মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

প্রায় ৭০ বছর বয়সী যে মহিলার শরীরে ২৪ মার্চ করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়েছে, তার বাড়ি চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়ায়। তার স্বামীর নাম-মৃত রশিদ আহমদ। উক্ত মহিলার ৫ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তানসহ অনেক নাতিপুতি রয়েছে। সন্তানেরা সকলেই বিবাহিত। কোরানা ভাইরাস আক্রান্ত মহিলা তার কনিষ্ঠ সন্তান, যিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। সে সন্তান হারুনর রশিদকে নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী সৌদি আরবে পবিত্র ওমরা হজ্ব পালন করতে যান। তারা সৌদি আরবে অবস্থানকালে সেখানে করোনা ভাইরাস (COVID-19) ভয়াবহ আকারে বিস্তার লাভ করে।

কোরানা ভাইরাস আক্রান্ত মহিলা ও তার কনিষ্ঠ সন্তান গত ১৩ মার্চ দেশে এসে তার সফরসঙ্গী হওয়া সন্তানের চট্টগ্রামের চান্দগাও আবাসিক এলাকার বাসায় উঠেন। সেখান থেকে তিনি কক্সবাজারের খুটাখালী দক্ষিণ পাড়ায় নিজের বাড়িতে আসেন। খুটাখালী দক্ষিণ পাড়ায় ক’দিন থেকে তিনি কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ টেকপাড়ায় কচ্ছপিয়া পুকুরের উত্তরে তার আরেক সন্তানের শ্বশুরবাড়ী খোরশেদ ভবন (সাবেক এনএসআই অফিস) সংলগ্ন একটি বাড়িতে উঠেন। সেখানে একদিন থেকে শহরের সিকদার মহল সংলগ্ন পল্লবী লেইনের একটি গলিতে আরেক আত্মীয়ের ভাড়াবাসায় উঠেন। চিকিৎসকদের ধারণা মতে, সৌদী আরব থেকে করোনা ভাইরাস (COVID-19) জীবাণু বহন করে আসা মহিলাটি গুরতর অসুস্থ হলে তাকে গত ১৮ মার্চ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানোর আগে ও পরে তার স্বজনেরা উচ্চ শিক্ষিত হয়েও তিনি যে সদ্য সৌদি আরব ফেরত, সে বিষয়টি গোপন করেন। পরে মহিলাটির রোগের ধরন ও লক্ষণে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মনে করে তার শরীরের স্যাম্পল টেস্ট করতে ঢাকার আইইডিসিআর এর ল্যাবে পাঠানো হয়। ল্যাবের রিপোর্টে উক্ত মহিলার শরীরে করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত বলে ২৪ মার্চ সকালে নিশ্চিত হওয়া যায়।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মহিলার ৫ সন্তান, কন্যার জামাইরা সকলে কর্মজীবী। তাদের একজন সৌদী আরবে মায়ের সাথে ওমরা হজ্ব পালন করছেন। তারা স্বপরিবারে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মহিলাকে দেশে ফেরার পর নিয়মিত সেবা করেছেন। তারা আবার প্রত্যেকে নিয়মিত নিজ নিজ কর্মস্থলে গিয়েছেন। উক্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মহিলার আত্মীয় স্বজনও তিনি একজন বয়স্ক মুরব্বি ও অসুস্থ হিসাবে ওমরা হজ্ব করে আসার পর দেখতে গেছেন। এরকম কক্সবাজার শহরেরও উক্ত মহিলার অনেক আত্মীয় স্বজন বাসা ও হাসপাতালে তাকে অহরহ লোক দেখতে গিয়ে তার সরাসরি সংস্পর্শে গেছেন ।

কিন্তু মহিলাটির শরীরে করোনা ভাইরাস (COVID-19) জীবাণু ধরা পড়ার পর শুধুমাত্র কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ টেকপাড়া পাহাড়তলী রোডের কচ্ছপিয়া পুকুরের মোড় হতে পশ্চিমে খোরশেদ ভবনের সামনে হয়ে পল্লবী লেইন লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। মঙ্গলবার ২৪ মার্চ বেলা আড়াইটার দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ উল্লাহ মারুফের নেতৃত্বে এলাকাটি লকডাউন ঘোষনা করে লাল পতাকা, ব্যানার টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া মহিলাটি চট্টগ্রামে যে বাসায় অবস্থান করছিলো সে বাসাটি এবং খুটাখালীর বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, শুধুমাত্র উক্ত মহিলার সন্তান ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন। এছাড়া কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ১২ জন চিকিৎসক, ৬ জন নার্স এবং ৩ জন ক্লিনারকে হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু যেসব লোক মহিলাটির সংস্পর্শে গেছে এবং আবার সংস্পর্শে যাওয়া মানুষের যারা সংস্পর্শে গেছে তারা কি এখন নিরাপদ। আবার ওনাদের জন্য সাধারণ মানুষ কি নিরাপদ?
এ বিষয়ে করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় জড়িত একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক সিবিএন-কে বলেছেন, যারা সামান্যতম মহিলাটি অথবা সংস্পর্শে যাওয়া মানুষের সংস্পর্শে গেছে, তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা উচিত। হোম কোয়ারান্টাইন না মানলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে পাঠানো দরকার। নাহয়, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মহিলাটির সংস্পর্শে যাওয়া লোকজনের শরীরে করোনা ভাইরাস জীবাণু ধরা পড়ার আশংকা রয়েছে। তখন অবস্থা ভয়াবহ আকারও ধারণ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন উক্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসক। তাঁরমতে, এজন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মহিলাটির সংস্পর্শে যাওয়া লোকজনকে খুঁজে বের করতে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজের সর্দার, মহিলাটির আত্মীয় স্বজন, স্থানীয় লোকজনের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ বিষয়টি তিনি কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।