আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া:
মালয়েশিয়ায় তীব্র হয়ে উঠছে করোনাভাইরাসের আক্রমণ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৫৩ জন। শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নতুন আক্রান্তের কথা জানানো হয়েছে। ফলে মালয়েশিয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮৩ জনে। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে ১১৪ জন।

সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সাধারণ জনগণ কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। দেশটিতে চলছে লকডাউনের ৪র্থ দিন। রাস্তা-ঘাটে নেই কোনো জনসমাগম। সুনসান নীরবতা। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে বলা হয়েছে। রেস্টুরেন্টে বসে কেউ খাবার খেলে তাকে তাৎক্ষণিক এক হাজার জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের আইন করা হয়েছে।

মালয়েশিয়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক দেখা গেছে, দিনরাত দেশটির পুলিশ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে আবার প্রয়োজনে আটক ও জরিমানাও করছে। এ পর্যন্ত কতজন আটক হয়েছে তা জানা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশকে সহযোগিতা করতে রোববার থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নামছে।

স্টার অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৪৮ জন গতমাসে কুয়ালালামপুরে একটি মসজিদে তাবলিগ জামাতে অংশ নিয়েছিলেন। ওই ধর্মীয় আয়োজনে ১৬ হাজারের মতো মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৬৭০ জন মালয়েশিয়ার ওই তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।

এদিকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ঠেকাতে দেশটিতে বসবাসরত দুই হাজার রোহিঙ্গাকে পরীক্ষার জন্য খুঁজছে মালয়েশিয়া। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুয়ালালামপুরে এক তাবলিগ জামাতে অংশ নিয়েছিলেন এই রোহিঙ্গারা। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে করোনা বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে এই তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়া মানুষদের মাধ্যমে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ায় পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এখনও তারা দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত হয়।

ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, লক্ষণ দেখা গেলেও তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গারা কোভিড-১৯-এর পরীক্ষা করাতে চাইবেন না। মালয়েশিয়ার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার জানিয়েছেন, তারা দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে যাতে সব শরণার্থী ও আশ্রয় প্রার্থীরা সরকারের করোনা মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত হয়। সংস্থার পক্ষ থেকে কোভিড-১৯-এর জন্য রোহিঙ্গা ভাষায় হটলাইন চালু করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের সন্ধানে মালয়েশিয়ার উদ্যোগ প্রমাণ করে বৈধ কাগজপত্রহীন ও সরকারের অগোচরে বসবাসকারীদের মধ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের বরাতে খবরে বলা হয়েছে, ওই তাবলিগ জামাতে ১৬ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। রোহিঙ্গা ছাড়াও অন্য শরণার্থী ও অবৈধ অভিবাসীরা এতে অংশ নেন। ধারণা করা হয়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের দেড় হাজার মানুষও এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ৬৭০ জন মালয়েশিয়ার ওই তাবলিগ জামাত সংশ্লিষ্ট।