এম,ডি, ম্যাক্স :

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে নিয়ে অনেক বই লিখা হলেও তাকে নিয়ে লিখা ইংরেজিতে বইয়ের সংখ্যা খুবই নগন্য।

তারই জন্ম শতবার্ষিকীতে এস, এ করিমের লিখা ” শেখ মুজিব, ট্রায়াম্প এন্ড ট্রাজেডি ” বইটি থেকে অনেক অংশ বাদ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আমার বাছাইকৃত চুম্বকীয় অংশগুলো নিয়ে অনুবাদ করার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস ।

 

১. শেখ পরিবার কলকাতা থাকা কালে যথেষ্ট সম্পদের মালিক হয়, জমিদারি লাভ করে, পরবর্তীতে যখন রানীগঞ্জের কয়লা চালু হয় তখন গাছের চাহিদা কমে আসে, এতে পরিবারটি আবারো টুংগিপাড়ায় চলে আসে।

এই গ্রামে শেখ ওয়াসিম উদ্দিনের নাতী শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম হয় ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ। তিনি ছিলেন তার পরিবারের তৃতীয় সন্তান।

২. তার বয়সের তুলনায় মুজিব অনেক লম্বা ছিলেন, কিন্তু শিশুকালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন, ভিটামিন বি এর বেরিবেরি ধরা পরে স্কুল থাকাকালীন সময়ে।

৩. এই অসুস্থতার কারনে মুজিবকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়, তাই যখম তিনি মেট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তখন তার বয়স হয়েছিল ২২ বছর আর স্কুলের অন্যান্য সহপাঠীদের তুলনায় সবচেয়ে বড়।

৪. তিনি পড়ালেখার চেয়েও আউটডোর একটিভিটিতে বেশি মনোযোগ দিতেন, বিশেষ করে ভলিবল খেলতেন, যা তার উচ্চকায় শরীরজন্যে খুবই সুবিধের ছিল।

স্কুল জীবনেই তার নেতৃত্বর গুনাবলী চোখে পরত, যখন স্কুলে কোনরকম অনুষ্ঠান বা কর্মসূচী থাকত, তিনি সবার আগে থাকতেন।

৫. শেখ মুজিব তখনো তার জীবনের উদ্দেশ্য ঠিক করেননি, কিন্তু সবসময়ই মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন আর তাদের জন্য কাজ করে দিতেন, তিনি তখন গোপালগঞ্জের মুসলিমলীগে যোগ দিলেন, যে দলটি কঠিন কিছু কাজের জন্য স্বেচ্ছাসেবী খুজছিল।

তার কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় সহজে মুসলিমলীগের নেতাদের চোখে পরে গেল আর তাকে গোপালগঞ্জের মুসলিমলীগের প্রতিরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হল।

স্কুল থাকাকালীন সময়ে তিনি এ পদের অধিকারী হন আর তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের এখান থেকেই তার অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটে।

৬. ১৯৩৯ সালে একটি ঘটনা ঘটে, তিনি প্রথম বারের মত ততকালীন বেংগলের মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক আর বানিজ্য মন্ত্রী শহীদ সহরোওর্দীর মুখামুখি হন।

একটি মিশন স্কুলের আমন্ত্রনে আর পরিদর্শনে তারা গোপালগঞ্জে আসেন, তারা যখন ডাকবাংলোতে ফিরে আসছিলেন, সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আর সাব ডিভিশনাল অফিসার, তখন তারা দেখতে পেলেন যে তাদের সংকীর্ণ পথটি মুজিবের নেতৃত্বে একদল ছাত্র আটকে দিয়েছেন, অফিসার রেগে গেলেন আর প্রধান শিক্ষক এই কারনে মুজিবকে বকা দিলেন, কিন্তু মুজিব বলেই গেলেন যে, তারা তাদের অভিযোগ না শুনা পর্যন্ত সরবেন না।

ফজলুল হক তাদের অভিযোগ শুনার জন্যে খুবই কৌতূহলী হলেন, মুজিব বললেন, তাদের স্কুলের ছাদ ভেংগে পরা অবস্থা আর বর্ষাকালে বসাই যায়না, তার কোন প্রতিকার তারা পাননি।

প্রধান শিক্ষক বিনয়ের সাথে বললেন যে তাদের তা করতে বাজেটের ঘাটতি ছিল আর তার জন্যে প্রায় ১২০০ রুপি লাগবে৷

