মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

ঘুষের টাকা সহ র‍্যাব কর্তৃক গত ১৯ ফেব্রুয়ারী ধৃত কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল শাখার তৎকালীন সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৫ মার্চ কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাং হেলাল উদ্দিন এর আদালতে তার জামিন চাওয়া হয়। আদালতের বিচারক মোহাং হেলাল উদ্দিন আসামী ও রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবীর শুনানি শেষে সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানের জামিন আবদেন নামঞ্জুর করেন।

জামিন শুনানিকালে আসামী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী ও মূখ্য কুশলী অ্যাডভোকেট আবদুল মন্নান আদালতে বলেন, ফৌজদারি কার্যাবিধি ৫৪ ধারার বিধান হলো, কোন ব্যক্তিকে সন্দেহজনক ভাবে আটক করে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নিয়মিত মামলা দায়ের করতে হবে। তারপর ৫৪ ধারা প্রত্যাহার করা। সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে ১৯ ফেব্রুয়ারী আটক করে ২০ ফেব্রুয়ারী তাকে ৫৪ ধারায় এসএল-০২/২০২০ নম্বর মামলা করে আদালতে চালান দেওয়ার পর ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়নি। আবার এসএল-০২/২০২০ নম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই আবুল কালাম নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য আদালতের কাছে কোন সময়ও প্রার্থনা করেননি। তাই, সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে জামিন প্রদানের জন্য অ্যাডভোকেট আবদুল মন্নান আদালতে নিবেদন করেন। অপরদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রহিম আসামির জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন। বিজ্ঞ বিচারক মোহাং হেলাল উদ্দিন উভয়পক্ষের শুনানি শেষে সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেন। একইসাথে আদালত দীর্ঘ ১৫ দিনও সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা না করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছে।

এদিকে, দুদক এখনো ধৃত সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খান, পলাতক আসামী সার্ভেয়ারদ্বয় মোঃ ফেরদৌস খান ও মোঃ ফরিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রণালয় কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-১ অধিশাখার এক প্রজ্ঞাপনে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখা থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখায় প্রেষনে নিয়োগ পাওয়া কারাগারে থাকা সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে নেত্রকোনার মদন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হিসাবে বদলী, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখা থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখায় প্রেষনে নিয়োগ পাওয়া পলাতক আসামী সার্ভেয়ার মোঃ ফরিদ উদ্দিনকে সুনামগঞ্জের বিশম্বপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হিসাবে বদলী এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখা থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখায় প্রেষনে নিয়োগ পাওয়া পলাতক অপর আসামী সার্ভেয়ার মোঃ ফেরদৌস খানকে সার্ভেয়ার হিসাবে বদলী করা সহ একই আদেশে ১৯ জন সার্ভেয়ারকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে স্টেনরিলিজ করা হয়।

এদিকে, এখনো নিয়মিত মামলা দায়ের না করার বিষয়ে কক্সবাজারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রহিম সিবিএন-কে জানান, দুদক আইনে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে। অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রক্রিয়াধীন থাকায় নিয়মিত মামলা দায়ের করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। অনুমোদন সম্পন্ন করে দুদক আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিয়মিত মামলা দায়ের করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রহিম সিবিএন-কে জানান।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি আবু মোঃ শাহজাহান কবির সিবিএন-কে জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারী বিকেলে র‍্যাব-১৫ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার মোঃ হারুনর রশিদ বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন আইন, যাহা ১৮৬০ সালের ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪০৯/১৬১/১০৯/৩৪ ধারায় পটুয়াখালীর বউফল উপজেলার দলিল উদ্দিন খান ও মরিয়ম বেগমের পুত্র সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে ধৃত আসামী আসামী দেখিয়ে এবং সার্ভেয়ার মোঃ ফয়সাল খান ও সার্ভেয়ার মোঃ ফরিদ উদ্দিনকে পলাতক আসামী উল্লেখ করে আরো ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। একইসাথে ধৃত সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে সদর মডেল থানা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। এজাহারটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে হওয়ায় থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি মামলা আকারে নেওয়ার কোন এখতিয়ার ছিলোনা। ওসি আবু মোঃ শাহজাহান কবির আরো জানান, অভিযোগটি লিপিবদ্ধ করে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে এসএল-০২/২০২০ নম্বর মামলা মূলে সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে কোর্ট ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে একইদিন সন্ধ্যায় আদালতে প্রেরণ করা হয়। পরে আদালত সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে কারাগারে প্রেরণ করেন। ওসি আবু মোঃ শাহজাহান কবির আরো জানান, র‍্যাব-১৫ এর প্রদত্ত এজাহারটি থানা কর্তৃপক্ষ ফরওয়ার্ডিং দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে তখনি প্রেরণ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী দুদক কর্তৃপক্ষই এখন বিষয়টি দেখবেন। এখানে পুলিশের করার কিছুই নেই।

প্রসংগত, ঘুষের টাকা সহ র‍্যাব-১৫ কর্তৃক কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল শাখার তৎকালীন সার্ভেয়ার মোঃ ওয়াসিম খানকে শহরের বাহারছরা বাসা থেকে ৬ লাখ নগদ টাকা সহ ধৃত, একই শাখার তৎকালীন সার্ভেয়ার মোঃ ফেরদৌস খানের তারাবনিয়ার ছরা বাসা থেকে ২৭ লাখ ঘুষের অর্থ ও সার্ভেয়ার মোঃ ফরিদ উদ্দিনের বাহারছরার বাসা থেকে ৬০ লাখ ৮০ হাজার ঘুষের টাকা উদ্ধার করা হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারী বিকেলে র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে পৃথক ৩ টি অভিযানে প্রায় ৯৪ লক্ষ ঘুষের টাকা, ১৫ লক্ষ টাকার ৪ টি চেক ও কিছু মূল্যবান নথি উদ্ধার করা হয়। এসময় সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ওয়াসিম খানকে হাতেনাতে আটক করা হয়। বাসা থেকে ঘুষের টাকা উদ্ধারের পর সার্ভেয়ার মোঃ ফেরদৌস খান ও সার্ভেয়ার মোঃ ফরিদ উদ্দিন এখনো পর্যন্ত পলাতক রয়েছে।