আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবার করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর থেকেই তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ ও অঞ্চলে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন দেশে ৩ হাজার ২৮৫ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৯৫ হাজার ৪৮১ জন। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৫৩ হাজার ৬৮৮ জন।

চীনে নতুন করে আরও ১৩৯ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। চীনের মূল ভূখণ্ডে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৪৩০ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১২ জনের। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে।

এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস। সময়ে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২ হাজার ৯২২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রাণ হারিয়েছে ৯২ জন।

এদিকে, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ইরানের একটি হাসপাতালের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে হাসপাতালের এখানে সেখানে লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতালের মেঝে এবং ট্রলিতে ব্যাগভর্তি লাশ আর লাশ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ধারণ করা।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বেশ বিপাকে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কমপক্ষে ২৩ জন এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে ৫৪ হাজার বন্দিকে কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছে।

এদিকে, হাসপাতালে লাশের ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েেছে যে, ইরান হয়তো আসল চিত্র লুকাচ্ছে। দেশটি হয়তো আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি করছে।

হাসপাতালের কোন কর্মীই হয়তো ওই ভিডিওটি ধারণ করেছেন। ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশের কোম শহরের একটি হাসপাতালের ভিডিও এটি। ইরানে ওই এলাকাতেই প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। তবে ওই ভিডিওতে হাসপাতালের নাম জানানো হয়নি।

অনলাইনে ইতোমধ্যেই প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ ওই ভিডিওটি দেখেছেন। সেখানে দেখা গেছে এক একটি ব্যাগে করে মরদেহ মেঝেতে সারি করে রাখা হয়েছে।

কোন এক ব্যক্তি হাসপাতালের বিভিন্ন রুমে গিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি দেখাচ্ছেন। কিছু লাশ কালো রংয়ের ব্যাগে মুড়িয়ে মেঝেতে রাখা হয়েছে। এসব ব্যাগের গায়ে সাদা কাগজ লাগানো রয়েছে। আবার কিছু লাশ সাদা ব্যাগে করে ট্রলিতে রাখা হয়েছে। এরা সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যমে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লেও এ নিয়ে প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো ধরনের মন্তব্য করা হয়নি। তবে এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে, এই মরদেহগুলো কেন দাফন করা হয়নি। ইসলামের রীতি অনুযায়ী, মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব লাশ দাফন করতে হয়। ইসলামি দেশ হিসেবে ইরানও এই রীতির ব্যতিক্রম করার কথা নয়।

এদিকে, এক সাংবাদিক দাবি করেছেন যে, জায়গা না থাকার কারণেই এই লাশগুলো এখনও দাফন করা সম্ভব হয়নি। ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এই ভিডিওর বিষয়টি উঠে এলেও তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ইরান করোনাভাইরাসের বিষয়ে তথ্য লুকাচ্ছে এমন অভিযোগের মধ্যেই এই ভিডিওটি সামনে এলো। ফলে তা ইরানকে নতুন করে চাপে ফেলতে পারে।

এদিকে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে শুক্রবারের জুমার নামাজ ও অন্যান্য জমসমাগম বাতিল করা হয়েছে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবং এই ভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বুধবার ইরানের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, সেখানে নতুন করে ৫৮৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং নতুন করে মারা গেছে আরও ১৫ জন। এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি রাজধানী তেহরান ও কোম শহরে। তেহরানে নতুন করে ২৫৩ জন এবং কোমে নতুন করে ১০১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

শিয়াদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র তেহরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কোম শহর। সেখান থেকেই মূলত এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই শহরেই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

এদিকে, ইরানের বিভিন্ন শহরে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সাংস্কৃতিক এবং খেলাধুলার বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। দেশটিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ রাখা হবে।

এদিকে, নাগরিকদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। অপরদিকে, ন্যাশনাল কাউন্সিল অব রেসিসটেন্স অব ইরান (এনসিআরআই) অভিযোগ করেছে যে, সেখানে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬৫০। যা ইরানি কর্তৃপক্ষের ঘোষণা দেয়া সংখ্যার কয়েক গুণ।