আলমগীর মানিক, রাঙামাটি
হ্রদ ও পর্বত বেষ্টিত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি দেশের সমতলীয় জেলাগুলো থেকে এখনো পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। জেলার মোট আয়তনের এক তৃতীয়াংশ এলাকা পানিপথ নির্ভর হওয়ায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটসহ সংযোগ সড়কের অভাবে বছরগুলোতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্যগুলো সময়মতো বাজারজাত করতে পারতো না এখানকার বাসিন্দারা। দূর্গমতার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জেলার অরন্য বেষ্টিত এলাকাগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরাও অবস্থান নিয়ে চালাচ্ছে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা। প্রতিনিয়তই এসব সন্ত্রাসীগোষ্ঠি নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয়ে ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন সংস্থাসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত সুপারিশের আলোকে সরকারের পক্ষ থেকে রাঙামাটির নদীপথ নির্ভর উপজেলাগুলোতে সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ গ্রামীণ পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ সড়ক, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হয়েছে। সরকারের এলজিইডি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অত্রাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হতে থাকায় পাহাড়ের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগসহ এখানকার মানুষজনের জীবনযাত্রায় আমুল পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। এলজিইডি’র মাধ্যমে বর্তমানে রাঙামাটি জেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকার প্রকল্প।

সংস্থাটির অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে, এলজিইডির অধীনে রাঙামাটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৬২টি স্কীমের বিপরীতে প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ৩৩৪ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। উক্ত স্কীমগুলোর চুক্তি মূল্য ২৫৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ১১৭ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৪৪৫ মিটার ব্রীজ-কালভার্ট নিয়ে মোট ১৬২টি স্কীম সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া চলমান থাকা ৯৫টি স্কীমের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ৮৪ কিলোমিটার রাস্তা ও ৯৪৭ মিটার ব্রীজ কালভার্ট।

এলজিইডি রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব চৌধুরী জানিয়েছেন, গ্রামকে শহর বানাবেন বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই আলোকে রাঙামাটিতে এলজিইডি কর্তৃক গ্রামীন অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব চৌধুরী বলেন, শহরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামেও যাতে নিশ্চিত করা যায় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গ্রামের মানুষ যেন শহরমুখী না হয়ে গ্রামেই তাদের নিজস্বপণ্য বাজারজাত করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গ্রাম থেকেই সংগ্রহ করতে পারেনই সেটি নিশ্চিত করতেই এখানকার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোকে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশর অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যেই অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে।

অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি রাঙামাটি অফিসের মাধ্যমে জেলায় চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে “পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-২য় পর্যায়” প্রকল্পের আওতায় ২১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর চুক্তি মূল্য ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। এসব প্রকল্পের মধ্যে বর্তমানে চলমান আছে ৯টি এবং ইতিমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে ১২টি।

“পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প: পার্বত্য চট্টগ্রাম-২য় পর্যায়” প্রকল্পের আওতায় ৬১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যেগুলোর চুক্তি মূল্য হলো ১২০ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা। ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে ৩৯টি চলমান রয়েছে ২২টি প্রকল্প।

“অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ন পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প-২” প্রকল্পের আওতায় ১৫টি প্রকল্প গ্রহণ করাহয়। এসব প্রকল্পের চুক্তিমূল্য প্রায় ২০ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা। বর্তমানে ২টি প্রকল্প চালু আছে এবং এরই মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে ১৩টি প্রকল্প।

“বন্যা ও দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুর্নবাসন” প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে ৪টি প্রকল্প।যার চুক্তি মূল্য ৪ কোটি ১২ লক্ষ টাকা। ২টি সমাপ্ত হলেও আরো ২টি চলমান রয়েছে।

“মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নির্মাণ শীর্ষক” প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে চারটি প্রকল্প। চুক্তি মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। সবগুলো প্রকল্পই এখনো চলমান রয়েছে।

“তিন পার্বত্য জেলা দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পল্লী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প” নামক প্রকল্পের আওতায় ১৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এসব প্রকল্পের চুক্তি মূল্য- ১৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। ৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে এবং ১১টি স্কীমের কাজ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

“গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ” প্রকল্পের আওতায় ২৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার চুক্তিমূল্য ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ১৪টি কাজ চলমান আছে এবং সমাপ্ত হয়েছে ১১টি প্রকল্প।

“সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প” প্রকল্পের আওতায় ৯১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। চুক্তি মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় এক কোটি ১৭ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে ৮৫টি এবং চলমান রয়েছে ৭টি প্রকল্পের কাজ।

“গ্রাম সড়ক পুর্নবাসন প্রকল্প” প্রকল্পের আওতায় ৮৪ লাখ টাকা চুক্তি মূল্যে একটি ইতিমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে।

“উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ” প্রকল্পের আওতায় ৩টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার চুক্তিমূল্য ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প সমাপ্ত হলেও বর্তমানে চলমান রয়েছে ২টি প্রকল্পের কাজ।

নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব চৌধুরী জানিয়েছেন, সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ভিশন ২০২১ এবং জাতিসংঘ প্রণীত সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভিষ্ট অর্জনে এলজিইডি সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে,যার ফলে পাহাড়ের জনগণের আয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং অত্রাঞ্চলের সার্বিক আত্মসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।