সিবিএন ডেস্ক:

বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কতা জারি করেছে। ভাইরাসটি সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভয়াবহ মাত্রার জন্য এ সতর্কতা নয় বরং প্রতিনিয়ত বেশি দেশ এতে সংক্রমিত হচ্ছে বলেই সতর্কতা। আমাদের চেনাজানা প্রচলিত ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) ভাইরাসের তুলনায় শতকরা হিসেবে যদি করোনাভাইরাসের মারণ ক্ষমতা কম থাকে, তাহলে সেটা নিয়ে বড় ধরনের আতঙ্কে ভোগার যুক্তি নেহায়েত কম।

করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বিজ্ঞান সমর্থিত ৬টি কারণ এখানে দেয়া হলো-

করোনাভাইরাস সাধারণত হালকা রোগের কারণ

এর সংক্রমণে হালকা জ্বর-সর্দি হয়। শেষের দিকে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সাধারণ নিয়মে পাবলিক হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ থেকে এটা নির্ণয় করা হয়।

ভাইরাসটি এই প্রথম কোনো অজ্ঞাত হুমকি নয়

গত দুই দশকে স্বাস্থ্যবিষয়ক অভিজ্ঞরা আরও অজানা ভাইরাসের মুখোমুখি হন। ২০০২ সালে সার্চ ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল এই চিন থেকেই। সেটাও এই করোনাভাইরাসেরই একটি টাইপ ছিল। সেই ভাইরাসে প্রায় ৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। এবং মৃতের সংখ্যা ছিল শতকরা ১০ ভাগ। যার অনুপাত বর্তমান করোনাভাইরাস থেকে অনেক বেশি। সেই সার্চ ভাইরাস বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং সেটার কোনো কার্যকলাপ এখন আর নেই।

২০১২ সালে সৌদি আরবে আরেকটি ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়েছিল ঠান্ডা-সর্দির সঙ্গে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখে। সেটিও করোনাভাইরাসের মতো জুনোটিক (এমইআরএস-কোভ)। সেই ভাইরাসের প্রাণঘাতির শতকরা হার ছিল ৩৫ ভাগ। মানব প্রজাতি সেই হুমকিও মোকাবিলা করেছে।

৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই এটি ঠান্ডা-সর্দির উপসর্গ মাত্র

সংক্রমণের অল্প সময়ের মধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রকৃতি ও ধরন বের করা হয়েছে এবং কোভিড-১৯ এর জিনোমিক ডায়াগনস্টিক পদ্ধতির ডিজাইন বিজ্ঞানীরা রপ্ত করেছেন। এপিডেমিওলজি (পশুপাখির রোগতত্ত্ব) এবং ক্লিনিকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ ভাইরাস ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই ঠান্ডা লাগার মতো হালকা অসুস্থতা তৈরি করে।

কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে

এ ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের ধরন নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, এ ভাইরাস কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়াই কারও শরীরে অবস্থান করতে পারে এবং সুস্থ মানুষের দেহের মধ্যে স্থানান্তর হতে পারে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর হার ২ শতাংশ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গড়ে মৃত্যুর হার ২ শতাংশ। আশি ঊর্ধ্ব বয়সের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ১৪.৮ শতাংশ, ৭০ থেকে ৭৯ বছরের ক্ষেত্রে ৮ শতাংশ, ৬০ থেকে ৬৯ বয়সের ক্ষেত্রে ৩.৬ শতাংশ, ৫০ থেকে ৫৯ বয়সের ক্ষেত্রে ১.৩ শতাংশ, ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সের ক্ষেত্রে ০.৪ শতাংশ, ৩০ থেকে ৩৯ বছর পর্যন্ত ০.২ শতাংশ, ২০ থেকে ২৯ বছর পর্যন্ত ০.২ শতাংশ, ১০ থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত ০.২ শতাংশ পর্যন্ত হতে দেখা গেছে। ১০ বছরের কম শিশুদের কেউ এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেনি। পুরুষের মৃত্যুহার নারীর থেকে বেশি। পুরুষের ক্ষেত্রে ২.৮ শতাংশ ও নারীর ক্ষেত্রে ১.৭ শতাংশ মৃত্যুর হার।

উপরের বর্ণিত তথ্য থেকে সহজেই অনুমেয়, বয়স্ক মানুষ বেশি করোনায় মারা যাচ্ছে। সাধারণভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাদের কম থাকার কারণে মারা যেতে পারে।

প্রতি বছর ফ্লু ভাইরাসের চেয়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার কম

প্রতি বছর ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যে পরিমাণ মানুষ মারা যায়, করোনাভাইরাসে সে তুলনায় শতকরা হারে মৃত্যুর পরিমাণ অনেক কম। তবে সেগুলোতে মিডিয়ার প্রভাব তৈরি হয় না বলে আমরা বুঝতে পারি না।

উদাহরণস্বরূপ, স্পেনে গত মৌসুমের তথ্য অনুসারে ইনফ্লুয়েঞ্জাজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩০০। এ ভাইরাসটি সংক্রমণের ব্যাপ্তি সময় ধরা হয় ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। অর্থাৎ গত মৌসুমে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন মানুষ মারা গেছে। তবে এগুলো সম্মিলিতভাবে বিশ্ব গণমাধ্যমে না আসার কারণে এবং নিয়মিত ঘটার কারণে মানুষ সেটা এভাবে উপলব্ধি করে না এবং আতঙ্ক ছড়ায় না।