তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার :
কক্সবাজারে বিভিন্ন উপজেলায় উর্বর ভূমিতে বিষাক্ত তামাক চাষে ছেয়ে গেছে । পাতা,শিরা, উপশিরায় বিষাক্ত নিকোটিন নিয়ে বেড়ে উঠছে এ উদ্ভিদ।প্রক্রিয়াজাতকরণ চুল্লিতে ফুটছে বন। পরিবেশ ভারী হচ্ছে দূর্গন্ধে। নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।
কক্সবাজারের চকরিয়া সবুজ খাদ্য শস্যের ভান্ডার হিসাবে পরিচিতি থাকলেও তামাক চাষের কারনে এখন এ উপজেলায় নেমে এসেছে সবুজ খাদ্যদ্রব্যের অকাল। এ অঞ্চলের সিংহভাগ কাচাঁ তরিতরকারি সমগ্র জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে সরবরাহ করা হতো, কিন্তু বর্তমানে ব্যাপক হারে তামাক চাষের কারনে নিত্য প্রয়োজনীয় শাক সবজি চট্রগ্রাম থেকে এখানকার ব্যবসায়ীরা এনে দ্বিগুন দামে বিক্রি করছেন। এতে সাধারন মানুষের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাক সবজির অভাবতো দেখা দিচ্ছেই, পাশাপাশি তারা পুষ্টিহীনতায় নানান রোগে ভুগছেন। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে জেলার চকরিয়া, রামু, উখিয়া উপজেলায় অপ্রতিরোধ্য তামাক চাষের ফলে,এ এলাকায় মাটির উর্বর শক্তি কমে যাচ্ছে। এতে করে মানুষের জীবন ধারনের অপরিহার্য্য খাদ্য শস্যের উৎপাদনের মাত্রা দিন দিন কমে আসছে। তামাক চাষের প্রবনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার শত শত একর জমিতে তামাকের বিষ ছড়িয়ে পড়ছে। কৃষকরা টোব্যাকো কোম্পানীর লোভের ফাঁদে পড়ে তামাক চাষে জড়িয়ে পড়ছে। এসব টোব্যাকো কোম্পানী কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋনসহ নানাভাবে উৎসাহিত করে আসছে। ফলে অতিতে কৃষকরা যেখানে সোনালী ধান ও সবুজ ফসলাদী ফলাত, সেখানে এখন তারা অতিউৎসাহী হয়ে তামাক চাষ করছেন। অপরদিকে চুল্লি তৈরী করে তামাক পাতা শুকানোর জন্য পুড়ানো হচ্ছে বনের তাজা কাঠ। এতে করে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। পাশাপাশি তামাক পুড়ানো দূষিত ধোয়ায় বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে বৃদ্ধি পাচ্ছে নাইট্রোজেনের পরিমান ।যার ফলে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পরিবেশের ভারসাম্য ।এছাড়াও তামাক পুড়ানো বিষক্রিয়ায় মানুষের সৃষ্টি হচ্ছে সর্দি, কাশি,এজমা আলসার ও ক্যান্সারসহ নানাবিদ দুরারোজ্ঞ ব্যাধি।
তামাক চাষের সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে, কৃষক রবিউল হাসান বলেন,আমি গত তিন বছর ধরে তামাক চাষ করে আসছি। একটি কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে এ চাষ শুরু করি।সারা বছর ধরে তামাক চাষের টাকা দিয়ে ঋণ সুদ করলেও পরের বছর আবার ঋণ নিতে হয় এ ব্যবসার জন্য। খরচ কোন মতেই কুলিয়ে উঠতে পারি না।
জানতে চাইলে আরেক কৃষক সাকের উল্লাহ বলেন, আমি আগে তামাক চাষ করতাম, কিন্তু তামাক চাষে তেমন সুবিধা পেতাম না আর জানতে পারি যে তামাক একটি বিষাক্ত উপাদান। তাই বেচে নিলাম সবজি এবং ভূট্টার চাষ।
বর্তমান সরকার দেশজুড়ে তামাক চাষ বন্ধ ও তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে গনসচেতনামুলক প্রচার করে আসছে,সেখানে কক্সবাজার জুড়ে চলছে অব্যাহত ভাবে তামাক চাষ। সরকারী ও বেসরকারীভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে কৃষকদের সবুজ ফসলাদী চাষে উদ্বুদ্ধ ও সহযোগীতা করে তামাক চাষ বন্ধ করতে হবে। এতে করে সবুজ বনাঞ্চল রক্ষা পাবে, পাশাপাশি চরমভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
এব্যাপারে কক্সবাজার কৃষি বিভাগের সহকারী পরিচালক একেএম. শাহরিয়ার বলেন,তামাক নিত্যান্তই একটি বিষ বৃক্ষ। আমরা কৃষকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছি, যেন তারা তামাক চাষ থেকে সরে গিয়ে সবজি চাষে অধিক আগ্রহী হয়। এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কক্সবাজার থেকে তামাক চাষ একেবারেই বন্ধ করা হবে।