#ভরা মৌসুমেও দাম নেই
#ছাড়িয়ে যাবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা
#মাঠ জরিপের কাজ করছে বিসিক

ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডি খামার পাড়ার বাসিন্দা রহমত আলী। পিতার নাম মরহুম ইজ্জত আলী। বয়স ৫৩ বছর হলেও পৈত্রিক পেশা লবণ চাষ ছাড়ত পারেন নি। ২ জন মিলে প্রায় ৬ কানি জমিতে লবণের চাষ করছেন। সেখানে ২ কানি জমি বর্গা নেয়া। ১১ মার্চ সরেজমিন কথা হয়। তখন তিনি মাঠে কাজ করছিলেন।
রহমত আলী জানান, তিন মাস আগে মাঠে নেমেছেন। এ পর্যন্ত ৬০০ মণ মতো লবণ বিক্রি করেছেন। দাম পেয়েছেন মণপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। থাকা-খাওয়া বাদে একজন শ্রমিককে মৌসুমে দিতে হবে ৮০ হাজার টাকা বেতন। বর্তমানে যে দামে লবণ বিক্রি করতে হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে মজুরি খরচও পাবে না রহমত আলী। লবণের দাম প্রতিমণে ন্যূনতম ৪০০ টাকা না করলে পোষাবে না বলে জানান তিনি।
রহমত আলীর একটু উত্তর দিকে লবণ মাঠে কাজ করছিলেন রমজান আলী। উত্তর খামারপাড়ায় তার বাড়ি। ২ জনে ৫ কানি মতো লবণ মাঠ করছে। টগবগে যুবক হলেও চোখে মুখে হতাশা। এ পর্যন্ত ৩০০ মণ মতো লবণ পেয়েছে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম ক্ষোভের কথা জানিয়েছে লবণ চাষি রমজান। একই কথা বেলাল উদ্দিন, ফরিদুল আলম, রাসেল, আবদুশ শুক্কুরসহ প্রায় চাষিদের।
তাদের ভাষ্য হলো- লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুমেও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে বিপাকে পড়েছে কক্সবাজার উপকূলের প্রান্তিক চাষিরা। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে লবণ উৎপাদন, বিপণনের সঙ্গে যুক্ত অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ।
দেশে প্রচুর লবণ উৎপাদন হচ্ছে। গত বছরের মতো এ বছরও বাম্পার ফলন হবে। বর্তমানের খুব সুন্দর আবহাওয়া। এরকম অনকূল আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে বিসিকের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন) এর এই প্রতিবেদকের নিকট লবণচাষিদের অভিযোগ, একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট দেশীয় লবণশিল্প ধ্বংস করতে তৎপর থাকে। সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে। তাদের আমদানির কারণেই প্রভাব পড়ছে দেশীয় লবণের বাজারে। লবণের মজুরি খরচও পায় না প্রান্তিক চাষিরা। যে লবণ মাঠ পর্যায়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ টায় বিক্রি হয়, সে লবণ বাজারে প্যাকেটজাত করে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কেন এই অবিচার-বৈষম্য? এ ক্ষোভ থেকে অনেক চাষি লবণ মাঠ ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, চলতি সৌসুমে কি পরিমাণ জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে; এখনো কি পরিমাণ অনাবাদি জমি রয়ে গেছে, কতজন চাষি মাঠে নেমেছে, তার জন্য সরেজমিনে জরিপ চালাচ্ছে বিসিক।
৩ জন সমন্বয় কর্মকর্তার নেতৃত্বে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী থেকে মাঠ জরিপে কাজ করছে ৭০ জন তথ্য সংগ্রহকারী।
যেখানে রয়েছে বিসিকের অফিসার, ইন্সপেক্টর ও মাঠ কর্মী।
আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত জরিপ কাজ চলবে। সংগৃহীত তথ্যাবলি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে, যা পরবর্তীতে সরকারীভাবে সিদ্ধান্তে সহায়ক হবে বলে জানান বিসিক কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু অংশসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার চাষযোগ্য লবণজমির পরিমাণ ৬০ হাজার ৫৯৬ একর। গত বছর থেকে দাম না পাওয়ায় এ বছর বেশ কিছু জমিতে লবণচাষ হচ্ছে না। তবু আবহাওয়া অনুকূল থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
এ বছর লবণের চাহিদা ১৮.৪৯ লক্ষ মে. টন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮.৫০ মে. টন।
গত ৬ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ৫ লাখ ৬ হাজার ৪২২ মে. টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
গত বছর এই সময়ে উৎপাদিত লবণের পরিমাণ ৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৫৫ মে. টন।
গত মৌসুমে ১৬ দশমিক ৫৭ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে লবণের উৎপাদন ছিল ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন।
জেলায় বর্তমানে মাঠে লবণ উৎপাদনে জড়িত ৪৪ হাজারের বেশি চাষি পরিবার। নভেম্বর থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ছয় মাস লবণ উৎপাদন মৌসুম।