মোহাম্মদ ফারুক:

কক্সবাজার জেলায় অপরাধী শিশুদের জন্য শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র নেই। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে আইনি সুরক্ষা থেকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হওয়া শিশুরা। এছাড়া শিশু আইন (২০০৩), লঙ্ঘিত হচ্ছে ওইসব শিশুদের ক্ষেত্রে।

জানা যায়,চুরি-ছিনতাই ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে সোপর্দ করার পর জামিন অযোগ্য ধারার মামলার ক্ষেত্রে শিশু আসামিকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক রাখার আদেশ দেন আদালত।

কিন্তু পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র না থাকায় শিশুদের আবাস হচ্ছে কারাগার হয়ে মূলত জেলার অদূরে চট্টগ্রাম সেভ হোম এবং টঙ্গি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। অন্যদিকে ওইসব শিশুদের অন্য আসামিদের সঙ্গে একই গাড়িতে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে কারাগারে প্রবেশের সময় অন্য আসামিদের যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, সেই একই প্রক্রিয়া শিশুদের ক্ষেত্রেও অনুসৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত শিশুরা আইনি সুরক্ষা পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে সেই সুরক্ষা শতভাগ নিশ্চিত হচ্ছে না।

কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে সোপর্দ করা ৯৬ শিশুকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে একাধিক কিশোরীও ছিল। পরে তাদের পর্যায়ক্রমে ফরহাদাবাদ মহিলা ও শিশু-কিশোরী নিরাপদ হেফাজত কেন্দ্রে এবং টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

কক্সবাজার সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার মোঃ সেতারুজ্জামান জানান, আদালত থেকে আদেশ পাওয়ার পরে পর্যায়ক্রমে শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়ার বিষয়ে বলেন, এ ধরনের শিশুদের আদালত সাধারণত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু কক্সবাজার কোনো শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র নেই, যেখানে দ্রুত শিশুদের পাঠানো যায়। তাই বাধ্য হয়ে ওই শিশুদের দু’ চার দিন নেওয়া হয় কারাগারে। কারাফটকে নামার পর একজন প্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কারাগারের ভেতরে নেওয়া হয়, সেই প্রক্রিয়া শিশুদের ক্ষেত্রে না করার জন্য সবসময় বলা হয়। শিশুদের হাতকড়া পড়া যাবেনা। আদালতে এডভোকেটরা কালো কোট পরে শিশুদের মামলা পরিচালনা করা যাবেনা। কক্সবাজার থেকে টঙ্গী এবং চট্টগ্রাম বেশ দূরে, তাই অবস্থানগত দূরত্বের কারণে এক দিনেই শিশু আসামিদের টঙ্গী বা চট্টগ্রামে পাঠানো সম্ভব হয় না। এ জন্য পর্যাপ্ত সময়, লোকবল, যানবাহন ও অন্যান্য উপকরণের প্রয়োজন হয়। তাই বাধ্য হয়ে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের প্রথমেই কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তাদের স্থানান্তর করা হয়। এর সম্ভাব্য সমাধান বিষয়ে তিনি বলেন, এই জেলায় একটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের খুব প্রয়োজন।

কক্সবাজার জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার মনির জানান, প্রাপ্তবয়স্ক আসামীদের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া করা হয় শিশুদের ক্ষেত্রে তা করা হয় না। তাদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড় আছে।শিশুরা বেশি দিন কারাগারে থাকেনা। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কক্সবাজার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ‘শিশু আইন অনুযায়ী শিশু আসামিদের হাতে হাতকড়া পরানো যাবে না। আবার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সঙ্গে তাদের আনা-নেওয়া কিংবা তাদের সঙ্গে রাখার সুযোগও নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আদালত থেকে শিশুদের কক্সবাজার কারাগারে নেওয়া হচ্ছে বয়স্ক আসামিদের সঙ্গে এজন্য, শিশুদের আলাদা কোন আনা-নেওয়া করার ব্যবস্থা নেই। তিনি জানান, এখানে একটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র যদি প্রতিষ্টা করা হয় তাহলে এই সমস্যা দূর হবে। বর্তমান বাস্তবতায় শিশু আইন ২০০৩ লঙ্ঘিত হওয়ার যে অভিযোগ উঠছে, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে সেই অভিযোগ আর

থাকবে না। একই সঙ্গে শিশু আইন ২০০৩ প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়িত হবে এবং শিশুরা আইনি সুরক্ষা পাবে।