রফিকুল কবির, প্যারিস থেকে।

বিশ্বটা বেশ সংকটে আজ
ভাবছি বসে কি উপায়,
যে দিকেতে চাই
আমি অর্থ কোনো খুঁজে নাহি পাই!!!

গবেষকরা বলছেন মানবজাতি বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরী হয়েছে! আমরা নিজেদের লালসা সিদ্ধির স্বার্থে নিজেরাই এ শঙ্কা তৈরী করেছি। কী সেই লালসা? আমার মনে হয় অর্থ, ক্ষমতা এবং শ্রেষ্টত্বের লোভ, যা আমাদের ধ্বংস করছে। পৃথিবীর স্থলভাগ রণক্ষেত্র এখন, সাগরের তলদেশে যুদ্ধ, আকাশে-মহাকাশে যুদ্ধ, যুদ্ধ ছড়িয়ে গেছে গ্রহে গ্রহে এখন, দখলের যুদ্ধ! এই মানুষের পৃথিবী কেন মানবিক নয়! আমরা ভুলে গেছি – ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।’
যেভাবে এ শঙ্কা তৈরী হলো —

১/ Climate change (জলবায়ু পরিবর্তন):
জীবাশ্ম জ্বালানীর অতিরিক্ত ব্যবহার , বন নিধন ,জমিতে অতিরিক্ত সার ব্যবহার, খনন প্রভৃতি করার ফলে পৃথিবী অস্বাভাবিক ভাবে উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে , বরফ গলছে, অচেনা সুপ্ত জীবাণু জেগে উঠছে, সাগরে পানির উচ্চতা বাড়ছে। এতে করে জীব বৈচিত্রের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে মানবজাতি আজ হুমকির মুখে। প্রকৃতির প্রতিশোধ বড় নির্মম! দেশে দেশে ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ইত্যাদি লেগেই আছে, ঐযে সুনামি হলো পালাবার সময়ওতো পেলেনা, এইতো কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়াতে দাবানল ছড়িয়ে পড়লো, তাতে ১ বিলিয়ন জীবজন্তু এবং ৩৩ জন মানুষ পুড়ে মরেছে! কল্পনা করা যায়!! এরপরও আমাদের ঘুম ভাঙে না!!!

২/ Bioterrorism(জীবাণু সন্ত্রাস):
(Abuse of Biological weapon or germ weapon)

নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য এমন হীন কাজ নেই যা ব্যক্তি বা রাষ্ট্র করছেনা! বহু আগে এ খবর এসেছিলো যে আমেরিকা একবার মশার মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ডেঙ্গুর নানা প্রকারের মধ্যে একটি যে আমেরিকার এ হীন চেষ্টার মাধ্যমে ছড়ায়নি কে নিশ্চিত করে বলবে ! চীনও তার বাইরে নয়, হয়তো করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে গবেষণাগারে অসাবধানতাবশত বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে অথবা হতে পারে সারা বিশ্বে চীনের অপ্রতিরুদ্ধ প্রভাব থামানোর জন্য অন্য কোনো রাষ্ট্র এ আক্রমণ করেছে। আবার হয়তো এই জীবাণু অস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য চীন নিজেই এটা ছড়িয়েছে! কোন সম্ভাবনাকে আপনি সহজে অস্বীকার করবেন? ভেবে পাইনা কত দেশ কত কত পারমাণবিক বোম্ব তৈরী করে রেখেছে তার কোনো হিসেবে নেই অথচ তার মাত্র কয়েকটিই পৃথিবী ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট! যত যায় বলি এই যুগে মানবজাতি যতটা মানবিক ততটাই অমানবিক!

