ফেসবুক কর্ণার
৭ই মার্চ ২০২০ তারিখ জরুরি কাজে মহেশখালী যাবার জন্য কক্সবাজার ৬নং ফেরিঘাটে গিয়ে যখন পৌঁছি তখন সকাল ১০.৩০টা। খালভর্তি পানি আর নৌঘাটে তিন শতাধিক অপেক্ষমান যাত্রী। ভীড় ঠেলে আমিও মিশে যাই যাত্রীসাধারণের লোকারণ্যের দলে। কিন্তু মহেশখালী পার হবার কোনো উপায় নেই। স্পীডবোটও আছে, দু’কুল ছুঁই ছুঁই পানি। অপেক্ষমান যাত্রীদরে মধ্যে ৯০% টুরিস্ট। তাতে ঘাটওয়ালার পোয়াবারো। ঘাট দেখভালের জন্য দুয়েকজন লোক থাকে ঘাটে। তারা দেখি টুরিস্ট যাত্রীদেরকে দলে দলে এবং কানে কানে দর কষাকষি করছেন এবং রিজার্ভ ভাড়ার মন্ত্রণা দিচ্ছেন এবং স্পীটবোটে তুলে দিচ্ছন। ঠেলাঠেলি আর ধাক্কাধাক্কির অন্ত নেই। ঘাটে অনেক স্পীটবোট দন্ডয়মান কিন্তু রিজার্ভ ছাড়া যাবে না। ঘাটওয়ালার ইচ্ছেপূরণের রিজার্ভ ভাড়া নিয়েও ডিমের খোলসের মতো স্পীটবোটগুলি যাত্রী পার করে কুলকিনার করতে পারছে না। এদিকে নারী-শিশু-বৃদ্ধ অনেক স্থানীয় যাত্রী অসহায়ভাবে বসে আছেন। আমিও সেই সব দৃশ্যাবলি দেখে দেখে বসে আছি। গাদা বোট বলে পরিচিত যে অথর্ব বোটটি থাকে সেটিও আজ দেখলাম না। একজন বললেন, একটি খালী গাদা বোট ঘাটে আসতে চেয়েছিল কিন্তু সেটিকে ভিড়তে দেয় নি। সেই বোটটি থাকলেও স্থানীয় অনেকে তাতে করে যেতে পারতেন।

এক পর্যায়ে এক টুরিস্ট যুবক আমার পাশে এস বসলেন এবং আমার সাথে আলাপ করতে চাইলেন। এতো লোকের মহেশখালী যাবার আগ্রহ ও ঘাটের লানত দেখে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহেশখালীতে দেখার কি কি আছে?” আমি বুঝতে পারলাম টুরিস্ট যুবকটি এখানে প্রথম এসেছেন। আমি তার উত্তরে বললাম, মহেশখালীর চেয়েও ব্যতিক্রম ও দর্শনীয় জায়গা এই ঘাটটি। দেখলাম তিনি কথাটির মর্মার্থ বুঝতে পারেন নি। আমি বুঝিয়ে বললাম, নদীর দুপাশ সুন্দর, এরকম জায়গা বাংলাদেশে আরো অনেক আছে। মহেশখালী একটি উপজেলা আর তাতে আছে গ্রাম। এ রকম উপজেলাও বাংলাদেশে আরো আছে। কিন্তু হাজার হাজার যাত্রী পারাপারের ফেরিঘাটে শুধু দশজন দশজন করে ডিমের খোলসের মতো অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্পীডবোটে করে লোক পারাপার করতে গিয়ে ঘাটে শতশত যাত্রী আটকিয়ে টাকা কামানোর এমন অদ্ভুত স্থান দুনিয়ার আর কোথাও পাবেন না। এটিও একটি দর্শনীয় স্থান বটে। এই ঘাটটির যাত্রীদের আহাজারী দেখেই আপনি ফিরে যেতে পারেন।

আমার ডান পাশে বসে আছেন আরেক অপেক্ষমান অসহায় যুবক যাত্রী, মহেশখালীর সিপহীরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার সাথেও কথা বললাম, পরিচিত হলাম। তিনি আমাকে ভেবেছেন টুরিস্ট, তিনি আমাকে চেনেন না। আমি বললাম, আমি মহেশখালীর লোক, জরুরি কাজে মহেশখালী যাচ্ছি। বললাম, ঠেলাঠেলি ও মারামারি করে আমি তো যেতে পারবো না, মনে হয় ফিরে যেতে হবে। তিনি বললেন, নেতাদেরকে ঘাটওয়ালা বোট ব্যবস্থা করে দেয়, কিছু নেতা যাচ্ছেন আপনি তাদের সাথে যান। আমি বললাম, আমি এখানকার লোক, বোটে সিট পাওয়ার জন্য আমি নেতা ধরতে পারবো না, প্রয়োজনে ফিরে যাব!

দেখি আরেক পাশে হৈ চৈ শুরু হলো। বিষয়টি জানার চেষ্টা করলাম। এক লোক যিনি বিষয়টি দেখেছেন তিনি বললেন, গোরঘাটার এক যাত্রী এক টুরিস্টের গায়ে ভর দিয়ে ভীড় ঠেলে বোটে নিজের আসন দখল করার জন্য ছুটে চলেছেন, এমন সময় টুরিস্ট লোকটি সরে গেলে গোরকঘাটা এলাকার যাত্রীটি পানিতে পড়ে যান। পরে পানিতে পড়ে যাওয়া লোকটি উঠে এসে টুরিস্ট লোকাটকে মারতে লাগলেন। অসহায় টুরিস্ট লোকাট শুধুশুধু মার খেলেন। তাতে হৈ চৈ আরো বেড়ে গেল। এমন সময় কয়েকজন বিদেশী মানে সাদা চামড়ার লোক এলেন ঘাটে। তারা যাত্রীদের এমন ভীড় ও মারামারি দেখে ফেরে গেলেন। তখন সকাল ১১.৩০টা বাজে। আমি প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করে যাত্রীদের আপসোস দেখে ও কলরব শুনে মহেশখালী না গিয়ে ফিরে এলাম।

Moqbul Ahmed এর ফেসবুক আইডি থেকে।