তানভিরুল মিরাজ রিপন

বার্ট্রান্ড রাসেলের একটি বই আছে ‘মানুষের কোনো ভবিষ্যত আছে? ‘ এমন একটি বইয়ে মূলত পারমানবিক অস্ত্রের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক যে উদ্যোগ সেটাকে ওঁনি দারুণভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুহুর্তে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে যখন একের পর এক হুমকি ধামকি চলছে তখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিজ্ঞানীরা চিঠি দিয়েছিলেন সেটা তিনি খোলেও দেখেননি। রাজনীতিবিদেরা ভাবেন যে বৈজ্ঞানিকেরা ল্যাবের মানুষ দুনিয়া বোঝেন না। অথচ আইনস্টাইনের লেখা পড়েছিলাম ‘ আমি কেনো সমাজতন্ত্র চাই’ শিরোনামে ‘যুদ্ধ কেনো ‘ শিরোনামে ফুকোকে লেখা আইনস্টাইনের চিঠিও আমি পড়েছি। সে বইয়ে তিনি যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরে তার প্রতি ধিক জানিয়েছেন। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী বেড়েছে। সারাবিশ্বে এখন থমথমে অবস্থা। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতে আছে বলেই জাতিসংঘ জোর প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে। বাংলাদেশ এই বেল্টের একটি জনবহুল দেশ। সারাবিশ্ব কভিড-১৯ প্রস্তুতি নিচ্ছে। চায়না থেকে ছড়িয়ে এখন এ ভাইরাস পুরো বিশ্বব্যাপী। ইতালি,ইরানে প্রত্যেকদিন রেকর্ড সংখ্যক মানুষ মরছে।

পুরো বিশ্ব রাজনীতির কাছে কাবু করে রেখে, ক্ষমতাই যেনো মহান কিছু এ অবস্থাতে ছিলো। এখন এমন এক সময়ে আমরা আছি যেখানে মানুষ প্রকৃতির কাছে সম্পূর্ণ অসহায়।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক গবেষক বলেছেন, একজন গবেষক মাসে যা আয় করে তা একজন খেলোয়াড় সেকেন্ডে আয় করে। হাসপাতাল গুলোকে সমৃদ্ধ , গবেষণাকে উৎসাহিত না করে স্টেডিয়াম আর দিনের পর দিন শিল্পায়ন নিয়ে ভাবছে। বলুন আপনার সুস্থতা দিতে তাঁদের, এখন কেনো গবেষদের প্রয়োজন। ‘ বিষয়টি খুব ভাববার।বাংলাদেশের করুণ অবস্থা হবে সে আশা আমি করছি না। তবে আমাদের নিজেদরে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন ২ বছরের প্রস্তুতি নিতে হবে। রাসেল তার এক প্রবন্ধে বলেছিলেন মানুষ আবার ফিরে যাবে আগের অবস্থানে, আগের আদিমতম সমাজে। আমার পর্যবেক্ষণও তাই বলে, মানুষ আদৌও ভবিষ্যত আছে কি না তা নিয়ে আমারও সংশয়।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যখন চলছে আমরা কেউই মানুষগুলো পাশে দাড়াচ্ছি না। আমরা দাড়াচ্ছি টাকার জন্য,আমরা বলছি টাকার জন্য। এ গরিব দেশটির মানুষগুলোর পকেট কাটার জন্য। ভেবেছি, ভেবে আমি একা পথে নেমে চারদিন ধরে মানুষকে সেবা দিচ্ছি। অনেক কথা শুনেছি, আমি তথ্যও জোগাড় করেছি, মানুষের কথাগুলো শুনার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। কষ্ট হয়, আমি দেশের নাগরিক নই,আমার নাগরিক দ্বায়িত্ব নেই! নেই বলব না, আছে আমার নাগরিক দ্বায়িত্ব। কিন্তু মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাড়ানোর দ্বায়িত্বও আমার আছে। তাই দাড়িয়ে তিনদিনে প্রায় ২০ হাজার মানুষের হাত অন্তত ২ মিনিট জীবানুমুক্ত রেখেছি। তা দেখে অনেকে মানুষের পাশে দাড়াচ্ছেন, তাও আনন্দের।

গতকাল যখন রাস্তার পাশে বসে থাকা ভিক্ষুকদের হাতে হেক্সিসল দিচ্ছি তাঁরা কত আনন্দিত হয়েছে।তা দেখে আবেগে চোক জ্বলজ্বল করছে, পানি পড়ছে। তারা বাঁচতে চাইছেন, শুধু সুযোগ সহানুভূতি দেখিয়ে তাদের পাশে আমরা কেউ দাড়াচ্ছি না।

আমি একজন ছাত্র,গণমাধ্যম কর্মী,একজন ফ্যাকাল্টি,একজন বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ফেলো। আমার সব পরিচয়ের রং ছোট হয়ে আসে, ফিকে হয় যখন আমি মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকি।

দেশটা আমারও, পরিবেশটাও আমার। মানুষের পাশেও থাকতে হবে আমাকে।