মুরাদ মাহমুদ চৌধুরী

২০১২ সাল। দশম শ্রেণীর শেষার্ধে তখন। সেই সময়ে তেমন ভাল মানের ক্যামেরা ছিল না বলে দারুণ সব মুহূর্তগুলোকে ছবির এ্যালবামে আবদ্ধ করার সুযোগ হয়ে উঠে নি। তবে হ্নদয়ে ধারণ করে রেখেছি ষোল বৎসরের কৈশোর স্মৃতিকে। লালন করে এসেছি অন্তরে আজো কত শত স্মৃতি মাখা দুর্লভ সময়কে।

কানায় কানায় লুকিয়ে আছে প্রিয় ক্যাম্পাস “বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমী” প্রাঙ্গণে দীর্ঘ দশটি বৎসরের অজস্র স্মৃতি। বাবার হাত ধরে একদিন এসেছিলাম সোনালী এই ক্যাম্পাসে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হতে। সেই শৈশবের ধারাবাহিকতায় দশম শ্রেণিতে উন্নীত হয়ে কৌশর জীবনে পদার্পণ। দশটি বৎসর কেটে গেলো এই বিদ্যাপীঠের বুকে খেলতে খেলতে। সব যে স্মৃতি হয়ে যাবে তখন ভাবিনি, তখন তো ছিলাম কৈশোরের জোয়ারে। দুষ্টুমির কোনো সীমা ছিল না।

দুষ্টুমির সব থেকে বড় অংশটা ছিল সহপাঠীদের জুড়েই। সহপাঠিদের ডাকনামগুলো ও ছিল বেশ হাস্যকর ও রহস্যমাখা। মিডা, চুল্লু, হাবিলদার, মোস্তাক খুলু, খলিল, গোলাইম্মা, চুয়ারি, জঙ্গলী, নিগ্রু সহ আরো কত কি! আজও আমাদের দেখা মিললে ঐ সব নামেই ডাকি একে অপরকে।

ঐ সময়ের বিরক্তিকর মুহুর্তের মধ্যে একটি হলো প্রাতঃ সমাবেশ যাকে আমরা এসেম্বলি বলি। সকালের এসেম্বলিতে কোনোদিন পিটি তো করিনি বরং লাইনের সামনের জনকে দিয়ে গা ঢেকে রাখতাম যাতে আমাদের সম্মানিত ক্রীড়া শিক্ষক কাশেম স্যারের চোখে না পড়ি এবং এরপর ইচ্ছে মতো বাঁদরামি করতাম।

স্যারদের পিটুনি খেতে অভ্যস্থ ছিলাম তখন। স্কুলের টয়লেটগুলোতে লুকিয়ে থেকে স্যারদের পিটুনি থেকে বেঁচেছি অনেকবার। মেয়েদের ব্যাগ থেকে টিফিন চুরি করে খাওয়ার কথাও মনে পড়ে খুব। সাথে কয়েকজন ভদ্র শয়তান বন্ধুওগুলা না থাকলে অবশ্যই টিফিন চুরির মতো মজার অভিজ্ঞতা হতো না কোনোদিন।

যে স্যারটাকে বেশি মারতো বলে ভয় পেতাম, মনে মনে ঘৃণা হলেও সেই রাগ দেখানোর ক্ষমতা ছিল না যদিও। সেই স্যারকেই আজ বেশি মিস করি। আর চাইলেও পারবো না স্যারের পিটুনি খেতে। পারবো না আর ক্লাসের বেঞ্চে বসে কলম খেলতে। আজ যদি রেজাউল স্যারের ক্লাসটা পেতাম, স্যারের দেওয়া অনুশীলনী ৩.৩ এর ৩১ নম্বর গণিতের সমাধানটা করে দিতাম নিমিষেই। জ্যামিতির কম্পাসের জন্য মালেক স্যারের পিটুনি থেকে বাঁচতে পারেনি কেউ। স্কুলের সাময়িক পরিক্ষা গুলোতে মাঝে মধ্যে নকল করার মতো দুঃসাধ্য অভিজ্ঞতার ও মুখাপেক্ষী হয়েছি।

আমাদের সময়কালে ছেলেদের শার্টের উপরের বোতাম দুয়েকটা খুলে দেওয়ার প্রবণতা ও ছিল বেশ। শার্টের বোতাম খুলে দিতে পারলেই মনে করতাম আমরা অনেক স্মার্ট। কপালের উপরের চুলগুলো জেল দিয়ে খাড়া করে রাখতাম সবসময়, যা সেই সময়ের বহুল প্রচলিত এক অভিজাত স্টাইল। আজ ভাবতে গেলে বড্ড হাসি পায়। কতই বেপরোয়া ছিলাম আমরা। ছুটির ঘন্টা বেজে যাওয়া মানেই সেই সময়ের জন্য এর থেকে বড় আনন্দের ব্যাপার আর কিছু ছিল না। ছুটির ঘন্টা বাজতে বাজতে একদিন ঠিকি বিদায়ের ঘন্টা ও বেজে গেল। এরপর থেকে সাহাবউদ্দিন ভাই আর কোনোদিন আমাদের জন্য ছুটির ঘন্টা দেন নি।

তদ্রুপ সকল কিশোররা আজ অতীতের ধারাবাহিকতায় সময়ের সাথে প্রাণের ক্যাম্পাস হতে বিদায় স্মারক নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যার যার নিজ গন্তব্যের পথে প্রান্তরে। তবে স্মৃতিগুলো মলিন হয়ে যায় নি। আদৌ জীবিত আছে সহশ্র তরূণের প্রাণে, যারা আজ “প্রাক্তন ছাত্র” খেতাবে ভূষিত। স্মৃতিগুলো আসলেই অবিনশ্বর, অনিবর্চনীয়, অমলীন…