর ঝাউবাগান। পাশাপাশি সৈকতের একেকটি পয়েন্টে ৪০/৫০টি কিটকট (ছাতায়) পর্যটকদের বসার জন্য জায়গা দিতে পারতনা ব্যবসায়ি। সেখানে এখন এই কিটকটগুলো খালি পড়ে আছে। আর কিছু স্থানে কিটকটও তুলে ফেলেছে ব্যবসায়িরা। কিটকট ব্যবসায়ি মোঃ হোসেন বলেন, কক্সবাজার জনমানব শূন্যের পাশাপাশি সব কিছুই শূন্য হয়ে গেছে। সৈকতে ধু ধু বালুচর ছাড়া কিছুই নেই। যে কটি কিটকট রেখেছিলাম তাও তুলে ফেলেছি। তিনি আরো বলেন, যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা মহান আল্লাহ কখনো অতীথে আর দেখাইনি। পর্যটন এলাকার কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে কক্সবাজার পর্যটন আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বর্তমানে পর্যটক শূন্য। হোটেল কর্মচারিরা অলস জীবনযাপন করছে। প্রতিদিন খরচের খাতা ভারি হলেও আয়ের খাতায় একেবারেই জিরো। পর্যটন এলাকার করাই রেস্তুরেন্ট এর মালিক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। অন্যান্য বছর এই সময়ে পর্যটকের ভিড় থাকত কক্সবাজারে। কিন্তু করোনার কারনে পরিস্থিতি উদাহরণ বিহীন। দেশে রাজনৈতিক নানা আন্দোলন সংগ্রামসহ অনেক সংকটময় পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি জন্মের পর পর্যটন শহরে প্রথমবার দেখলাম। এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারনে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নেয়া উদ্যোগের ফলে একেবারেই পর্যটন শূন্য হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের দাবী, যারা ব্যাংক থেকে বা বিভিন্ন এনজিও থেকে সুদে টাকা নিয়ে ব্যবসা করছে তাদের সকল কিস্তি দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মওকুফ করার আবেদন জানান। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, করোনার প্রভাব কমাতে সরকার সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। এর পর কিছু কিছু অতি উৎসাহী পরিবারের লোকজন দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরতে কক্সবাজার আসতে দেখা গেছে। এগুলো ধামাতে এবং জনসমাগম কমাতে পর্যটন শহর কক্সবাজারে পর্যটক আগমন এবং সৈকত ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।