ফজলুল হক মুজিবের এই সাহসী কাজে এতই পুলকিত হলেন যে তিনি এই টাকা দিতে রাজি হলেন।

এই ঘটনা তার জীবনেই এতই প্রভাব ফেলে ছিল যে, তিনি যে কাজে লড়ছেন তা বিশ্বাস করেন আর তার নিজের সাহসিকতার ও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

৭. রহমান তার জীবনীতে লিখেছেন, হোস্টলে ডাইনিং্যে ছাত্রদের বিভিন্ন দিন বিভিন্ন খাবার দেওয়া হত, একদিন মাংস থাকলে আরেকদিন মাছ, বা অন্যদিন ডিম, কোন ছাত্র এক থালার চেয়েও বেশি খাবার পেতেন না,

একদিন শুনতে পেলাম যে, মুজিব অতিরিক্ত থালা নিচ্ছেলেন খাবার খেতে, তা শুনে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন জি, তা সত্যি।

এটি যে অপরাধ তা কি তুমি জান? তোমার তা করা উচিত নয়।

জবাবে তিনি বললেন, কি করব, আমার এক প্লেটে পেঠ ভরেনা, তার সহস সরল উত্তর শুনে আমার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের কথা মনে পরল, যিনি গাছ কাটার কথা তার বাবাকে স্বীকার করেছিলেন।

মুজিব ও তেমনি একজন প্রকৃতপক্ষে ভদ্রলোক ছিলেন।

যখন কোন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করতেন তা একাগ্রতা আর নিষ্টার সাথে করতেন, ছিল তাতে আন্তরিকতা।

৮. একশান কমিটি মার্চের ১১ তারিখ রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করার নিমিত্তে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে, মুজিব তখন গোপালগঞ্জে ছিলেন, তা শুনার সাথে সাথেই ঢাকা চলে আসেন আর সরাসরি আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন।

এসময় মুজিবের সাংগঠনিক দক্ষতার কারনে অনেকেই তাকে ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকতে বললেন, কিন্তু মুজিব বললেন, এতে তার অনুসারীরা সাহস হারাবে আর এগুতে চাইবেনা।

পরের দিন সকালে মুজিবের নেতৃত্বে একদল সচিবালয় ঘিরে ফেলে, পুলিশ তাদের লাঠি চার্জ করে আর মুজিব সহ প্রায় ২০০ জনকে সেদিন সন্ধায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

৯. মুজিব জেলে এক রক্ষীকে গালে থাপ্পড় দেন, এতে রক্ষী বাশি বাজিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়, পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ তখন এক বাংগালী রক্ষী বাহির থেকে কাউকে ঢুকতে না দিতে দরজা বন্ধ করে দেয়, পরে সুপারিন্টেন্ডেন্ট এসে তা সমাধান করেন।

১০. বিকেলে কারা কতৃপক্ষ জানায় যে, ৪ জন কমুনিউষ্ট নেতা ছাড়া বাকীদের মুক্তি দেওয়া হবে, কিন্তু মুজিব শর্ত দেন যে, তাদের ছাড়া তিনি জেল থেকে বের হবেন না, তাছাড়া তাদের কোন ধরনের শর্ত ছাড়া মুক্তি দিতে হবে, কতৃপক্ষ এই অনুকূল পরিস্থিতিতে তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

১১. তাছাড়া ভাষা আন্দোলনের আগে থেকেই মুজিব তাদের শিক্ষকদের বেতন বাড়াতে আর অমুসলিম শিক্ষকদের সম সুযোগ দিতে আন্দোলন করতেন।

এভাবে আস্তে আস্তে মুজিবের ছাত্রজীবন শেষে রাজনৈতিক জীবনের সুচনা হয়।

১২. ১৯৪৯ সালের ১১ই অক্টোবর মৌলানা ভাষানী হক, সরকারি ভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যাত্রা করেন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান অবস্থান করছিলেন।

তখন পুলিশ তাদের প্রতিহত করে।

ভাষানী আর শামসুল হককে গ্রেফতার করলেও মুজিব পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। যদিও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়, পরে সেখান থেকে মুজিব সহরোওর্দীর সাথে দেখা করতে লাহোরে পৌঁছান।

