আবুল কালাম, চট্টগ্রাম:

আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে বাসায় ‘শেষবারের মতো’ বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। দলের পক্ষে নির্বাচন সমন্বয়ের দায়িত্ব পাওয়া মোশাররফ বিদ্রোহীদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন।

শনিবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে নগরীর নন্দনকাননে মোশাররফের বাসায় এক বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও উপস্থিতে তিনি এসব বলন।

বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন জানিয়েছেন, মোশাররফের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় শ’খানেক কাউন্সিলর প্রার্থী গিয়েছিলেন। তবে জামালখান ওয়ার্ডের এম এ নাসের, ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের হাসান মুরাদ বিপ্লবসহ বেশ কয়েকজন সাবেক-বর্তমান কাউন্সিলর যাননি।

বৈঠকের ‍সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, ‘একটাই সিদ্ধান্ত, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ড যে মনোনয়ন দিয়েছে সেটাই চূড়ান্ত। প্রত্যাহারের জন্য বলে দিয়েছি। যদি না করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী বলেন, ‘মোশাররফ ভাই বলেছেন, নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটাই চূড়ান্ত। নেত্রীর নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিদ্রোহীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী শুনেছেন। যদি কাউকে পরিবর্তনের প্রয়োজন হতো, নেত্রী অবশ্যই করতেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকজন প্রার্থী ক্ষোভের কথা তুলে ধরতে চাইলে মোশাররফ ভাই বলেন, যদি ক্ষোভ থাকে, তোমাদের যা ইচ্ছা করতে পার। আমি কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’

জানতে চাইলে লালখান বাজার ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ও বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া দিদারুল আলম মাসুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোশাররফ ভাই আগের মতোই বলেছেন, সবাইকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছেন। না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। আমি যেহেতু ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি, আমাকে তো দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। আমি প্রত্যাহার করে নেব।’

জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষাণ চৌধুরী বলেন, ‘মোশাররফ ভাই এবং নাছির ভাই স্পষ্টভাবে বলেছেন, বিদ্রোহী থাকার সুযোগ নেই। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। যেহেতু দল করি, দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলব। আমি প্রত্যাহার করব।’

নগরীর আন্দরকিল্লা-চকবাজার-দেওয়ান বাজার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আনজুমান আরা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়েছে আবারও। আমি প্রত্যাহার করব না। আমি অবশ্যই নির্বাচন করব।’

চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে এবার প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর পদে ৫৫ জনকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ১৯ জন এবার সমর্থন পাননি। তাদের মধ্যে ১৮ জনই এবার বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া পাঁচটি ওয়ার্ড ছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত অথবা পদ-পদবীতে থাকা ৩-৪ জন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। রোববার (৮ মার্চ) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব ‍উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এক যুক্ত বিবৃতিতে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার রাতে আ জ ম নাছির উদ্দীনের সই করা ওই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।