সিবিএন ডেস্ক:

করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবরে হঠাৎ চাহিদা বেড়েছে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। এর সুযোগ নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।

চট্টগ্রামে ওষুধের পাইকারিবাজার হাজারী গলি থেকে গত তিন মাসে বশির আহমদ নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী ১ লাখ ৭১ হাজার মাস্ক নেন। এছাড়া আরও দুই ব্যবসায়ী নেন ২ লাখ মাস্ক!

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটি শুধু একটি পাইকারি দোকানের হিসাব। হাজারী গলিতে অন্তত ১০ জন আমদানিকারক রয়েছেন, যারা মাস্ক আমদানি করেন। এভাবে যদি সবার কাছ থেকে মাস্ক কিনে মজুত করা হয়, তাহলে এই মুহূর্তে চট্টগ্রামের বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে অন্তত দেড় কোটি মাস্ক!

এসব ব্যবসায়ীকে ধরতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে নগরের হাজারী গলিতে অভিযান চালায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরের কেসিদে রোড হয়ে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ, সিএমপি কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা ও কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল চট্টগ্রামে ওষুধের পাইকারিবাজার হাজারী গলিতে প্রবেশ করে। এ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ ব্যবসায়ীরা একের পর এক দোকান বন্ধ করে গাঢাকা দেন। ১০ মিনিটের ব্যবধানে বড় বড় সব ওষুধের দোকানে তালা ঝুলতে দেখা যায়।

দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান হাজারী গলির ওষুধ ব্যবসায়ীরা

শুরুতে এসকে ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান শুরু করলেও প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ পুলিশকে জানায়, তারা মাস্ক বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করেন না। এভাবে বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান চালালেও সবার বক্তব্য ছিল বাজারে মাস্ক বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই, তাই তারা বিক্রি করছেন না।

অভিযানের একপর্যায়ে চট্টগ্রামে মাস্কসহ সার্জিক্যাল ইকুইপমেন্ট বিক্রির বড় প্রতিষ্ঠান ‘সার্ভিস অ্যান্ড করপোরেশন’ এ প্রবেশ করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা ওই প্রতিষ্ঠানের আমদানি ও বিক্রির কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেন।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্য পরীক্ষা করে দেখা যায়, এর আগে চীন থেকে নিয়মিত মাস্ক আমদানি করলেও গত দুই মাসে তারা নতুন করে কোনো পণ্য আমদানি করেননি। এছাড়া নতুন কোনো এলসিও খোলেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে স্টকে থাকা প্রায় ১০ লাখ মাস্ক তারা বিক্রি করেছেন গত তিন মাসে। এর মধ্যে বশির আহমদ নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১৬ জানুয়ারির মধ্যে ৩ হাজার ৪২০ বক্স মাস্ক বিক্রি করেছে সার্ভিস অ্যান্ড করপোরেশন। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার মাস্ক বিক্রি করা হয়েছে সজীব দাস নামে এক ব্যক্তির কাছে।

সার্ভিস অ্যান্ড করপোরেশনের ম্যানেজার জাহেদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বশির আহমদ ও সজীব দাস চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজারের খুচরা বিক্রেতা। তারা আমাদের নিয়মিত ক্রেতা। তবে গত তিন মাসে যে তারা পরিকল্পিতভাবে এত বেশি মাল ক্রয় করেছে, সেটি আমাদের নজরেও ছিল না। এই বাজারে অন্তত ১০ জন আমদানিকারক রয়েছেন, তাদের সবার কাছ থেকে যদি এভাবে মাস্ক কেনা হয়, তবে একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের হাতে কয়েক লাখ প্যাকেট মাস্ক মজুত বলে ধারণা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চালান বেশি বা কম থাক এক বাক্স মাস্ক ৫২ টাকা করেই বিক্রি করেছি অথচ এখন নাকি বাইরে একটি মাস্ক ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এটা কারা করছে আমাদের জানা নেই। কারণ বেশ কিছুদিন ধরে মাস্ক আমদানি করতে পারছি না। দেশের কোম্পানিগুলোও সরবরাহ করছে না। তাই বাজারে মাস্কের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।’

এ সময় তিনি বিক্রি তালিকা দেখিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকার বিট্রো সার্জিক্যাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত মাসে ৩ হাজার বাক্স মাস্ক কিনে নিয়েছে। প্রতিটি বক্সে ৫০টি মাস্ক থাকে। তবে তারা যে নিয়ে মজুত করছে, তা বুঝতে পারিনি।

উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শুনতে পাচ্ছি, বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি কী এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে নগরের হাজারী গলিতে অভিযান শুরু করি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই দোকান বন্ধ করে পালিয়েছেন।’

কোতোয়ালি থানার ওসি বলেন, ‘সঙ্কট পুঁজি করে কাউকে ব্যবসা করতে দেব না। ব্যবসায়ীদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। আজ বাজার পরিস্থিতি দেখে গেলাম, কাল থেকে গোয়েন্দা নজরদারি করা হবে। যদি মাস্ক ও স্যানিটাইজার কেউ মজুত করে বা বেশি দামে বিক্রি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হবে।’

তিনি বলেন, ‘সার্ভিস অ্যান্ড করপোরেশন নামে একটি দোকানের তথ্য ঘেঁটে দেখলাম। গত তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ পণ্য ক্রয় করেছে নির্দিষ্ট কয়েকজন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি, কেউ এসব পণ্য মজুত করেছে কি না। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।’

এদিকে পুলিশি অভিযানের আগে অতিরিক্ত দামে মাস্ক বিক্রির দায়ে হাজারী গলিতে চিন্ময়ী ড্রাগ হাউস নামে একটি ফার্মেসিকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।