শাহেদ মিজান, সিবিএন:

কক্সবাজার শহরের আলোচিত কয়েকটি খেলারমাঠসহ প্রত্যেক উপজেলার সংকুচিত, দখলকৃত মাঠগুলো পুনরুদ্ধার এবং সব খেলার সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি কক্সবাজার শাখা কর্তৃক আয়োজিত খেলার মাঠ সংরক্ষণ ও ক্রীড়া উন্নয়ন বিষয়ক এক সেমিনারে জেলা প্রশাসক মোঃ হোসেন এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদুর রহমান মোল্লাকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে জেলা সব খেলার মাঠের বর্তমান চিত্র তুলে আনা এবং করণীয় সম্পর্কে প্রতিবেদন দেবেন। ওই প্রতিবেদন মোতাবেক সব সংরক্ষণসহ করণীয় সম্পর্কে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ক্রীড়া লেখক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রতিটি শিশু-কিশোরকে সুন্দর এবং নির্মল শৈশব দিতে হবে। তার জন্য প্রধান মাধ্যম খেলাধুলা। তবেই আগামীতে সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন জাতি পাবো। তাই তাদের খেলাধুলা নিশ্চিত করা জন্য খেলার মাঠ দিতে হবে। এই জন্য যা করা প্রয়োজন সব করবে জেলা প্রশাসন।

সেমিনারের শুরুতে জেলা সদর ও উপজেলারগুলো খেলার মাঠের বর্তমান সমস্যা নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্রীড়া লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ শফি। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, কক্সবাজারে ঐতিহ্যবাহী জেলেপার্ক মাঠ দখল হয়ে গেছে। বিমানবন্দরের জন্য এটি নিয়ে নেয়া হয়েছে। অথচ এই মাঠ ছিলো শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সবচেয়ে বড় ঠিকানা। তবে উন্নয়নের স্বার্থে এই মাঠ বিমান বাহিনী নিয়ে নেয়ায় তার বিকল্প আরেকটি নির্মাণ করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক প্রতিশ্রুতি দেন।

আরেক ঐতিহ্যবাহী এবং গুরুত্বপূর্ণ খেলার মাঠ বাহারছড়া গোলচত্বর মাঠও দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের নামে খেলাধুলা বন্ধ থাকার কথা জানানো হয়। তবে এই মাঠটি ‘মুক্তিযোদ্ধা স্টেডিয়াম’ নামকরণ করে নতুনভাবে উন্মেচন হবে। সেখানে খেলাধুলা হবে প্রধান। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনার সব ধরণের আয়োজন করা হবে।

সিসি ঢালাই দিয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাঁও মাঠটি খেলার অনুপযোগী করার বিষয়টি সেমিনারে বেশ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়। উপস্থিত সকলে এই মাঠের অর্ধেক অংশে সিসি ঢালাই দেয়াকে নেতিবাচক বলে জানিয়েছেন। তবে অবশিষ্ট মাঠটি ঘাস রোপন করে খেলাধুলার জন্য উপযোগী করে সংরক্ষণ করা হবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

রুমালিয়ারছড়া পিটিস্কুল মাঠ নিয়ে প্রসঙ্গ উঠলে এই মাঠটির অর্ধেক দখল করে ফেলায় উপস্থিত সকলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ এই মাঠ ছিলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষণীয় কর্মসূচী আয়োজন ও খেলাধুলার ঠিকানা। তবে ‘প্রাইমারি লিডারচীফ টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার’ নির্মাণের কারণে মাঠের বেশ কিছু দখল হয়ে যায় বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রতিনিধি। তবুও অবশিষ্ট মাঠটি সংরক্ষণ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এছাড়াও শহরের গণপূর্তের দুটি মাঠ আবদ্ধ করে রাখা এবং ডুলাহাজারা তিনটি খেলার মাঠসহ সব উপজেলাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণসহ নানাভাবে খেলা মাঠ দখল ও সংকুচিত করা হচ্ছে ক্রীড়া লেখক সমিতির লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরা হয়। একই সাথে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও অনেক খেলার মাঠ পরিত্যক্ত রয়েছে জানানো হয়। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে গিয়ে উখিয়ার অধিকাংশ খেলার মাঠ বিভিন্ন সংস্থার ক্যাম্প নির্মাণসহ নানা ধরণের নির্মাণ সামগ্রী রেখে খেলাধুলা বন্ধ করা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অনেক খেলার মাঠ রোহিঙ্গা দখল করে নিয়েছে। সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা উন্নয়নের নামে আর কোনো খেলার মাঠ দখল করতে দাবি জানান।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুদুর রহমান মোল্লা, অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আদিবুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি জসিম উদ্দীন, অনুপ বড়–য়া অপু, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দীন, জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী, প্রথম আলোর কক্সবাজার অফিস প্রধান আবদুল কুদ্দুস রানা, দৈনিক সকালের কক্সবাজার’র সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল,  ক্রীড়া লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি এম.আর মাহবুব।