সিবিএন ডেস্ক:

আবদুল্লা আল নোমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
আবদুল্লা আল নোমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দলের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে কেন্দ্র করে সংকট তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এ সংকট ফের দলে চাউর হয়েছে। চসিকে দলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্বাচন পরিচালনায় বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) আমীর খসরুকে আহ্বায়ক করে বিশেষ কমিটি গঠনের পরই অভ্যন্তরীণ নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতেই আবদুল্লাহ আল নোমানকে ‘প্রধান সমন্বয়ক’ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যদিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা স্থগিত রাখে বিএনপি হাইকমান্ড। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলীয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তবে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভাই ও আহ্বায়ক হিসেবে আবদুল্লাহ আল নোমান ভাই থাকবেন, যেটা ঢাকায় হয়েছিল। সেখানে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস ছিলেন। সব মিলিয়ে ১৩ সদস্যের কমিটি হয়েছে।’

যদিও বিএনপির অফিসিয়াল ঘোষণা বলছে ভিন্ন কথা। ১৩ জনের বদলে কমিটির ঘোষণা আসে ১১ সদস্যের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, চসিকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তে নির্বাচন পরিচালনা বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ কথা জানানো হয়। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা হলেন— মীর নাসির উদ্দীন, রোজী কবির, গোলাম আকবর খন্দোকার, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, এস এম ফজলুল হক, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান শামীম, এ এম নাজিমউদ্দীন, আবু সুফিয়ান ও আবুল হোসেন বক্কর।

তবে শুক্রবার (৬ মার্চ) দিনব্যাপী বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, চসিকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আমীর খসরুর বিষয়টি স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়নি। বরং তিনি নিজেই এ কমিটিতে থাকতে নারাজ ছিলেন।

শুক্রবার সকালে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সমন্বয় কমিটিতে না থাকার কথা জানিয়েছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ওইদিন আবদুল্লাহ আল নোমানকে আহ্বায়ক করে চসিকের কমিটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কী কারণে তাকে বাদ দিয়ে আমীর খসরুকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। হয়তো রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে নোমান বাদ পড়েছেন।’

জানতে চাইলে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। স্থায়ী কমিটিতে এমন কোনও আলোচনা হয়নি, জানিও না। পেপারে দেখেছি, আমীর খসরু মাহমুদের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমি তো ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এটা বলতে পারবো না।’

আবদুল্লাহ আল নোমানের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, নোমানের কাছেও আগে থেকে খবর ছিল চসিকে নির্বাচনি প্রচারণার কমিটিতে আহ্বায়ক করা হচ্ছে। যদিও তিনি এ খবর নিশ্চিত হতে নিজে থেকে যোগাযোগ করেননি।’

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে আবদুল্লাহ আল নোমানকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ‘প্রধান সমন্বয়ক’ করা হচ্ছে—এমন খবর আসে বিভিন্ন মাধ্যমে। যদিও মধ্যরাতে এই সিদ্ধান্ত উল্টে যায়, এমন ইঙ্গিত দেন দলের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় আবদুল্লাহ আল নোমানের। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশনা পাইনি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। একটু সুস্থবোধ করলেই চট্টগ্রাম যাবো।’

তার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, আবদুল্লাহ আল নোমান নির্বাচনি পরিচালনা কমিটির প্রধান হবেন—এটাই তো স্বাভাবিক ছিল। কেন অস্বাভাবিক হলো তা-তো স্পষ্ট নয়। এমনকি ১১ সদস্যের একটি কমিটি হয়েছে, এ তথ্যটিও নোমানের কাছে পৌঁছানো হয়নি বলে দাবি এই সূত্রের।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, চট্টগ্রামের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। আমীর খসরু দলের স্থায়ী কমিটির মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনীতিতে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন নোমান। সর্বশেষ গত বছর স্থায়ী কমিটিতে নতুন দুই সদস্য অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সময় নোমান আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পেরে এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিছুটা অনুপস্থিতি সৃষ্টি হলেও গত বছর থেকে কয়েকবার দলের সক্রিয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন নোমান। অন্য নেতারা পদ না পাওয়ার কারণে নিষ্ক্রিয় থাকলেও দলের এই অন্যতম ভাইস-চেয়ারম্যান নিয়মিত অংশ নেন।

দলের প্রভাবশালী উইংয়ের সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিকভাবে আবদুল্লাহ আল নোমান অনেক বেশি প্রাজ্ঞ। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এক-এগারোর সময় বিদেশে থাকায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুনজরে থাকতে পারেননি। যদিও বেশ কয়েকবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নোমান জোরের সঙ্গেই বলেছেন, অসুস্থতার কারণে মালয়েশিয়ায় থাকলেও দেশে ফিরে প্রথমেই দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের জন্য সম্ভাব্য জাতীয় কমিটিতে আবদুল্লাহ আল নোমানকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে।

চসিকে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমীর খসরু ও আবদুল্লাহ আল নোমান দুজনেই সিনিয়র নেতা। দুজনেই আমার জন্য কাজ করছেন। দুজনেই তাদের অনুসারীদের বলে দিয়েছেন। খসরু ভাই এসেছিলেন, নোমান ভাইও আশা করছি দ্রুতই আসবেন। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন।’

জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি তো জানি না কোনও সমস্যা হচ্ছে। দলের কাজ তো সবাই করবেন। আর স্থগিত করার খবর কে দিলো? আমার এগুলো নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’