সিবিএন ডেস্ক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ নেয়ার সম্মতি দেননি বলে জানিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।

বিএসএমএমইউ থেকে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো খালদের চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জামিন শুনানির শুরুতেই আদালত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদনটি পড়ে শোনানো হয়। এতে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়া অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের সম্মতি দেননি এবং অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য যে ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার দরকার সে ধরনের টেস্টের অনুমতিও দেয়া হয়নি।

ওই মেডিক্যাল প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে খালেদা জিয়ার ‘ব্যাকপেইনের’ কথা উল্লেখ রয়েছে।

এক পর্যায়ে আদালত স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন পড়ার পর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন বিষয়ে আদেশ দিতে যান।

তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতের বলেন, ‘মাই লর্ড আমরা আরেকটি সাপ্লিমেন্টারি আবেদন করব সেটি শুনে আপনি রোববার আদেশ দিন।’

তখন আদালত বলেন, ‘না রোববার আদেশ দেয়ার তো কিছু নেই। চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়েছিলাম বিএসএমএমইউ সে প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা রিপোর্টি দেখলাম এখন তো আর আদেশ দিতে সমস্যা নেই।’

সে সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, ‘মাই লর্ড রিপোর্টটা তো আমরা হাতে পাইনি। তাই আমাদের রিপোর্টটি দেয়া হোক এবং প্রয়োজন আজ দুপুর দুইটায় আদেশ দিন। আমরা আরেকটি সাপ্লিমেন্টারি আবেদন তখন নিয়ে আসবো।’

এরপর আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য দুপুর দুইটার সময় নির্ধারণ করেন।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এবং অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিওন।

এছাড়াও শুনানির সময় আদালতে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

বুধবার বিকেলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি বিএসএমএমইউ থেকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আসে। বৃহস্পতিবার সকালে রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে বেঞ্চে পৌঁছে দেন।

অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা চেয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়ে আদেশ দেন।

সেদিন আদালত তার আদেশে, খালেদা জিয়া ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ নেয়ার সম্মতি দিয়েছেন কি না, তিনি সম্মতি দিয়ে থাকলে তার সে ধরনের চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি না, আর সেই চিকিৎসা শুরু হয়ে থাকলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত সর্বশেষ অবস্থা কী, তার প্রতিবেদন বিএসএমএমইউ এর উপাচার্যকে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫ টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। এবং এই বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে এই মামলায় আবার জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। সে আবেদনে খালেদা জিয়ার ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ প্রয়োজন উল্লেখ করে তাকে দ্রুত বিদেশে তথা যুক্তরাজ্যের মতো দেশে চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এই মামলায় ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে এই মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। মামলার বাকি সব আসামিকেও একই সাজা দেয়া হয় এবং ট্রাস্টের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা করেন আদালত।

খালেদা জিয়া ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন: বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক এপিএস জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম।

এই মামলায় আগেও একবার জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

পরে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া। গত ১২ ডিসেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালত দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপার্সনের জামিন নামঞ্জুর করেন। তবে খালদা জিয়া চাইলে তার সম্মতিতে ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ দিতে বলা হয়।

সেই জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আপিল বিভাগে ২১০ মিনিটের ‘নজিরবিহীন’ হট্টগোল হয়। ওই হট্টগোলের পরিপ্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতির আদালত কক্ষে পরবর্তীতে ৮টি সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা বসানো হয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার রায় ঘোষণার পর বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ-এ রয়েছেন।