বলরাম দাশ অনুপম :
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ফিস ফ্রাই (ভাজা মাছ)। মাছ, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীতে ভেজাল ক্যামিকেল ও নষ্ট (পুড়া) তৈল মিশিয়ে মুখরোচক খাবারে পরিণত করে নিয়মিত পর্যটক ও স্থানীয়দের সাথে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা।
শুধু তাই নয় চিহিৃত একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সুগন্ধা পয়েন্টের সরকারী খাস জমির উপর ২০/৩০টির মত ফিশ ফ্রাইর (ভাজা মাছ) দোকান গড়ে তুলে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এদিকে গত ১৩ মার্চ রাতে সন্ধ্যার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টের একটি ভাজা মাছের দোকান থেকে ডাব ও ফিশ ফ্রাই খেয়ে ফেরদৌস আলম খান সৌরভ (৩৫) নামের এক পর্যটকের মৃত্যু হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার পরদিন ১৪ মার্চ (শনিবার) শনিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সুগন্ধা পয়েন্টে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার ও পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইমরান জাহিদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে পচা, বাসি, অপরিস্কার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং ভেজাল খাদ্যদ্রব্য-উপকরণ সংরক্ষণ ও পরিবেশনসহ নানা অপরাধের দায়ে মায়ের দোয়া ও লব স্টার নামের দুটি দোকান সিলগালা করে দেয়া হয়।
তাছাড়া একই স্থানে আল্লাহর দানকে ৫০ হাজার, ফ্রেশ সি ফিশকে ২০ হাজার, ক্যাফে বার-বি-কিউকে ২০ হাজার ও মেরিন সি ফিশকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপরও থামেনি অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ভাজা মাছের ব্যবসা। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সরেজমিনে সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়-ওই এলাকায় ২০/৩০টির মত দোকানে বিভিন্ন জাতের পচা ভাজা মাছ বিক্রি করে চলেছে ব্যবসায়ীরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভাজা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছে তারা। সাগরের ভাজা মাছ পর্যটকদের খাবারের তালিকায় অন্যতম। এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ।
সোমবার সন্ধ্যায় ক্রেতা সেজে প্রবেশ করা হয় গত শনিবার অর্ধলক্ষ টাকা জরিমানা গুনা আল্লাহর দান নামের ভাজা মাছের সেই দোকানে। টেবিলে বসা মাত্রই দোকানের এক কর্মচারী এসে বললেন স্যার কি লাগবে। এখানে সব রকমের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। পাবেন স্কুইড এবং কাঁকড়াও।
মাছের মধ্যে আছে চিংড়ি, টুনা, রূপসা, সুস্বাদু রূপচাঁদা, স্যামন, কোরাল, লইট্টা ও নাম না জানা আরো কয়েক জাতের মাছ। সমুদ্র থেকে তুলে আনা তাজা তাজা এইসব মাছ স্বাদে ও মানেও অনন্য।
কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বিভিন্ন ক্যামিকেল দিয়ে ভাজা হচ্ছে মাছ। পরে সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে আল্লাহর দান নামের ওই ভাজা মাছের দোকানের মালিক মনিরের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সুদত্তর না দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যান।
সুগন্ধা বৃহত্তর শুঁটকি, রেষ্টুরেন্ট, ফিশ ফ্রাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন-যদি সুগন্ধা পয়েন্টের কোন দোকানে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ফিশ ফ্রাই (ভাজা মাছ) বিক্রি করা হয় তাহলে সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বরত ম্যাজিষ্ট্রেট ইমরান জাহিদ জানান-যদি কোন ব্যবসায়ী অতি মুনাফার আশায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই ধরণের খাবার বিক্রি করে পর্যটক এবং স্থানীয়দের সাথে প্রতারণা করে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।