৩/ Unsolicited Cultural Environment (অযাচিত সাংস্কৃতিক পরিবেশ):
সাংস্কৃতিক পরিবেশ হলো একটি বিশ্বাস, অনুশীলন, রীতিনীতি এবং আচরণ যা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাধারণ বলে মনে হয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশ আদর্শ এবং ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে। সুতরাং একেক জনগৌষ্ঠীর একেক সংস্কৃতি হবে সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু এটি যখন নিয়ন্ত্রণহীন হয় তখন অযাচিত সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরী হয় যেটা কল্যাণকর নয়-কাম্যও নয়। বিভিন্ন ধর্মীয় গৌষ্ঠীগুলো পৃথিবীজুড়ে ক্ষনে ক্ষনে যে নানা প্রাণী হত্যাযজ্ঞ চালায় তাতে কে জানে কখন আরো ভয়াবহ কোনো ভাইরাসের (‘Disease X’) আক্রমণে মানবজাতি দিশেহারা হয়ে পড়ে! সতরাং সাংস্কৃতিক সতর্কতা জরুরি, এখনই।
করোনা ভাইরাস বা কোবিড-১৯ থামছে না মোটেই! সার্স, মার্স, ইবোলা, জিকা ইত্যাদি ভাইরাসের ধারাবাহিকতায় এটি এসেছে। তবে এটি সব থেকে ভয়াবহ , ধ্বংসাত্মক। এদের প্রত্যেকটিই বন্যপ্রাণী বাহিত রুগ। পোকামাকড়, জীবজন্তু সহ প্রায় ২০০ রকম প্রাণী চীনারা খেয়ে থাকে, বলা হচ্ছে এখানেই বিপত্তি ঘটেছে, চীনের হুবেই প্রদেশে কোরোনার সংক্রমণের এটাই কারণ। আবার অনেকে বলছে এই খাদ্যাভাস বহু পুরোনো, আগে কেন হলো না? কিন্তু আমি যদি জিজ্ঞেস করি আগে যে সামঞ্জস্যপুর্ণ জীববৈচিত্র ছিল সেটা কি এখন আছে! নিশ্চয় নেই। পরিবেশের বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রাণিজগতের উপর, সতরাং এসব খাওয়ার ফলে রুগ জীবাণু ছড়াবে এটাই স্বাভাবিক। এই অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস মানব সমাজের জন্য কল্যাণকর নয়।
২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO)এক সভায় গবেষণা সংস্থা R&D Blueprint এর বিশেষজ্ঞ দল প্রথম ‘Disease X’ নাম দিয়ে পরবর্তী মহামারি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল এবং এটিকে R&D Blueprint লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। বলা হয়েছিল, পরবর্তী মহামারিটি কী থেকে উদ্ভূত হবে, তা জানা নেই। কিন্তু এর আশঙ্কা প্রবল। না, মানুষকে আতংকিত করে জীবন দুর্বিষহ করে তোলার জন্য নয় বরং সকল গবেষণা সংস্থাকে ভবিষ্যতের রোগ নির্ণয় ও তার কার্যকরী ঔষুধ/ভ্যাকসিন তৈরী করতে সতর্ক করার জন্য ‘Disease X’ এর কথা বলেছিলেন। R&D Blueprint এর শংকা সত্যি হলো! অজানা সেই জীবাণু রুগই আজ কোবিড-১৯ ! যা একজন থেকে অন্য জনের কাছে হাঁচি-কাশি ও স্পর্শের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ৬৩টি দেশে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার , মৃতের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। আক্রান্ত হলে জ্বর,কাশি,মাংস পেশিতে ব্যথা, শারীরিকি দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যায়। এ লক্ষণ দেখা দিলেই নির্দেশিত স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করুন।

মাকে ফোন করলাম, মা সালামের উত্তর নিয়েই বললো ‘চলে আয়, ওখানে নাকি জীবাণু অসুখ এসেছে’! আমি বললাম দুআ করেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। কোবিড-১৯ বা করোনাভাইরাস এসব নাম মা জানে না, শুধু জানে এই জীবাণু অসুখে দেশে দেশে মানুষ মরছে এবং এই জীবাণু আক্রমণের শিকার হলেই আর সহজে আমি দেশে যেতে পারবোনা। তাই তিনি খুব শঙ্কিত। বাবা নেই আমার প্রায় দেড় বছর, থাকলে তিনিও খুব দুশ্চিন্তা করতেন। আমি ভাবছি দেশের কথা, কেউ সংক্রমিত হলোনাতো! সরকারের কাছে অনুরোধ চায়নার মতো তথ্য গুপন যেন না করে। ঘন বসতিপূর্ণ আমাদের এই দেশে একবার করোনা সংক্রমিত হলে একটি বড়ো দুর্যোগ হবে, তাই এখনই এ রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেয়া জরুরি। খবরে শুনি- বলে চিন্তার কোনো কারণ নেই কিন্তু কেন জানি এ আশ্বাস আমাকে আরো বেশি উদ্ভিগ্ন করছে! প্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার ভাই ও বোনরা এখানে আপনাদের গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব রয়েছে – সবাইকে সচেতন করে তুলুন।
আসুন, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একটি মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি।