সবজিতে অস্বস্তি

প্রকাশ: ২ মার্চ, ২০২০ ০১:০৬ , আপডেট: ২ মার্চ, ২০২০ ০১:১৫

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


শাহীন মাহমুদ রাসেল
শীতকাল শেষ হয়ে গরম আসতে না আসতেই বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে যে সবজির দাম ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছিল, তাই হঠাৎ করেই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চাল, ডিম, তেল ও মুরগির মাংসের দাম। এ অবস্থায় ভোগ্যপণ্য জোটাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের।

রবিবার (১ মার্চ) কক্সবাজার জেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরম আসতে না আসতেই করলা, ঝিঙ্গা, উস্তা, ফুলকপি, সিমসহ অন্যান্য সবজির দাম ও বেড়েছে। শীতের অন্যতম প্রধান সবজি ফুলকপি বেশ কিছুদিন ধরেই প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছিল। সেই ফুলকপির দাম বৃহস্পতিবার বেড়ে হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এবং শীতের শেষ মূহুর্তে টমেটোর দাম ঠেকেছে একেবারে তলানিতে, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে, ২০-২৫ টাকা দরে।

উস্তা, করলা বিক্রি সপ্তাহ ব্যবধানে ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ টাকা দামে বিক্রি হওয়া পাতাকপির দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দামে বিক্রি হওয়া শিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর বিচিসহ শিমের দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমনিতেই নিত্যপণ্যের দাম বছরজুড়ে বাড়তি। বিশ্ববাজারে চিনি, ডাল ও ভোজ্যতেলের সংকট চলছে। এজন্য আদা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন মসলার দামে প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগামিতায় শেষ হয় গত বছর। ওই বছর যেসব পণ্যের দাম বেড়েছিল সেগুলোর দাম আর কমেনি। উল্টো নতুন বছরের শুরুতেই চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, ভোজ্যতেল, চিনি, মরিচসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম ফের বেড়েছে। কেবল জানুয়ারিতেই চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৬-৮ টাকা, মসুর ডাল ২৫ টাকা ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি ৮-১০ টাকা। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস, সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না। গত সপ্তাহের বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয় চালের দামবৃদ্ধি রোধে মনিটরিং কমিটি করার পরেই আরেকদফা পণ্যটির দাম বেড়েছে।

দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে শালগম, মুলা, টমেটো, বেগুনও। ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শালগমের দাম বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। বেগুনের দাম এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি।

মুলার দাম ১৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। ঠান্ডা তরকারি হিসেবে পরিচিত লাউ’র দামও বেশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা পিস বিক্রি হওয়া লাউ’র দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

রুমালিয়ার ছড়ার বাসিন্দা বেসরকারি চাকুরে শেফায়েত কবির বলেন, শীত ফুরিয়ে গেল। কিন্তু সবজির দাম কমল না। আগের বছরগুলোতে অন্তত শীতকালে একটু কম দামে সবজি পাওয়া যেত। এখন গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত একই। মৌসুম পাল্টালেও দাম কমে না। সকালে বাসা থেকে বাজার করতে বের হওয়ার সময় হিসাব করতে করতে বের হতে হয়। শুধু যে শাক-সবজির দাম নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তা না। রান্না করার প্রতি উপকরণই এখন আমাদের নাগালের বাইরে। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল কিনতে হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকায়। রান্নার সব উপকরণের দামই চড়া। মাস ছয়েক আগে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, এখনো তা কমেনি।

সবজির দাম বাড়ার বিষয়ে বাড় বাজারের ব্যবসায়ী আব্দু শুক্কুর বলেন, শীতের সময় সব সবজির দামই কম থাকে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সবজির দাম বেশ কমেছে। যদিও এখন বাজারে কোনো সবজির অভাব নেই। আড়তে গেলেই পছন্দমত সবজি পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দাম একটু বাড়তি। তাই আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে পেঁয়াজের আকাশ ছোঁয়া দামে কিছুটা ছেদ পড়লেও এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহের মতোই প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। নতুন দেশি পেঁয়াজা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আর পুরাতন দেশি পেঁয়াজের দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।