আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন শীর্ষ উপদেষ্টা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে চিকিৎসাধীন অব্স্থায় মারা গেছেন। সোমবার রাষ্ট্রীয় বেতারের এক প্রতিবেদনে খামেনির শীর্ষ ওই উপদেষ্টার প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

সরকারি বেতারের খবরে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা পরিষদের শীর্ষ সদস্য মোহাম্মদ মীর মোহাম্মদী (৭০) তেহরানের একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সোমবার তিনি মারা গেছেন।

দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে ইরানে। দেশটির করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রধান ইরাজ হারিরসি, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমেহ এবতেকার-সহ আরও পাঁচজন এমপি সংক্রমিত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার দেশটির সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী রমজানি দস্তক মারা যান।

মার্কিন সংবাদসংস্থা এপি বলছে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৯৭৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ৫৪ জনের; যা চীনের বাইরে সর্বোচ্চ।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এক হাজার ১৫০ জন; যাদের অধিকাংশের সংক্রমিত হওয়ার পেছনে ইরানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ইরানে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

দেশটিতে আক্রান্তদের প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশই মারা গেছেন; যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মৃত্যুহারের তুলনায় অনেক বেশি। তবে অনেকেই ইরানে করোনা সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সরকারিভাবে ইরান করোনাভাইরাসে আক্রান্তের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে; বাস্তবে সেই সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে।

নতুন করোনাভাইরাসের লাগাম টানার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়ে ইরান সরকার। সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনলাইনে এক ব্রিফিং করে করোনাভাইরাসের হালনাগদ তথ্য প্রকাশ করেছে। ব্রিফিংয়ের শুরুতেই করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সহায়তার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মোসাভি।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয় কর্তৃপক্ষ। চীনে ২ হাজার ৯১২ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়া এই ভাইরাস এখন বিশ্বের অর্ধ-শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের বাইরে সাত মহাদেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে প্রাণ গেছে ১৩৬ জনের। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৪ জনই মারা গেছেন ইরানে। এছাড়া ইতালিতে আক্রান্ত এক হাজার ৬৯৪ এবং মারা গেছেন ৩৪ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমিত ৪ হাজার ৩৩৫ এবং প্রাণহানি ঘটেছে ২৬ জনের।