মুজিবের পক্ষে

পাকিস্তানে যাওয়া আর দেশে আসা সম্ভব হয়েছিল তার ছদ্মনাম না ব্যাবহারের কারনে।

নিজেকে আড়াল করে লুকিয়ে রাখার পরেও ১৯৫০ সালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে,, জেলে পাঠায়, সেখানে তিনি ২ বছর ছিলেন।

১৩. ভাষা আনদোলনের ব্যাপারে মুজিব জেলে থাকতেই সব খবরাখবর নিতে পেরেছিলেন।

সেখানে তিনি আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে অনশনে যান।

অনশনের আরেকটি কারণ ছিল, যাতে তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

অবশেষে যখন তার কাছে এই সুযোগ আসে, একজন আন্তরিক ডাক্তারের সাহায্যে তিনি তার দলের মানুষের কাছে সংবাদ পাঠাতে পেরেছিলেন। কতৃপক্ষ জানতে পারলে তাকে ফরিদপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

১৪. ম্যাজিস্ট্রেট আলতাফ বলেন ‘ তার একটি বক্তৃতায় মুজিব হুমকি দিলেন যে তিনি, মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের চামড়া দিয়ে তার জুতো বানাবেন’।

কিন্তু স্বরাষ্ট্র সচিবের দৃষ্টিতে এটি জঘন্য অপরাধ ছিল।

আমি তাকে অফিসে ডাকলাম, তুমি সরকার পতন ঘটাবে ঠিক আছে, তুমি মুখ্যমন্ত্রীর চামড়া তুলে ফেলবে কেন বললে? সংগে সংগে মুজিব উত্তর দিলেন, কারন তার চামড়া গন্ডারের চামড়ার মত।

১৫. ১৯৫৫ সালের আগষ্ট মাসে মুজিব তার বক্তৃতায় বলেন, তারা পূর্ব বাংলার বদলে পুর্ব পাকিস্তান বসাচ্ছে, কিন্তু বাংলার একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে।

তোমরা যদি এটি পরিবর্তন করতে চাও, আমাদের সাথে আলোচনা করে করতে হবে।

আমরা তা মানতে রাজি আছি কিনা জিজ্ঞেস কর, তোমরা যদি আমাদের সাথে জোর কর আমরা রুখে দেব, যা কর সাংবিধানিকভাবে করতে হবে।

১৬. সরওয়ার্দী বলেন,শেখ মুজিব আমার শ্রেষ্ঠ সম্পদ, কারন সে একই সময়ে দলের নেতা ও কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে।

১৭. মুজিব যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক , তখন তিনি দেখতে পেলেন যে, দলে যথেষ্ট কর্মীর অভাব, তখন তিনি অনেক দুর দুরান্তে গিয়ে পুরু আগষ্ট মাসে, গ্রামে, মফস্বল এলাকায় সভা, সেমিনার করে দলকে শক্তিশালী করলেন।

ঢাকায় তেমন সময় দিতে পারলেন না।

১৮. সরওয়ার্দী দেখতে পেলেন যে, মুজিবকে পুর্ব পাকিস্তানের চা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হল, এতে তার কিছু আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হল, পরে ইউসুফ হারুন তাকে আলফা ইন্সুইরেন্স কোম্পানীর ম্যানেজারের চাকরি দিলেন।

তখন তার মাসিক বেতন ছিল ২০০০ রুপি।

এই চাকরির সুবাদে মুজিব ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় ৩২ নাম্বার রোডে বাড়ি করতে সক্ষম হলেন।

যেটি বর্তমানে ধানমন্ডি ৩২ হিসেবে সুপরিচিত ।

এই বাড়িতে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন।

১৯. বৈরুতের একটি হোটেলে সরওয়ার্দী মৃত্যু বরন করেন।

তবে এই রহস্যজনক মৃত্যুতে মুজিবের মনে সন্দেহের দানা বাধে।

তার মৃত্যুতে কার লাভ?

শুধুমাত্র আয়ুব খানের।

তাই মুজিব এটিকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে ধরে নিলেন।

২০. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে, একসময় সহরওয়ার্দী মুজিবকে লন্ডন ভ্রমণে পাঠান।

৬ দফা দাবি আদায়ে গনসমর্থন পাওয়া সম্ভব হত না যদি মুজিব দক্ষতার সাথে পরিকল্পনা না করতেন।

বাংগালীর মুক্তির জন্যে ৬ দফা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন। মুজিব ছিলেন একজন অসাধারণ বক্তা, প্রত্যেক জেলায় বক্তৃতা শেষে প্যানেল কোডে তাকে আটক করা হয়।

তাই তার বেশিরভাগ সময় আদালতে হাজিরা দিতে চলে যেত।

নারায়ণগঞ্জের একটি বক্তৃতা শেষে , তাকে আটক করা হলে, সে মামলায় তিনি জামিন পাননি, তার সাথে আরও ৯ হাজার আওয়ামীলীগ কর্মীকে আটক করা হয়।

ইত্তেফাক পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আর মানিক মিয়াকে জেলে পাঠানো হয়।

২১. ১৯৭০ সালে রাজনৈতিক মাঠ কিছুটা শীতল করে দেওয়া হল।

তখন আওয়ামীলীগের শক্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে, এসময়ে আওয়ামীলীগ সরাসরি টর্চ লাইট নিয়ে মিছিল করে, মুজিব এতই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, আসন্ন নির্বাচনে তিনি আর কোন দলের সাথে যোগ না দিয়ে এককভাবে নির্বাচনে যেতে চাইলেন।

২২. সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে কেউ কল্পনা ও করতে পারেনি যে আওয়ামীলীগ নির্বাচনে নিরুংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে৷

তাদের মাঝে এতই বিস্ময় কাজ করেছিল যে, ওসমানীকে আওয়ামী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হতে পারে তা তারা ভেবে নিয়েছিলেন।

তাই রাওয়ালপিন্ডিতে অনেক সেনা অফিসার বললেন যে, তারা কিছুতেই আমাদের শাসন করতে পারবেনা।

২৩. মুজিবের সাথে আলোচনা করতে ইয়াহিয়া মুজিবকে রাওয়ালপিন্ডিতে দাওয়াত দিলেন।

মুজিবের সহযোদ্ধারা এটি একটি ফাঁদ হিসেবে ধরে নিলেন।

এবং মুজিবকে যেতে নিষেধ করলেন।

মুজিব যেতে রাজি না হওয়ায়, ইয়াহিয়া তাকে ঢাকা আলোচনা করতে আমন্ত্রণ জানালেন।

২৪. মুজিব জানতেন যে আলোচনা ব্যার্থ হবে, এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতা ব্যাবহার করবে ।

তখন তিনি তার জামাতা ওয়াজিদ মিয়াকে তার পরিবারের সদস্যদের আশ্রয়ের জন্যে বাসা ভাড়া খুজতে বললেন।

আর তিনি নিজেই তার নিজের বাড়িতে শহীদ হতে প্রস্তুত হলেন।

এতে তার দুই মেয়ে অঝোরে কেঁদে উঠেন।

যদিও এটি মুজিবের একক সিদ্ধান্ত ছিল।

তিনি এতই জনপ্রিয় ছিলেন যে, শহরের যে কারো বাসায় তিনি লুকিয়ে থাকতে পারতেন।

এমনকি জাপানি কন্সুলের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় ও চাইলেন না।

তিনি বললেন, যদি আমি লুকিয়ে থাকি, তাহলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাকে খুজতে গনহত্যা চালাবে, এতে অনেক নিরীহ মানুষ মারা যাবে, তাই তিনি শহীদের পথ বেচে নিলেন।

২৫. সেনাবাহিনীর সবছেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ছিল শেখ মুজিব ।

কারন তিনি বাংগালী জাতির জাতীয়তাবোধ তরান্বিত করেছিলেন।

শহীদের তকমা পাবে তাই সেনাবাহিনী তাকে না মেরে জীবন্ত আটক করতে চেয়েছিল।

একটি বিশেষ দলকে এই অপরেশনের দায়িত্ব দেওয়া হল।

তারা প্রথমে রকেট লঞ্চার ছুড়লেন, তারা অবাক হলেন যে, শেখ মুজিব ব্রিফকেস নিয়ে তাদের জন্যে উল্টো অপেক্ষা করছেন।

২৬. ভারতীয় সংবাদপত্রের মতে, প্রতিদিন গড়ে ১ লক্ষ মত শরনার্থী ভারতে পৌছতেন। মে মাসের শেষের দিকে মোট সংখ্যা দাড়াল প্রায় ৪০ লক্ষ।

ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবে অনেকেই মারা গেলেন।

ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে এই অমানবিক নির্যাতনের জন্যে পাকিস্তানকে কোন ত্রান দিতে নিষেধ করেন।

২৭. করাচীর একটি জেলে মুজিবকে একটি সেলে রাখা হল। প্রচন্ড গরম আর একটি মাত্র পাখা তাও কাজ করছিলনা, তিনি শারিরীক কষ্টের চেয়েও মানসিক কষ্টে বেশি ভোগ ছিলেন।

কেননা তখন দেশে কি হচ্ছে তার কোন ধারণা ছিলনা, পত্রিকা, রেডিও কোন কিছুই তাকে দেওয়া হলনা।

কারোই সাথে দেখা করার অনুমতি ও পান নি তিনি৷

২৮. ১১ ই আগষ্ট মুজিবের বিরুদ্ধে গোপন বিচার শুরু হল। বিচারক ছিলেন একজন ব্রিগেডিয়ার ।

মুজিবের বিরুদ্ধে ১২ টি অভিযোগ আনা হল। তার পক্ষে উকিল হিসেবে ডঃ কামালকে চাইলে কতৃপক্ষ তা দিতে অস্বীকার করে।

২৯. এদিকে মুজিবের গোপন বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সারা পৃথিবীতে হৈচৈ পরে গেল।

জাতিসংঘের মহাসচিব গভীর উদ্ভেগ প্রকাশ করলেন।

এম্যান্যাষ্টি ইন্টারন্যাশনাল মুজিবকে ‘ মুল্যবান বন্দী’ ঘোষণা দিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাপ অব্যাহত রাখলেন।

এই সময়ে রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড বললেন যে, তাকে নিশ্চিত করা হল যে মুজিবের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে না।

এদিকে পাকিস্তানের প্রখ্যাত ৪০ জন কবি সাহিত্যিক মুজিবের মুক্তি চাইলেন।

৩০. ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই মুজিবকে মৃত্যুদন্ডের রায় দেওয়া হল। তিনি তা মেনে নিলেন।

আর শুধু সামরিক জান্তাকে অনুরোধ করলেন যে তাকে যাতে নিজের দেশে কবর দেওয়া হয়।

৩১. একদিন রাতের ৩ টার দিকে একটি দল এসে মুজিবকে মেরে ফেলতে চাইল জেলেই।

তা জানতে পেরে জেলার তাকে বাংলোতে সরিয়ে আনলেন।

যদিও সেখানে কোন নিরাপত্তা ছিলনা৷ কিন্তু জেলার সাহেব ভালোই তার দেখভাল করলেন।

মুজিবের মনে হল জেলার তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছেন।

৩২. মুজিবের মুক্তির সময়ে তিনি জানতে পারলেন যে, ডঃ কামাল ও জেলে বন্দী আছেন।

তিনি ভুট্টূকে তাকে মুক্তি দিতে অনুরোধ করলেন আর ভুট্টূ তাতে রাজি হলেন আর কামালকে মুজিবের কাছে নিয়ে আসলেন।

৩৩. বিমানে লন্ডন যাওয়ার প্রাককালে মুজিবকে ভুট্টূ হাত খরচের জন্যে ৫০ হাজার ডলার দিলেন। কিন্তু মুজিব তা নিতে অস্বীকার করেন, আর ভুট্টূকে বললেন যে তার জন্যে যে চার্টার বিমান ভাড়া করা হয়েছে তা বাবদ ব্যায় করতে।

৩৪. ত্যাগ, তিতিক্ষা আর বিনিময় ছাড়া কোন কিছু অর্জন হয়না।

এই দেশের মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে, আর স্বাধীনতা এনে দিতে মুজিব অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, অনেক সংগ্রাম করেছেন।

বিভিন্ন সময়ে মুজিবকে প্রায় ১১ বছর জেল খাটতে হয়েছে। এমনকি মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন তিনি।

দেশে আসার পর তার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল, কিভাবে ধংশস্তুপ থেকে দেশকে তুলে আনবেন আর একটি সপ্নের সোনার বাংলা গড়বেন।

লেখক কক্সবাজার নিউজ ডট কম এর ইংরেজি প্রতিবেদক আর বাংলাদেশ সাংবাদিক ক্রাইম সংগঠনের সদস্য সচিব।